মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৮ সালে ১৮ অক্টোবর কমপ্লেক্সটির ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নতুন ভবন হস্তান্তরের প্রায় ৬ মাসেও লোকবল নিয়োগের অনুমোদন না হওয়ায় এখনো শুরু হয়নি ৫০ শয্যায় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
এদিকে, ৩১ শয্যা কমপ্লেক্সে রয়েছে চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কট। কমপ্লেক্সে ১৫৫টি পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ৪১টি পদশূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে উপস্থিত রয়েছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। প্রতিদিন হাসপাতালে আসা প্রায় ৫শতাধিক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। জনবল সঙ্কট থাকায় চিকিৎসা সেবাসহ দাফতরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় অনেক সময় নার্স-আয়ারা লেগে যান রোগীদের চিকিৎসা সেবায়। অনেক সময় ডাক্তার ও নার্স না থাকার কারণে ওয়ার্ড বয় দিয়ে চলে জরুরি বিভাগের কাজ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩টি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ২টিই রয়েছে বিকল। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার লক্ষাধিক জনগণ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কমপ্লেক্সে প্রথম শ্রেণির ১০জন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) সহ রয়েছেন ৪জন ডাক্তার। এর মধ্যে ১জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ১জন মেডিকেল অফিসার ও ১জন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) থাকলেও শূন্য রয়েছে মেডিকেল অফিসার (১জন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সহকারী ডেন্টাল সার্জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ও মেডিকেল অফিসার হোমিওপ্যাথিক পদে কর্মকর্তা শূন্য রয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে নার্সিং সুপারভাইজার (১জন), সিনিয়র স্টাফ নার্স (মিড ওয়াইফ) ৩জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে পরিসংখ্যানবিদ (১জন), ক্যাশিয়ার (১জন), স্টোর কীপার (১জন), অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (১জন), স্যাকমো (২জন), ফার্মাসিস্ট (১জন), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ১জন, সহকারী নার্স (১জন), স্বাস্থ্য পরিদর্শক (২জন), সিএইচসিপি (৬জন), স্বাস্থ্য সহকারী (৩জন), টিএলসিএ (১জন), চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ওয়ার্ড বয় (২জন), আয়া (১জন), মালী (১জন), নিরাপত্তা প্রহরী (১জন), বাবুর্চী (২জন) ও অফিস সহায়ক (৩জন) পদে দীর্ঘদিন যাবৎ লোকবল শূন্য রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাঃ আব্দুর রহমান জানান- হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসার এই দুইজন ডাক্তার দিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন হাসপাতালে আসা প্রায় ৫ শতাধিক রোগীকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। অনেক সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে অবস্থান করে রোগী দেখতে হয়। বহিঃর্বিভাগে যখন রোগীদের ভিড়ে হিমশিম খেতে হয়, তখন তিনি নিজেই রোগী দেখেন। ৫০ শয্যা হাসপাতালের ভবন হস্তান্তর হলেও এখনো লোকবল নিয়োগের অনুমোদন হয়নি। ফলে এখনো ৩১ শয্যারই কার্যক্রম চলছে। লোকবল নিয়োগের পর ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হলে হাসপাতালে আসা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।