সুনামগঞ্জের সেই জোছনাকে সম্মানীত করলো সংযুক্ত আরব আমিরাত

প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০১৯

সুনামগঞ্জের সেই জোছনাকে সম্মানীত করলো সংযুক্ত আরব আমিরাত

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সেই সুফিয়া আকতার জোছনাকে সম্মানীত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তার নামে স্থাপন হচ্ছে একটি স্কুল। পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে অর্থ। জোছনা দুবাইয়ে একটি পরিবারে দুটি বালকের দেখাশোনার কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলেন সমুদ্র সৈকতে। সেখানে অকস্মাৎ স্রোতে ভাসিয়ে নেয় ওই দুটি বালককে। জোছনা নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকান নি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নেমে পড়েন।

কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি নিজে ডুবে মারা যান।

এ নিয়ে তখন বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। ফুটিয়ে তোলা হয় একজন বাংলাদেশীর কাজের দায়িত্ববোধকে। এবার তার প্রতি সম্মান জানাতে দুবাইভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দুবাই কেয়ারস সুফিয়া আকতার জোছনার নামে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করছে একটি স্কুল। সংস্থাটির তরফে তার পরিবারের হাতে সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেইরি তুলে দিয়েছেন ৫৫০০ ডলার। ১৪ই এপ্রিল অনলাইন আরব নিউজ এ খবর দিয়েছে। এতে ২০১৪ সালের সেই দিনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।


২০১৪ সালের ২৫ শে অক্টোবর। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় নিজের বাড়ির পিছনে গাছপালায় পানি দিচ্ছিলেন খুরশিদ আলম (৫৫)। এ সময় অকস্মাৎ তার কাছে খবর আসেÑ সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা তার স্ত্রী সুফিয়া আকতার জোছনা মারা গেছেন। বেদনায় মুষড়ে পড়েন তিনি। কান্নার রোল পড়ে যায় পুরো বাড়িতে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে আসেন। এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।


সুফিয়া আকতার জোছনার তখন বয়স ৪৬ বছর। তিনি ৬ সন্তানের মা। তার স্বামী খুরশিদ আলম অ্যাজমার রোগি। কাজ করতে পারেনন না। ফলে সংসারে একমাত্র বাঁচার অবলম্বন হয়ে ওঠেন সুফিয়া। চাকরি নেন দুবাইয়ে। সেখানে দুটি বালকের দেখাশোনার দায়িত্ব তার। ওই বালক দুটির বয়স ৬ ও ১০ বছর।

২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর। এদিন ওই বাচ্চাদের নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন সমুদ্র সৈকতে। পানিতে নেমে খেলা করছিল দুই ভাই। অকস্মাৎ তীব্র ¯্রােত এসে তাদেরকে ভাসিয়ে নেয় অনেকখানি ভিতরে। তা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন জোছনা। তিনি সাঁতার কাটতে থাকেন তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ হন। ডুবে মারা যান সুফিয়া।
খুরশিদ

আলম বলেন, এ খবর পেয়ে আমি বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম। কয়েক ঘন্টা হুঁশ ছিল না। দুবাইয়ে কাজের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল জোছনার। তার শিগগিরই দেশে আসার কথা ছিল। অ্যাজমা থাকার কারণে আমি কোনো কাজ করতে পারি না। তাই উপার্জনের একমাত্র ভরসা ছিল সে। আমার বাড়িতে টিন-শেডের বাড়ি। জোছনা সব সময়ই স্বপ্ন দেখতো ইটের তৈরি বাড়ি। মারা যাওয়ার দু’দিন আগে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। সে বলেছিল, এমন একটি বাড়ি বানানোর মতো অর্থ যোগাড় করেছে।
কিন্তু এক সপ্তাহ পরে তার মৃতদেহ এলো দেশে। তাকে দাফন করা হয়েছে ঢাকা থেকে ১৯৪ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশায় নিজ গ্রামে।


সুফিয়ার সেই আত্মত্যাগকে সম্মানীত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই দাতব্য সংস্থাটি। গত ৯ই এপ্রিল ঢাকায় দেমটির দূতাবাসে এক অনুষ্ঠানে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয় ৫৫০০ ডলার। এ সময় দেশটির রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেইরি বলেন, সুফিয়ার আত্মত্যাগের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই। শোকাহত পরিবারের প্রতি সব সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থন দিয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জে সুফিয়ার নামে একটি স্কুল অনুমোদিত হয়েছে। তার নির্মাণকাজ এখনো চলছে। তবে এরই মধ্যে তাতে শুরু হয়েছে পাঠদান। এতে অর্থায়ন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দুবাই কেয়ারস। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের নির্দেশনায় এসব কাজ চলছে বলে বলা হচ্ছে। আর তা দেখাশোনা করছে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস।

সুফিয়ার বড় মেয়ে লুভা। তিনি বলেছেন, মা মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবারের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আমার ছোট ৫টি ভাইবোন আছে। তাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে বাবাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে তা অপূরণীয়। তা সত্ত্বেও মাকে নিয়ে আমি গর্বিত, যে মা ওই বালক দুটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের সন্তানের কথা ভাবেন নি। নিজের জীবনের কথা ভাবেন নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..