পীরেরবাজার নৌকা ঘাটে বিছনাকান্দির পর্যটকরা সিন্ডিকেটদের নিকট জিম্মি

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৮

পীরেরবাজার নৌকা ঘাটে বিছনাকান্দির পর্যটকরা সিন্ডিকেটদের নিকট জিম্মি

ক্রাইম ডেস্ক ::  গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশ-বিদেশে প্রকৃতিপ্রেমীদের নিকট পরিচিতি লাভ করেছে সিলেটের বিছনাকান্দি। বিশেষ করে ঈদ, পূঁজা, বড় দিনের মত ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি সরকারি ছুটিতে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমীরা বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন। এবারের ঈদ-উল আযহায় গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। ঈদ-উল আযহার ২য় দিনে পর্যটকবাহী নানা ধরনের গাড়ীর পার্কিং প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়।
সিলেট থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার বঙ্গবীর পর্যন্ত সড়কটি মোটামুটি ভাল থাকায় পর্যটকগণ আনন্দে মেতেই বঙ্গবীর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছান। বঙ্গবীর থেকে পীরেরবাজার পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রাজধানী ঢাকা ও সিলেট থেকে সিংহভাগ পর্যটকই উন্নতমানের গাড়ী নিয়ে আসেন। রাস্তায় হাটু পরিমাণ গভীর গর্ত ও খনাখন্দ থাকায় শাতধিক পর্যটক বঙ্গবীর এলাকায় গাড়ী রেখে প্রায় ৪ কিলোমিটার জায়গা পায়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। আবার অনেক গাড়ীচালক গাড়ীর ক্ষতি করেও পীরের বাজার পর্যন্ত গাড়ী নিয়ে যান। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা পীরেরবাজার পর্যন্ত পৌছেই যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

পীরেরবাজার নৌকা ঘাটে প্রবেশ করেই ওই সব পর্যটকরা সিন্ডিকেটদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েন। সরকারি-বেসরকারি চাকরীজীবি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নৌকা ঘাটে পৌছে ঘাট ইজারাধার কর্তৃপক্ষ ও মাঝিদের নিকট প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখান থেকে উদ্ধার পাননি যাদের কল্যাণে দেশ বিদেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক ও নতুন নতুন নৌকা ঘাট তৈরির প্রধান ভূমিকা পালনকারী গণমাধ্যমকর্মীরাও। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পীরেরবাজার-বিছনাকান্দি এবং বিছনাকান্দি-পীরের বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে (যাওয়া আসা)  প্রতিটি পর্যটকবাহী নৌকা ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫৫০ টাকা নির্ধারন করা হলেও তা আমলে নিচ্ছেন না পীরেরবাজার নৌকা ঘাটের ইজারাদার ও নৌকার মাঝিগণ।

রোববার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র সিলেটের ব্যুরো প্রধান বিভিন্ন বেসরকারী টিভি চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বিছনাকান্দি পৌঁছান। এ সময় তিনি ও তার দল এই বিড়ম্বনায় শিকার হন।

কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী জানান, পীরেরবাজার নৌকা ঘাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৫শত টাকা নেন। নৌকার মাঝিরা প্রতি নৌকা থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা করে তাদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ নেন। এ সময় গণমাধ্য কর্মীরা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ১ হাজার ৫৫০ টাকা দেওয়ার চেষ্ঠা করলে ইজারাদার কর্তৃপক্ষের লোক স্থানীয় রুস্তমপুর ইউনিয়নের পাতনি গ্রামের মৃত তফজ্জল আলী ছেলে রজব আলী ওই সব গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হয়ে আক্রমনের জন্য এগিয়ে আসে। এতে গণমাধ্যম র্মীরা সম্মান রক্ষার্থে নিরবে ২ হাজার ৫ শত টাকা করে প্রতিটি নৌকার ভাড়া পরিশোধ করেন। এছাড়া পীরের বাজার পয়েন্টে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ কয়েকজন লোক নিয়োগ করে প্রায় ৬ ফুট লম্বা লাঠি দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। যাতে করে পর্যটকবাহী গাড়ীগুলি পীরেরবাজার ছাড়া অন্য কোন নৌকা ঘাটে না যেতে পারে। নিয়োগকৃত ওই লাঠিয়াল বাহিনী দেশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরণ করছেন প্রতিনিয়ত। পর্যটকেরা নিরবে এসব অপমান ও প্রতারণা সহ্য করছেন।

এ ব্যাপারে পীরের বাজার ঘাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের অন্যতম মো. সিরাজ উদ্দিন প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ১ হাজার ৫শত টাকা ভাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, পীরের ঘাটে প্রতি নৌকা ৩ হাজার টাকা করে প্রায় ১০০টি নৌকা ভর্তি রয়েছে। এ সব নৌকাগুলি প্রতিদিন ইজারাদারকে ৩ শত টাকা প্রদান করে। এছাড়া এখানে ভর্তি নেই রুস্তমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২ শতাধিক নৌকা প্রতিদিন ৫শত টাকা করে ইজারাদার কর্তৃপক্ষকে দিয়ে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকার মাঝি জানান, ঘাটে ভর্তিকৃত ইজারাদার কর্তৃপক্ষের নৌকাগুলি প্রতিদিন ৪/৫ ট্রিপ দিয়ে থাকেন। অপর দিকে ভর্তি নয় এমন নৌকাগুলি প্রতিদিন ১ট্রিপ দিয়ে থাকে।

ভূক্তভোগী পর্যটক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান, পীরেরবাজার নৌকা ঘাটে ইজারাদার কর্তৃপক্ষের পরিচয় পত্র নেই, নেই নৌকার মাঝিরও। যার কারণে যার সাথেই কথা বলি তিনিই উত্তেজনামূলক ও খারাপ আচরণ করেছেন আমাদের সাথে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পর্যটকবাহী নৌকার ভাড়া আসাযাওয়া ১ হাজার ৫শত ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইজারাদার কর্তৃপক্ষের যে সব লোক ও নৌকার মাঝি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক ভাড়া নিয়েছেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..