সিলেটে ৪৫০ কোটি টাকার পাঁচার মামলায় নিয়ে চাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ৯:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯

সিলেটে ৪৫০ কোটি টাকার পাঁচার মামলায় নিয়ে চাঞ্চল্য

সম্প্রতি সময়ে সিলেটের আলোচিত ৪৫০ কোটি পাঁচারের গুঞ্জন সিলেট জুড়ে। এ অভিযোগে সিলেট আদালতে একটি মামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্ধা সাংবাদিক ও আইনজীবি ময়নুল হক বুলবুল। তিনি বিএনপির ঘরোনার একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সিলেট বুরোচীফ। কয়েক দিন আগে তিনি নিজে একটি প্রতারনা মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। কানাইঘাট উপজেলায় বাড়ী হলেও তিনি সিলেট শহরে বসবাস করেন। কানাইঘাটের সড়কের বাজারের একটি গরুর বাজার নিয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন বলে মামলায় প্রকাশ।

বাদীর মামলার সার সংক্ষেপ হচ্ছে, গত ১ আগস্ট কানাইঘাটের সড়কের বাজারে আবদুল গফুর ওয়াকফ স্টেটের কোরবানির পশুর হাটে গরু কিনতে গেলে পুলিশের লাইনের (ঘুষ) নামে তার কাছে ৮শত টাকা ঘুষ দাবি করে কয়েকজন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে বিষয়টি তখনকার ওসি মো.আবদুল আহাদকে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ থেকে বাদী অনুমান করেন বাজারের ব্যবসায়ীদের মদদ দিচ্ছেন ওসি।

অনুসন্ধান মতে ঐ সাংবাদিক আর ওসি আব্দুল আহাদের অনেক দিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। তাদের সম্পর্কটা অনেক গভিরতর ছিলো। যাহা দুজনের পরিবারের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় অনেক সাংবাদিক জানতেন। বিষয়টি কেন মামলায় গোপন করেছেন বাদী। তবে গোপন সূত্র মতে বাদীর মামলার পিছনের কলকাঠি নাড়ছেন এলাকার কিছু রাগব বোয়াল। যাদেরকে আইন বর্হিভ‚ত বায়না নিয়ে কানাইঘাটে ওসি থাকাবস্থায় থানা কম্পাউন্ডে প্রবেশ করতে দেননি ওসি। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। সেই রাগব বোয়ালদের সাথে রয়েছে সাংবাদিক বুলবুলের রয়েছে গভির সম্পর্ক। যাহা কানাইঘাট উপজেলার সকল সাংবাদিকই ভাবে ভাবে অবহিত। সড়কের বাজারের এ ঘটনার পর সাংবাদিক বাদী অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, ঘুষ আদায়ের মাধ্যমে ভারতীয় চোরাই ও চোরাচালানের গবাদি পশুর হাট বসিয়ে রাষ্ট্রের কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির দেওয়া হয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। তখন পুলিশ লাইনের কথা বলে ৪ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে বাজারে জড়িত লোকজন। এই হচ্ছে ঘটনার সার সংক্ষেপ। সচেতন মহলের প্রশ্ন হচ্ছে এতো নিখোঁত টাকার হিসাব সাংবাদিক বাদী জানলেন কি করে? পাচারকৃত টাকার কোন রশিদপত্র উনার কাছে রয়েছে কিনা, এ ঘটনায় কে বা কারা পুলিশ বিজিবির নামে টাকা আদায় করেছে। ঘটনাস্থনে কোন পুলিশ সদস্য কিংবা বিজিবি সদস্য টাকা আদায় করেছেন কিনা তা জানতে চান তারা।

