বিশ্বনাথে তিন ওলির মাজার নিয়ে দু’পক্ষের উত্তেজনা

প্রকাশিত: ৯:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০১৯

বিশ্বনাথে তিন ওলির মাজার নিয়ে দু’পক্ষের উত্তেজনা
সিলেটের বিশ্বনাথের পিটাকরা গ্রামে একই বাওন্ডারির ভেতরে সংরক্ষিত হযরত শাহ্ সুনামদি (র:), ‘হযরত শাহ্ সরবদি (র:) ও হযরত শাহ্ সনদাসি’র (র:) মাজার ও মাজারের জায়গা নিয়ে দু’পক্ষে চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছ। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করেন ওয়াক্ফ প্রশাসকের ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন। আর প্রশাসনিক ওই কর্মকর্তার আগমনকে কেন্দ্র করে তদন্তে পেশিশক্তি খাটাতে দু’পক্ষই পাশাপাশি স্থানে পৃথক বৈঠকের আয়োজন করে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এতে দিনভর দু’পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করে।
মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজি ময়না মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ আজাদ মেম্বার, মোতাওয়াল্লী আক্তার হোসেন ও খাদিম মাসুক মিয়ার পক্ষে রয়েছেন পুরো গ্রামবাসী। আর অন্য পক্ষে রয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে শাহ্ সিকন্দর নামে মাজারের মোতায়াল্লী দাবিদার মো: ইলিয়াছ আলী আল্ হুমাইদি।
শতাধিক গ্রামবাসী জানান, পাকিস্তান আমল থেকে গ্রামের একই স্থানে তিন অলির মাজার রয়েছে। ১২৭৩ খৃষ্টাব্দে মাজারে জায়গা দান করেন আরজান উল্লাহসহ বর্তমান মোতায়াল্লী আক্তার হোসেনর পূর্বপুরুষেরা। আরজান উল্লাহ মারা যাবার পর বংশানুক্রমে তার ছেলে ইজ্জাত উল্লাহ, এর পর তার ছেলে আব্দুল মতলিব ওরফে কটাই মিয়া, এরপর তার ছেলে সাদিকুর রহমান মাজারের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে সাদিকুর রহমান যুক্তরাজ্য চলে গেলে ওয়াক্ফ প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে তার ছোটভাই আক্তার হোসেন প্রায় ১৫ বছর ধরে মোতায়াল্লীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পাশাপাশি তাদের বংশধরদের উদ্যোগে মাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করা হয়। প্রতি বাংলা সনের ২০ পৌষ তারিখে মাজারে বার্ষিক ওরস পালন করা হয়। এতে ওই তিন অলির ভক্ত ও আশেকানরা সমাগত হন। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে মোতাওয়াল্লী দাবিদার মো: ইলিয়াছ আলী ও বর্তমান মোতাওয়াল্লী আক্তার হোসেনের মধ্যে বিরুধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে প্রায় তিন বছর পূর্বে মাজারের গিলাফ (চান্দওয়া) আগুনে পুড়িয়ে দেন ইলিয়াস আলী। এ ঘটনার জন্য তৎকালীণ সময়ে গ্রামবাসীর কাছে ইলিয়াস আলী দুঃখ প্রকাশ করেন। গ্রামের পুরাতন মসজিদের জয়গা দখল করে ইলিয়াস আলী বসতঘর নির্মাণ করলে এর প্রতিবাদ করেন আক্তার হোসেনসহ গ্রামবাসী। আর এই বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ওই তিন ওলীর মাজারটিকে তার পূর্ব পুরুষ শাহ্ সিকন্দর আলী (র:) দরগা শরিফ ও নিজেকে এর মোতাওয়াল্লী দাবি করেন এবং দরগা শরীফ পরিচালানা কমিটি অনুমোদনের জন্য ওয়াক্ফ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন ইলিয়াছ আলী। গ্রামবাসী জানান, ইলিয়াছ আলীর কোন পূর্ব পুরুষদের মধ্যে এমনকি তাদের গ্রামসহ ওই এলাকায় শাহ সিকন্দর (র:) নামে কোন ব্যাক্তি ছিলেন না। ভুলবশত এসএ রেকর্ডে মাজারের জায়গা শাহ সিকন্দর মাজার নামে রেকর্ডভুক্ত হয়ে যায়।
এদিকে প্রতিপক্ষ মো: ইলিয়াছ আলী আল হুমাইদি বলেন, গ্রামের ওই তিন অলির মাজারে কারোরই অস্থিত্ত নেই। এটি তার পূর্ব পুুরষ শাহ্ সিকন্দর (র:) এর দরগা শরিফ। এছাড়া ওই দরগা শরিফের খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার পূর্ব পুরুষ জহুর আলী ও দাদা আজিম উল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে ওয়াক্ফ প্রশাসকের সিলেট ও সুনমাগঞ্জের দায়িত্বে থাকা জেলা ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, ওয়াক্ফ প্রশাসনে ওই তিন অলির নামে মাজারটি নতিভুক্ত রয়েছে। তাতে শাহ সিকন্দর (র:) দরগা শরিফ নামে কোন অস্তিত্ত নেই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাজারটি সরেজমিন পরিদর্শন করে উভয় পক্ষ ও এলাকার লোকজনদের বক্তব্য নিয়েছি। দু’পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তদন্ত শেষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আদেশ দিবেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..