ওসমানীনগরে পরকিয়ায় আসক্ত এক স্ত্রীর কান্ড!

প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০১৯

ওসমানীনগরে পরকিয়ায় আসক্ত এক স্ত্রীর কান্ড!

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ওসমানীনগরে এক প্রবাসীর স্ত্রী পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে স্বামীর টাকা ও সম্পত্তি আত্মসাৎ করার হীন মানষিকতায় স্বামীকে অপহরণের পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়ে পেশাদার ছিনতাইকারী ভাড়া করে স্বামীর পাসপোর্ট ও মূল্যবান কাগজপত্র ছিনতাই করিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই যুক্তরাজ্য প্রবাসীর নাম হাফিজ মো: ইউনুছ আলী। তিনি উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের হাজী ইদ্রিছ আলীর ছেলে। এই ঘটনায় ইউনুছ আলী বাদি হয়ে ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইউনুছ আলীর পাসপোর্ট ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে মামলাটির অগ্রগতি করছেন না বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফলে ছিনতাই হওয়া পাসপোর্ট এখনো উদ্ধার হয়নি। মামলার অগ্রগতি ও পাসপোর্ট উদ্ধারের বিষয়ে ইউনুছ আলীর ভাতিজা নজির আহমদ গতকাল শনিবার সিলেটের ডিআইজির নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- ২০০৮ সালের ১২মার্চ ইউনুছ আলীর সাথে উপজেলার ধনপুর গ্রামের মুজাম্মিল আলীর মেয়ে তাছলিমা বেগম সূপার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্রী তাছলিমাকে তাজপুরস্থ নিজ বাসায় তুলেন স্বামী ইউনুছ আলী। ইউনুছ ও তাছলিমা দম্পত্তির ঘরে দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে তাছলিমা তার প্রতিবেশী চাচা আবন মিয়ার ছেলে জুনেদ ওরফে জুনেলের সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হন। এরপর প্রেমিক জুনেদের কুপরোচনায় জমি ক্রয় করার কথা বলে স্বামীর কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তাছলিমা। বছর খানেক পূর্বে তাছলিমার পরকিয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন ইউনুছ আলী। এনিয়ে তাদের দুই পরিবারের মুরব্বীদের সমন্বয়ে একাধিবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সমাধান আসেনি। পরবর্তী সময়ে ইউনুছ আলী দেশে অবস্থানকালে স্ত্রীর পরিকল্পনায় ইউনুছ আলীকে অপহরণ করে হত্যারও চেষ্টা করা হয়। ইউনুছ আলী বিষয়টি টের পেয়ে প্রবাসে চলে যান। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারীতে ইউনুছ আলী দেশে এসে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। এতে তাছলিমার পরকিয়া প্রমিকসহ ভাড়াটে লোকজন ইউনুছ আলীর গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকেন। চলতি বছরের ১৯ফেব্রæয়ারী ইউনুছ আলী ও তার ভাতিজা নজির আহমদ উপজেলার তাজপুর থেকে সিএনজি অটোরিকসাযোগে প্রয়োজনীয় কাজে সিলেট আদালতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে মোটর সাইকেল যোগে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাদের ব্যবহৃত গাড়ি গতিরোধ করে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ইউনুছ আলীর সাথে ব্যাগের মধ্যে থাকা তার পাসপোর্টসহ দু’টি বৃটিশ পাসপোর্ট, নগদ ত্রিশ হাজার টাকা, দেড় হাজার ইউরো পাউন্ড, কয়েকটি ব্যাংকের চেকবহি-ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও জমির প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
ঘটনার দিন ইউনুছ আলী বাদি হয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ২২ ফেব্রæয়ারী এটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়, মামলা নং-১৭। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই সাইফুল মোল্লা ২৩ ফেব্রæয়ারী ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় তাদেরকে বহনকারী সিএনজি চালক উপজেলার মোহাম্মদপুর রাইগদ্বারা গ্রামের সুরুজ মিয়ার পুত্র তুরণ মিয়াকে আটক করেন। তার দেয়া তথ্যমতে-ওই দিন উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বাহাপুর গ্রামের সিকান্দার আলীর ছেলে পেশাদার ছিনতাইকারী ও ডাকাত সর্দার মঈন উদ্দিন মঈন আটক করেন। আটকের পর ডাকাত সর্দার মঈনের কাছ থেকে লুন্ঠিত টাকার মধ্যে তার অংশের দশ হাজার টাকা ও তার স্বীকারোক্তি মতে ছিনতাইকালে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। মঈন পুলিশের হাতে আটকের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্যের নেতৃত্বে মঈনকে জনসমক্ষে নিয়ে আসলে সে স্বীকারোক্তি মূলক বর্ণনা দেয়। স্বীকারোক্তিমূলক বর্ণনায় মঈন জানায়- ইউনুছ আলীর পাসপোটর্, টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনতাই করার জন্য ইউনুছ আলীর স্ত্রী তাছলিমার ভাই কাইয়ুম ও তার পরকিয়া প্রেমিক জুনেদ তাদেরকে কন্টাক করে এনেছিল। ছিনতাই করা পাসপোর্ট, টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাদেরকে (কাইয়ুম-জুনেদ) সমঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মঈনের স্বীকারোক্তিতে ঘটনার মূল রহস্য প্রকাশ হওয়ার পর তাছলিমা দুই মেয়েকে নিয়ে পরকিয়া প্রেমিক জুনেদের সাথে আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন। লিখিত আরো অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- ছিনতাইকারীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কাইয়ুম ও জুনেদ ছিনতাইকারী ডাকাতদের ভাড়া করে এনেছিল কিন্তু তাদেরকে এখনো আইনের আওতায় আনা হচ্ছেনা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল মোল্লা এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের বাঁচানোর জন্য তাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন। এমনকি তিনি এই মামলাকে পুঁজি করে বড় অঙ্কের আর্থিক বাণিজ্য করার টার্গেটে মেতে ওঠেছেন। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আসামীদের জবানবন্দি রেকর্ড না করিয়ে এবং আসামীদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন না করিয়ে মূল ঘটনাটি আড়াল করে ঘটনার পরিকল্পনাকারীদের বাঁচানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আসামীদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন কিংবা মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদির কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করে আসছেন। এছাড়া পুলিশের কাছে দেয়া ছিনতাইকারী স্বীকারোক্তির ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তাসলিমা ও তার পরকিয়া প্রেমিক জুনেদ এবং তাছলিমার ভাই কাইয়ুম বিভিন্ন মাধ্যমে ইউনুছ আলীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের হুমকিতে তিনি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। বিষয়টি থানা পুলিশকে বারবার অবগত করার পরও পুলিশ রহস্যজনক ভুমিকা পালন করেছে। এমতাবস্থায় ইউনুছ আলী লন্ডন ইমোগ্রেশনের সাথে যোগাযোগ করে ইমোগ্রেশনের সহায়তায় তিনি পাসপোর্ট ছাড়াই যুক্তরাজ্যে চলে যান। মামলার অগ্রতির বিষয়ে বারবার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না এবং মূল পরিকল্পনাকারী চক্রটি বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
ইউনুছ আলী মুঠোফোনে অভিযোগ করে বলেন, আমার দুই মেয়েসহ তাদের পাসপোর্ট গোপন করে রাখার কারণে মেয়েদেরকে লন্ডনে নিয়ে যেতে পারছি না। পরকিয়া প্রেমিক জুনেলের কু পরোচনায় তাছলিমা জমি ক্রয় করার কথা আমার কাছ থেকে পনের লক্ষ টাকা তার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে নিয়ে নেয়। এছাড়া ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে বাসা ভাড়া পাওয়া আরো প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাছলিমার পরকিয়া প্রেমিক এবং তার স্বজনরা মিলে দির্ঘ কয়েক বছরে আমার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েও তারা ক্ষান্ত হচ্ছেনা। এখন কৌশলে আমার মূল্যবান বাসা বাড়িও হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায়সহ আমাদের পরিবারকে নাজেহাল করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠেছে। তাছলিমার পরিকল্পনায় যে কাইয়ুম ও জুনেদ আমাকে অপহরণসহ হত্যার ষড়যন্ত্র করিয়েছিল এবং আমিসহ আমার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রাণী করার চেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছে পুলিশের হাতে আটক ছিনতাইকারীরা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করার পরও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তা এখনও আড়াল করে রেখেছেন। এতে করে মূল হোতারা অধরা থাকায় ছিনতাই হওয়া পাসপোর্ট ও মূল্যবান কাগজপত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। তাই আইনী সহায়তায় আমার দুই মেয়ে ও তাদের পাসপোর্ট, আমার ছিনতাই হওয়া দুটি পাসপোর্টও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এসআই সাইফুল মোল্লা আর্থিক বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে প্রবাসী ইউনুছ আলীর পাসপোর্ট ও কাগজপত্র ছিনতাইয়ের নেপত্যে যদি কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..