অনুসন্ধান মতে ঈদের আগ মুহুর্তে বর্ডার এলাকা থেকে পুলিশ বিজিবি প্রায় দিনই ডজন-ডজন গরু আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে কিংবা থানায় নিয়ে আসার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। যদি পুলিশ বিজিবি ম্যানেজ হয়ে মদদ দিলো, তাহলে তারা অবৈধ গরু গুলো কেনোইবা আটক করে নিলামে বিক্রি করলো। বাদী মামলায় পাচারের সময়টা ১ ফেব্রæয়ারী থেকে ১ অক্টোবর ( চলতি মাস) উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ওসি আব্দুল আহাদ কানাইঘাট থেকে গোয়াইনঘাট বদলী হয়েছেন ২ আগষ্ট। দুই মাসের বেশী সময় পার হয়ে গেছে। কানাইঘাট থানায় ওসি সামছুদৌহা আছেন ২মাস থেকে। বাদীর আর্জি অনুযায়ী সেই সময়ে ভারতীয় গরু দেশে এসেছে, তাহলে দুই মাসের পাচারের জন্য জড়িত হিসাবে মামলায় আসামী দোহা হবেন না কেন?
উক্ত মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, পুলিশ ও বিজিবির নামে লাইনের টাকা আদায় করা হতো, তাহলে কেন মামলায় বিজিবি কোন সদস্যকে আসামী করা হলোনা। সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, সিমান্তটা পাহারা দেওয়া কাজ বিজিপি’র। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা চাইলে প্রতিটি থানার পুলিশ তাদের সহযোগীতা দিতে বাধ্য। প্রশ্ন হচ্ছে সিমান্ত এলাকা পাহারা দেওয়া যাদের দায়িত্ব তাদের কাউকে কেন মামলায় আসামী করা হলোনা । এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। কানাইঘাট থানার তৎকালীন ওসি মো.আবদুল আহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তার মদদে নাকি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজিম উদ্দিন,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এম মামুন উদ্দিন,দীঘিরপাড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো আবু রায়হান পাভেল। বাজারের হাসিল আদায়কারী হিসাবে অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে পুলিশ ও বিজিবির নামে ঘুষের টাকা আদায় করেন তাদের লোকজন। পাচার ও চোরাচালানের পশুর হাট পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা এ অবৈধ বাজার থেকে আদায় করা হয়।

উপজেলার আইনশৃংখলা বাহিনী বলতে কি বুঝিয়েছেন বাদী তাও স্পষ্ট নয়। জানা মতে উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। মামলায় কেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসামী হবেন না। নিজ উপজেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির দায়তো সভাপতি এড়িয়ে যেতে পারেন না। যে লোক পুলিশ কিংবা বিজিবির নামে টাকা আদায় করেছে এর দায় কিন্তু তাকেই নিতে হবে যে টাকা আদায় করেছে। আদায়কৃত টাকা তিনি পুলিশ কিংবা জিবির কাউকে দিয়েছেন কিনা বা তার কোন প্রমানাধি রয়েছে কিনা সেটা তিনিই ভাল জানেন। পুলিশের কোন সদস্য সরাসরি টাকায় আদায়ের সাথে জড়িত থাকলে তিনি সেই মামলায় আসামী হবেন এটাই স্পষ্ট। একজনের দূষ উপর জনের উপরে পড়বেনা নিশ্চই।

তবে আদালত সূত্র জানিয়েছে, মামলা শুনানীকালে বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি দুদুকে দেওয়া হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাদী জানান বিষয়টি দুদুক কার্যালয়ে জমা দিলে দুদুক কর্তৃপক্ষ বিষয়টির ব্যাপারে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। বাদীর উক্ত জবানবন্দির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দুদুক কর্তৃপক্ষকে আগামী ৩০ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। তবে বাদী মামলায় উল্লেখ করেছেন তিনি ১৮ আগষ্ট দুদুক সিলেট কার্যালয়ে গেলে তারা অভিযোগ নেয়নি। কিন্তু দুদক অফিসে কার কাছে গিয়ে ছিলেন সেটা তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেন নি। দুদুক সূত্র বলছে দুদুক কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে গেলে সুনির্দিষ্ট প্রমানাধি নিয়ে তদন্তে মাঠে নামে। কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে হলে অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনার যতেষ্ট্য প্রমান চায়। তাহলে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তে নামে দুদুক। কিন্তু আইনজীবি সাংবাদিকের বেলায় এমনটি হলো হলো কেন, দুদক এতো বড় একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পেয়েও গ্রহণ করলোনা। ঐ দিনই অতি উৎসাহী মিডিয়াওলারা মামলার আদেশের কোন কপি না দেখে আদালতের আদেশ বিকৃতি করে সংবাদ প্রকাশ করে কি বুঝাতে চাইলেন। আদালতের সূত্র দিয়ে বিকৃতি সংবাদ প্রকাশ করাটা কি এটা কি আদালত অবমাননার শামিল নয়।

এ বিষয়য়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন ওসি আব্দুল আহাদ কানাইঘাট থেকে গোয়াইনঘাট থানায় বদলী হওয়ার ২ মাস পরে কেন বাদী মামলাটি দায়ের করেছেন। ওসি আব্দুল আহাদ সরাসরি ঘুষ নিয়েছেন তার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমান নেই। ‘কানাইঘাট থানার ঐ এলাকার একজন প্রভাশালী সরকার দলীয় নেতা জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু তিনি কেন আইনশৃংখলা কমিটির কোন সভায় বিষয়টি তুলে ধরেন নি। তবে কি কোন দুষ্টচক্রের ইশারায় বাদী উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মামলাটি দায়ের করেছেন নিজের ফায়দা কিংবা বন্ধুত্বের ক্ষমতা জানান দিতে এমন প্রশ্ন শুনা যাচ্ছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..