সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০১৯
গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রীকে অপহরনকে কেন্দ্র করে ১৫ মৌজার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। শিক্ষার্থীদের পরিবারও শিক্ষার্থীরা বিচারের জন্য এখন পুলিশ ও পরিচালনা কমিটির ধারে ধারে ঘুরছে। সঠিক বিচার না হলে এলাকায় পুনরায় অপ্রিতীকর ঘটনার আশঙ্কা। নিরাপত্তা না পেলে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে নারাজ। সমজতার আশ্বাসে অভিযোগকারী কাছ থেকে জিডির আলোকে মামলা স্থগিতের আবেদন।
সরজমিন পরিদর্শন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০শে সেপ্টম্বর প্রতিদিনের মতো আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রী ক্লাসের জন্য স্কুলে আসে। ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরতে গাড়ির জন্য স্কুলের সম্মূখে অপেক্ষা করতে থাকে আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী ও আলীরগাঁও ইউনিয়নের খলাগ্রাম এর বাসিন্দা সিদ্দেক আলীর শিশু কন্যা, একই গ্রামের ছায়ফুল ইসলামের শিশু কন্যা ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী, এবং ধর্ম গ্রামের কুটি মিয়ার শিশু কন্যা ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নাম্বার বিহীন সিএনজি অটো রিক্সা নিয়ে ড্রাইভার সৌরভ কুমার দেব দাড়িয়ে ছিল, সিএনজি টির পিছনের ৩টি সীট খালি থাকায় ছাত্রীরা সিএনজিতে উঠে পড়ে, সাথে সাথে সামনে খালি সীটে উঠে পড়ে আতিকুর রহমান ও নূর আহমদ নামে দুই যুবক। সিএনজিটি ধর্ম গ্রামে যাওয়ার পর এক ছাত্রী চালককে নামিয়ে দিতে বল্লে গাড়ি না থামিয়ে সামনের দিকে চালিয়ে যেতে থাকে ড্রাইভার এসময় ছাত্রীরা চিৎকার করলে কিছু দূর গিয়ে এক ছাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে অপর দুই ছাত্রীকে নিয়ে পালাতে থাকে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রীরা স্বজুরে চিৎকার করতে থাকে। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে একটি গাড়ি আসতে দেখে অপহরণকারীরা ছাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়।
অপহরনকারীরা হল গোয়াইনঘাট উপজেলার বারোহাল খাসমৌজার নূর উদ্দিন এর ছেলে আতিকুর রহমান (২৫), সঞ্জয় কুমার দেব এর ছেলে সৌরভ কুমার দেব(২০) ও মৃত. আব্বাস আলীর ছেলে নূর আহমদ (২৫)। ঘটনার পরের দিন ১ অক্টোবর অপহরিত ৩ ছাত্রী প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আহমদকে বিষয়টি জানালে তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত কে অবহিত করেন এবং অভিযুক্তদের স্কুলে ডেকে নিয়ে আসেন।
অভিযুক্তরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিস্পত্তির জন্য ৩ অক্টোবর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে এক সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত, অভিভাবক সদস্য সাংবাদিক মঞ্জুর আহমদ, ইউপি সদস্য আব্দুল গণি বতাই, জালাল উদ্দিন, সাবেক ইউপি সদস্য জামান আহমদ, ইলিয়াছ আলী, আবুল কাসেম, ইমাম উদ্দিন, বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষক আব্দুশ শুকুর, নজরুল ইসলাম সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
বৈঠক চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করে বারহাল খাসমৌজার সাহেদ আহমদ, কালা মিয়া, সুলতান আহমদ, আলমাছ উদ্দিন, পান্না দেব নিলয় সহ ১৮ থেকে ২০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে স্কুলের হল রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বৈঠক থেকে অপহরণকারীদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারী গোয়াইনঘাট সড়কের বারহাল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করতে থাকে। এবং অপহরণকারী ও অপহরণকারীদের বৈঠক থেকে ছিনিয়ে নেওয়াকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানায়।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে গোয়াইনঘাট থানার ওসি (তদন্ত) হিল্লোল রায় ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্থানীয় মুরব্বিদের সহযোগিতায় ছাত্রদের অবরোধ তুলে দেয়া হয় এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাস দেন ওসি। এরপর থেকে দুই দফায় ১৫ মৌজার বৈঠক ডাকা হলেও একমাত্র খাসমৌজা ছাড়া ১৪ মৌজার কোন লোক বৈঠকে উপস্থিত হয়নি, এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অপহরিত ৩ ছাত্রী ও তার পরিবার।
স্থানীয়ভাবে কোন সমাধান না হওয়াতে গত ৩রা অক্টোবর আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম এর পিতা সিদ্দেক আলী গোয়ইনঘাট থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন এ সময় তার সাথে ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেচিং কমিটির সভাপতি। অভিযোগটি ওসি তদন্তর কাছে পৌছার পর গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ ফোন দিয়ে অভিযোগটি স্থানীয়ভাবে নিস্পত্তি করে দেয়ার আশ্বাসে, ওসি তদন্ত বাদীর কাছ থেকে অপর একটি জিডি মুলে অভিযোগটি স্থগিত করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সমাধানে সময় বেধে দেন।
এরপর থেকে এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ বিষয়টি আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অপহরিত ছাত্রীদের অভিভাবকদের সাথে কয়েক দফায় বৈঠক করেও সুষ্ঠ কোন সমাধানে পৌছিতে না পারায় বৃহস্পতিবার পুনরায় ১৫ মৌজার বৈঠক ডাকা হয়েছে, আগামী ১৪ই অক্টোবর থেকে ২০ সনের এস এস সি পরীক্ষার্থীদের মূলায়ন পরীক্ষার সময় নির্ধারণ রয়েছে এর মধ্যে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হলে শিক্ষার্থীরা পুরনায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিবে।
অভিযোগকারী সিদ্দেক আলী জানান, আমার মেয়েসহ ৩ জন ছাত্রীকে সিএনজি দিয়ে স্থানীয় ৩ যুবক স্কুলের সম্মুখ থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। স্থানয়ভাবে সমাধানে বিলম্ব হওয়ায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। আমার কাছ থেকেও একটি অবগত করণ প্রসঙ্গে লিখিত রেখেছেন থানা কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আহমদ বলেন, বিয়টি শুনার সাথে সাথে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছি। সমাধান না হওয়াতে সবার পরামর্শে ছাত্রীর অভিবাবকের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কি হয়েছে স্কুল বন্ধ থাকায় তা আমি বলতে পারছি না। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত জানান, আমারা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় অভিযুক্ত যুবকদের নিয়ে স্কুলে বৈঠকে বসেছিলাম, হঠাৎ করে কয়েক যুবক অভিযুক্ত যুবকদের জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা সড়কে আন্দোলনে নেমে পড়ে।
একপর্যায়ে গোয়াইঘাট থানায় একজন অভিবাবককে বাদী করে অভিযোগ দিলে আলীরগাও ইউনিয়নের আওয়ামীলিগের সাধারন সম্পাদক থানার ওসি তদন্তকে বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমাধান করতে সময় চেয়ে নিয়ে আসেন। আগামীকাল আমরা আবারও বৈঠকে বসব সমাধান না হলে আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধান হবে।
অন্যদিকে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক মোতায়ন রয়েছে। অভিযোগ আসার পর পর স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিত্যরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের লক্ষে থানা থেকে সময় চেয়ে নিয়েছেন। সমাধান না হলে অভিযুক্তদের আটক করতে আমরা প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নেব।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd