সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:১৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
সুনির্মল সেন :: সিলেট নগরীতে অবস্থানরত ইলেকট্রোনিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত অধিকাংশ আত্ম গরিমায় ভরা কথিত সাংবাদিকরা সর্বত্র জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের তোষামোদিতে ব্যস্ত থাকেন। এইসব সাংবাদিকরা এতোই বেপরোয়া, তাদের সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা অন্যান্য পেশাদার সাংবাদিকরাও তাদের কুঠ-কৌশলের কাছে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। এর পেছনের ইতিহাস অনেক অনেক।
এদের কারণে প্রশাসনের আমলারা কোনো প্রকার সুযোগ পেলেই, কৌশলে সাংবাদিকদের নাজেহাল করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যান। এই ধরণের বহু ঘটনা ইতোপূর্বে আত্ম গরিমায় ভরা এসব সাংবাদিকদের কারণে সিলেটে ঘটেছে।
২০০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে পোষাকধারীদের নির্যাতন ও আইনী পদক্ষেপের বেড়াজাল থেকে কিছুটা রেহাই পাবার পর মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হতে না হতেই অত্যান্ত সু-কৌশলী পরিকল্পনায় একের পর এক সিলেটের সাংবাদিকদের ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে প্রশাসনিকভাবে নাজেহাল করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসময় সাংবাদিকরা নিজেদের গুটি কয়েকজন ক্ষতদুষ্ট দুর্বলের কারণে না দিতে পেরেছেন শক্তিশালী জবাব।
২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে করা হয়েছিলো সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভার। এ সভায় যদিও প্রচার করা হয়েছিলো, এই মতবিনিময়ের উদ্দেশ্য ছিলো, “শিক্ষার উন্নয়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগীতা কামনা” করা। কিন্তু এর পরের দিন ৩১ মে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ মতবিনিময় সংক্রান্ত স্থানীয় ‘দৈনিক উত্তরপূর্ব’ এর প্রতিবেদনের একটি অংশ পড়ে অনুমান ভিত্তিক মনে হয়েছিলো সু-কৌশলে সিলেটের সাংবাদিকদের নাজেহাল করা হয়েছে প্রশাসনকে দিয়ে।
প্রতিবেদনের একটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছিলো, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৎকালীন সিলেটের জেলা প্রশাসক জনাব সাজ্জাদুল হাসান বলেছিলেন, “প্রশাসনে যেমন দুর্নীতিবাজ বা দুই নাম্বারী রয়েছে, তেমনি সাংবাদিকদের সাথে দুর্নীতিবাজ ও দুই নাম্বারী আছে।”
এ কথাটি শোনার পর মতবিনিময় সভায় উপস্থিত- সিলেট নগড়রীতে অবস্থানরত সিলেটের পূণ্যভূমির তরিৎকর্মা, আত্ম গরিমায় ভরা কথিত দালাল সাংবাদিকরা হাসি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বিষয়টিকে। অবশ্য যারা নিজেদেরকে বড় সাংবাদিক নেতা মনে করতেন, তাদের দু’একজনের চেহারাটা তথন জেলা প্রশাসকের কথাটি শোনার পর বিমর্ষ হয়ে গিয়েছিলো।
এই সময় একজন জেলা প্রশাসকের কথার পর জবাব দেয়ার মতো সৎ সাহস, ক্ষমতা ও তাক্কত যাদের ছিলো না, তারা আবার নিজেদেরকে ভাবেন অনেক বড়, অনেক কিছু! এরাই আবার সিলেটে সাংবাদিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেন, এখনো করে যাচ্ছেন। এইসব তরিৎকর্মা বড় ভাই মার্কা সাংবাদিকদের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে শুধুই দুর্গন্ধ বের হবে। অনেক ফকিরের ছেলে এই সাংবাদিকতার মতো মহৎ পেশাকে কূ-পথে পরিচালনা করে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। বাড়ি-গাড়িও তাদের হয়েছে।
সৎ সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী সিলেট প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি বোরহান উদ্দিন খাঁন, মুসলিম সাহিত্য সংসদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হারুনুজ্জামান চৌধুরী যখন সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন তখন জেলা প্রশাসনের ডিসি কিংবা অন্য কোনো আমলা এভাবে কোনো কথা বলার সুযোগ পাননি।
সিলেট সমাচার ও দৈনিক জালালাবাদী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল ওয়াহেদ খাঁনতো ছিলেন আরেকটু অন্যরকম ব্যক্তিত্ব। বিএনপি সরকারের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম বন্যার সময় সিলেট এসে এক মতবিনিময় সভায় লম্বা লম্বা কথা বলার সময় প্রবীণ সাংবাদিক ও সম্পাদক ওয়াহেদ খাঁন তাৎক্ষনিক মন্ত্রী মহোদয়কে ‘কম কথা বলে কাজ বেশী করার জন্য বলেছিলেন।’ সাংবাদিক ওয়াহেদ খাঁনের এই কথা শুনে মন্ত্রী মহোদয় তরিকুল ইসলাম তাৎক্ষনিক তাঁর বক্তব্য স্তগিত করে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সার্কিট হাউসে চলে গিয়েছিলেন।
তৎকালীন ৩০ মে’র মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাজ্জাদুল হাসান যখন মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন যেসব সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তৎকালীন সিলেট প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও বর্তমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি’র সিলেট ব্যুরো প্রধান আল-আজাদ, সিলেট প্রেস ক্লাবের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কালেরকন্ঠ’র সিলেট ব্যুরো প্রধান আহমেদ নুর, নিউজ টুডে’র তৎকালীন প্রতিনিধি অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন শীরু, বাংলা টিভি’র প্রতিনিধি আব্দুল মালিক জাকা, তৎকালীন বাসস প্রতিনিধি হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দৈনিক সবুজ সিলেট’র তৎকালীন উপ-সম্পাদক অধ্যাপক লিয়াকত শাহ ফরিদী, বাংলা বাজার পত্রিকার তৎকালীন প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট আলোচিত্রী আতাউর রহমান আতা, দৈনিক সিলেটের ডাক’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক দেওয়ান তৌফিক মজিদ লায়েক, দৈনিক নয়া দিগন্তের তৎকালীন জুবায়ের আহমদ, দৈনিক জালালাবাদের আজিজুল হক মানিক, দৈনিক প্রভাত বেলা’র কবির আহমদ সোহেল, বৈশাখী টিভি’র তৎকালীন শাহাবউদ্দিন শিহাব, বাংলা টিভি’র তৎকালীন দিপু সিদ্দিকী, যুগভেরী’র অপুর্ব শর্মা, দৈনিক সমকাল’র মুকিত রহমানী, দৈনিক মানবজমিন’র ওয়েছ খসরু, তৎকালীন চ্যানেল ওয়ান টিভি ও বর্তমান যমুনা টিভি’র ব্যুরো প্রধান মাহবুবুর রহমান রিপন, আরটিভি’র কামরুজ্জামান রুনু, কাজির বাজার পত্রিকার সৈয়দ সুজাত আলী, দৈনিক উত্তরপূর্ব’র তৎকালীন শরিফ আহমদ।
তৎকালীন সিলেটের জেলা প্রশাসকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের যে কেউ বলতে পারতেন, যেহেতু ডিসি সাহেব সাংবাদিকদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ, দু’নাম্বারী আছে বলেছেন, নিশ্চয়ই তাদেরকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন এবং প্রশাসনের কাছে এদের পরিচিতির তালিকা নিশ্চয়ই রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে দুর্নীতিবাজ এবং দু’নাম্বারী সাংবাদিকদের তালিকা প্রকাশের জন্য বলতে পারতেন কিন্তু এসময় উপস্থিত কোনো সাংবাদিকই এ কাজটি করেননি। কারণ উপস্থিত সকলেই হয়তো ভয় করেছিলেন, যদি নামের তালিকায় তার কিংবা তাদের নিজের নামটিও থেকে যায়। তাইতো সে সময় সিলেট জেলা প্রশাসনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কথিত উপস্থিত সকল সাংবাদিকেরা হাসি মেরে জেলা প্রশাসকের কথাটি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সিলেটের আত্ম গরিমায় ভরা, কোমর ভাঙ্গা সাংবাদিকদের প্রতিবাদ করার সাহসও ছিলোনা সে সময় অনেকের।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd