সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০১৯
ক্যাসিনো কেলাঙ্কারিতে র্যাবের হাতে আটক হওয়া সেলিম প্রধান শুধু ঢাকা নয় সারা দেশেই ছিল তার চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক। সরকারি দলের দুই বড় নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি এ সব করতেন।
গত বছর দেশের সর্ব বৃহৎ পাথর কোয়ারী সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে এক মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই সেলিম প্রধান।
এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তিনি এই প্রতিবেদককে প্রথমে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন তাতে সায় না দেয়ায় ওই দুই নেতার নামে ভয় দেখিয়ে হুমকি দেন। তাতেও কাজ না হলে ঢাকা অফিসে বিচার দেয়ার হুমকি দেন তিনি।
এ সব অডিও সংরক্ষিত আছে দৈনিক পত্রিকার কাছে। এ নিয়ে দৈনিক অনলাইনে ২০১৮ সালের ১৫ জুন একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যদিও সেই প্রভাবশালী দুই নেতার সঙ্গে কথা বলতে না পারায় সেলিম প্রধান ও তাদের নাম উল্লেখ করা যায়নি রিপোর্টে।
রিপোর্ট প্রকাশের পর বন্ধ হয় তার চাঁদাবাজি। কিন্তু ততক্ষণে প্রায় কয়েকশ’ কোটি টাকার পাথর হাওয়া হয়ে যায় জিরো পয়েন্ট থেকে।
ঘটনাটি ২০১৮ সালের জুন মাসের। সিলেটে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ভোলাগঞ্জ সীমান্তের জিরোপয়েন্ট থেকে রাতের আঁধারে পাথর বিক্রি শুরু করেন বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের আয়ুব আলী নামের এক কোম্পানি কমান্ডার।
পাথর বিক্রির ঘটনা উপজেলা প্রশাসন হাতেনাতে ধরেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। শুধু চিঠি চালাচালি ছাড়া। সে সময় প্রতিরাতে ১০০০ থেকে ১২০০ নৌকা প্রবেশ করে জিরোপয়েন্টে এবং প্রতি নৌকা থেকে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন আয়ুব আলী।
সেই হিসাবে প্রতিরাতেই ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কেউ তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেই তিনি নাম ভাঙ্গান সরকারি দলের প্রভাবশালী দুই নেতা ও সেলিম প্রধানের।
কোম্পানি কমান্ডার আয়ুব আলীর কাছে রাতের আঁধারে লাখ লাখ টাকার পাথর বিক্রির কথা জানতে চান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারদলীয় এক ছাত্র নেতা। যে অডিও ক্লিপে শোনা যায়, শুরুতেই আয়ুব আলী তাকে আপনি বলে সম্বোধন করলেও একটু পরেই চলে আসেন তুমিতে।
তারপর টাকা নিয়ে পাথর বিক্রির কথা জিজ্ঞাসা করলে, আয়ুব আলী বলেন, ‘অবশ্যই টাকা নিচ্ছি, হান্ড্রেড পার্সেন্ট টাকা নিচ্ছি আর কিছু জানার আছে?’
সেই ছাত্র নেতাটি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, এটা করছেন কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে কোম্পানি কমান্ডার জানান, ‘নাম নিবে তুমি, আমি বলি এটা হুকুম দিয়েছে বলে সেই দুটি নামের কথা উল্লেখ করেন, পারলে তাদের সঙ্গে কথা বল।’
দৈনিক যুগান্তরের হাতে অডিও ক্লিপটি আসার পর কথা হয় সেই কোম্পানি কমান্ডারের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকেও জানান সেই দুই নেতা আর সেলিম প্রধানের কথা। কথা শেষ হওয়ার একটু পরই ফোন করেন সেলিম প্রধান।
পরিচয় দেন জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে। বলেন, ভোলাগঞ্জে যা হচ্ছে তা নিয়ে যেন কিছু না লেখা হয়।
সেলিম প্রধানও বলেন সেই দুই নেতার কথা, তারা এখানে জড়িত। জড়িত বলেই তিনি আমাকে ফোন করেছেন। তিনি পাথর বিক্রির বিষয়টি দেখাশুনা করছেন।
প্রথমে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন, তাতে স্বায় না দেয়ায় সেলিম প্রধান বলেন, ঢাকা অফিসে কথা বলবেন তিনি যাতে রিপোর্টটি না ছাপা হয়। যদিও তিনি তা আটকাতে পারেননি।
সোমবার র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর এ নিয়ে সিলেটের প্রশাসনেও চলছে কানাঘুষা। কারণ ওই দুই নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিকে তিনি ফোন করে অবৈধ পাথর বিক্রিতে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানান।
সেলিম প্রধান আটকের পর কথা হয় কোম্পানীগঞ্জের সেই ছাত্রলীগ নেতা সেলিম হোসেন শান্তর সঙ্গে যার অডিও ক্লিপের কারণে নানাভাবে তাকেও হুমকি দিয়েছেন সেলিম প্রধান।
সেলিম হোসেন শান্ত জানান, তাকে সেলিম প্রধানের পিএস পরিচয় দিয়ে শাওন নামের একজন বলেছে এ নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করলে একদম খেয়ে ফেলবে তাকে। সে সময় নাকি ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাও তাকে ফোন করেছিলেন যাতে এ ক্লিপ কাউকে না দেন তিনি।
সূত্র-যুগান্তর
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd