সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : দুর্বৃত্তের হামলায় আহত সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সেই ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস (২৫) ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর পরিবারের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোসহ সবকিছুই নিজের মতো করে করতে পারছেন তিনি। দুই মাস আগে তিনি ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও দিয়েছেন, অপেক্ষা করছেন ফলের জন্য। তবে সবকিছুর পাশাপাশি চলছে চিকিৎসাও।
সোমবার (৮ এপ্রিল) খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাংলা বলেন, ‘আমাদের মেয়ে এখন পুরোপুরি সুস্থ। পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবকিছুই সে নিজের মতো করতে পারছে। প্রায় দুই মাস আগে খাদিজা ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও দিয়েছে। পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। এখন ফলের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। জীবনযুদ্ধে খাদিজা এতটাই এগিয়েছে, আমরা আশাবাদী, সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে।’
আবদুল কুদ্দুস জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে তার চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে তার। সে এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে, তা একটু নিয়মের ভেতরে। অবসরে খাদিজা পরিবারকেও সময় দেয়। খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া ও তার বড় ভাই শাহীন আহমদ প্রবাসে। তারা প্রতিদিন খাদিজার সঙ্গে কথা বলেন, তার খোঁজখবর নেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর খাদিজা ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে বদরুল আলম নামের একজনের অতর্কিত চাপাতি হামলার শিকার হন। এরপর এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় বদরুলকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস। হামলার পাঁচ মাস পাঁচ দিন পর, ২০১৭ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রায় দেন সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক আকবর হোসেন মৃধা। রায়ে বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে খাদিজাসহ ৩৪ জন সাক্ষ্য দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, খাদিজা অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া কিংবদন্তি নারী। মৃত্যুর কাছে হার না মানা খাদিজা বিজয়িনী, প্রতিবাদকারী। তখন বিচারক বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আসামির ওপর সর্বোচ্চ শাস্তি আরোপের মাধ্যমে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হাজার হাজার বদরুল ভবিষ্যতে এমন কাণ্ড থেকে বিরত থাকবে এবং আমাদের নারী সমাজ সুরক্ষিত হবে।’
রায়ে আদালত আরও বলেন, ‘প্রেমের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা থাকতেই পারে। কিন্তু, তার জন্য এ ধরনের নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড কাম্য হতে পারে না।’
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল। ওই বছরের ৮ নভেম্বর খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার এসআই (সাবেক) হারুনুর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৫ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট গৃহীত হয়। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। ১৫ ডিসেম্বর বদরুলকে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে হাজির করা হয়। এদিন সাক্ষ্য দেন স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এএম রেজাউস সাত্তার। ১১ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষী দেন নার্গিসের মা-বাবা, বদরুলের জবানবন্দি গ্রহণকারী বিচারক ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৫ জন।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার ১৭ সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। সবশেষে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের আদালতে সাক্ষ্য দেন খাদিজা। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলাটি সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল। গত ১ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd