সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রাজধানীর ফার্মগেটের সম্রাট আবাসিক হোটেল থেকে ২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ১০ মিনিটে তেজগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম ৭ তলার একটি রুম থেকে প্রেমিক যুগল আমিনুল ইসলাম সজল (২১) এবং মারিয়ম আক্তার জেরিনের মরদেহ উদ্ধার করে।
সজলের সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্রে উল্লেখ রয়েছে সে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে থাকা মারিয়মের পরিচয়পত্রে উল্লেখ রয়েছে সে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্খী। তারা দুজন’ই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে উঠেছিলেন।
আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার হওয়া প্রেমিক যুগলের কক্ষ থেকে যৌন উত্তেজক বড়ির আলামত পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা মাত্রারিক্ত যৌন উত্তেজক বড়ি খাওয়ার পর স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তারা দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহকারী তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম বলেন, আবাসিক হোটেলের ওই কক্ষ থেকে ৪টি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়াও দু’টি ট্যাবলেটের খোসা পাওয়া গেছে। যেগুলো আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে।
ট্যাবলেটগুলো লাল রঙের। এ ঘটনার তদন্ত অব্যহত রয়েছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে।
সুরতহাল রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের সংবাদে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি- রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা। পরে সেটি ভাঙ্গা হয়।
ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, তরুণ-তরুণী বিছানায় পড়ে আছে। তাদের দেহে কোনো প্রকার আঘাত বা জখমের চিহ্ন নেই। এরপরেই বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয় সেখান থেকে।
যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মাত্রাতিরিক্ত যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেলে মানুষের কেবল শারীরিক ক্ষতিসাধন নয় মৃত্যুও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের ফলে শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এরমধ্যে সেবনকারী যদি প্রেসারের রোগী হন, তা হবে ভয়াবহ, সেই রোগীর প্রেসার বেড়ে ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। এর ফলে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়।
এটি দুই ধরণের হয়ে থাকে- প্রথমত রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোক হওয়া, দ্বিতীয়ত রক্তনালী ছিড়ে মৃত্যু হওয়া। রক্তনালী ছিড়ে যে ব্রেন স্ট্রোক হয় সেটিকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ‘হেমারেজিক স্ট্রোক’।
যৌন উত্তেজক ওষুধ খেলে দেহের ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়। একই সঙ্গে ব্যক্তি যেই অঙ্গের জন্য ওই ওষুধ খেয়েছেন সেই অঙ্গের ব্লাড সার্কুলেশন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রেসার ও ব্রেইনের ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়। তখন পুরো শরীরের অভ্যন্তরে এক রকম ভয়াবহ পরিবর্তন শুরু হয়। যার ফলে ওইসব ট্যাবলেট সেবনকারী ব্যক্তি মারা যেতে পারেন।
তবে এসব ওষুধের ঝুঁকি, এর মাত্রা ও ব্যক্তির শরীরের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
২১ বছরের একটি ছেলে এবং ১৯ বছরের একটি মেয়ে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করলে তার পরিণতি কি হতে পারে? এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, যেহেতু ছেলে এবং মেয়ে দু’জনই কম বয়সী। তাদের সাধারণত প্রেসার থাকার কথা নয়।
তবে দেখার বিষয় তারা যৌন উত্তেজক কয়টা ট্যাবলেট খেয়েছে, অতিরিক্ত খেয়েছে কিনা? অথবা, ভুল কোনো ওষুধ খেয়েছে কিনা? যে ট্যাবলেটগুলো খেয়েছে, সেগুলোর মাত্রা তাদের বয়সের সঙ্গে যায় কিনা? আরো একটি বিষয় হলো ওইসব ট্যাবলেটে কোনো ঝামেলা ছিলো কিনা সেটিও দেখার বিষয়? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলালেই হয়তো তাদের মৃত্যুর রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে।
সেবনের মাত্রা জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ৫০ মিলিগ্রামের বেশি কোনোভাবেই গ্রহন করা উচিৎ নয়। তবে ১০০ মিলিগ্রামের বেশি কেউ গ্রহন করলে যে কারো মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd