সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
স্টাফ রিপোর্টারঃ মেয়েটি (১৪) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার মা বেঁচে নেই। বাবা দিনমজুর। সম্প্রতি এক আদম ব্যবসায়ী ওই মেয়েটিকে গৃহপরিচারিকার কাজে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার বাবাকে প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে মেয়েটির বাবা রাজিও হয়ে যান। পরে আদম ব্যবসায়ী মেয়েটিকে পাসপোর্ট করাতে ঢাকায় নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখেন। সেখানে ওই ব্যবসায়ীসহ অজ্ঞাতনামা আরেক ব্যক্তি মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। মেয়েটির বাড়ি কুলাউড়া উপজেলায়। এ ব্যাপারে ১৪ নভেম্বর সোমবার রাতে কুলাউড়া থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আদম ব্যবসায়ী আকবর আলী (৫০) ও তাঁর স্ত্রী রাবিয়া বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ হাজীপুর গ্রামে। নির্যাতিতা মেয়েটিকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার জেলা সদরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী। চার-পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন রোগে ভুগে তার মা মারা যান। আকবর দীর্ঘদিন ধরে আদম ব্যবসা করছেন। ৩ নভেম্বর তিনি মেয়েটিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে আকবর ও তাঁর সহযোগী এক ব্যক্তি তাকে (মেয়ে) একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এ সময় সম্ভ্রম রক্ষায় পায়ে ধরে কাকুতি মিনতি করলেও তাঁরা মেয়েটিকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান। এ অবস্থায় মেয়েটি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ নভেম্বর আকবর তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী হাসিমপুর গ্রামে এক আত্মীয় বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। এদিকে স্বজনেরা মেয়ের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে একাধিকবার আকবরের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তিনি ফোন ধরেননি। আকবরের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এ ব্যাপারে কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। এতে মেয়েটির বাবার সন্দেহ হয়। তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ নভেম্বর বিকেলে পুলিশ আকবরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁর স্ত্রী রাবিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাবিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দিনই মেয়েটিকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পর দিন ১১ নভেম্বর মেয়েটিকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওসিসিতে নিয়ে যান স্বজনেরা। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে মৌলভীবাজারের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার রাত আটটার দিকে মেয়েটির বাবা বাবা (৪৫) বাদী হয়ে আকবর, আকবরের স্ত্রী রাবিয়া ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে দক্ষিণ হাজীপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, মৌলভীবাজার হাসপাতালে স্কুলছাত্রীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তাতে চিকিৎসকেরা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আকবর ও তাঁর স্ত্রীকে মৌলভীবাজার আদালতে পাঠানো হয়। আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাঁর স্ত্রীকে আদালতের নির্দেশে মৌলভীবাজারের হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জড়িত অপর ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মেয়েটিকে বিদেশে পাচারের চেষ্টা চলছিল বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd