সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার তুহিনের পেটে ঢোকানো দুটি ছুরির গায়ে নামেই কাল হল খুনিদের। কারন খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিতে যে দুজনের নাম লেখা ছিল তাদের মধ্যে সালাতুল কয়েক বছর ধরেই প্যারলাইসিস রোগে আক্রান্ত আর সুলেমান বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুজ। সুলেমান ও সালাতুল দুজনেই এর আগে আব্দুল বাছিরদের দায়ের করা খুনের মামলায় দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ শিশু তুহিনের পরিবারের সদস্যদের তাদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে হত্যার রহস্য একে একে বের হতে শুরু করে। খুনের ঘটনার প্রাথমিক তথ্য উদঘাটন করে জানতে পারে,নিহত শিশুর খুনি বাবা ও চাচারা গ্রামের তাদের প্রতিপক্ষ ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ছুরিতে নাম লিখেছিল।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে কেজাউড়া গ্রামে নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার শিশু তুহিন মিয়ার হত্যার ক্লু উদঘাটনে সহায়তা করেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তুহিনের নৃশংস হত্যাকা- দেখে গ্রামের শিশুরা ভয় পেয়েছে। অনেক শিশু ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছে না।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে সোলেমান মিয়া এক মাস ধরে নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী। তিনি বলেন,তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না। অথচ তুহিন হত্যার পরে তাঁর নাম বলছিলেন বাছির ও মছব্বিররা।
সালাতুল মিয়া বলেন,শুনলাম ছুরিতে নাকি আমার নাম লেখা। আমি দীর্ঘ দিন ধরেই প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হাঁটতে পারি না। এর পূর্বে হত্যা মামলায় আসামি করে ফাঁসিয়েছে হয়ত এ ঘটনায়ও আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল।
একাধিক সূত্রে জানায়,দিরাইয়ের কালিয়াকোটা হাওরের পূর্বপাড়ে কেজাউড়া গ্রাম ৪০০শত পরিবারের বাস। গ্রামে মারামারি,মামলা,খুনোখুনি নতুন কিছু নয়। আটটি বিল,জায়গা,বিলসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রায় বিশ বছরে আব্দুল বাছিরদের সঙ্গে সুলেমান,সালাতুল ও আনোয়ার হোসেন মেম্বারদের বিরোধ ছিল। আনোয়ারের পক্ষে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ থাকলেও আব্দুল বাছিরদের বড় পরিবার,লোকজন বেশি। দুপক্ষের অনেক মামলা এখনও বিচারাধীন। গ্রামের দুপক্ষই মামলাবাজ,এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েলে লিপ্ত থাকত,সাধারণ মানুষ তাদের কারণে ভয়ে থাকত আর মামলা,হামলার কারণে তাদের অনেকটা এড়িয়ে চলত। ২০০১সালে গ্রামের পাশের রাস্তায় মুজিব মিয়া নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর শরীরে ৬৪টি আঘাতে চিহ্ন ছিল। এই হত্যা মামলায় আসামি ছিল নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাসিরসহ তার ভাই,ভাতিজারা। ২০০৮সালের জবর আলী হত্যায় মছব্বিরদের এক আত্মীয় জবর আলীকে হত্যার অভিযোগে আনোয়ার মেম্বার ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৫সালের নিলুুফার হত্যায় তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৩১টি আঘাত ছিল। এ মামলায় আসামি ছিল আনোয়ার,সালাতুল ও সুলেমানের আত্মীয়-স্বজনরা।
খুনিরা নির্মমভাবে তুহিনকে হত্যার মাধ্যমে আমাদের গ্রামকে কলংকিত করেছে বলে ক্ষোব প্রকাশ করে কেজাউড়া গ্রামের স্থানীয় বাসীন্দারা জানান,মারামারি হয় প্রায়ই মামলাও হয়েছে প্রচুর। সংঘর্ষ ও মারামারিতে বিরক্ত গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ অনেকে মামলায় সর্বস্বান্ত । শিশু তুহিনের হত্যার মতো আগের তিনটি হত্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পুলিশ যদি সঠিক তদন্ত করে তুহিন হত্যার মতো অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে। সবাই বলে আমাদের গ্রামের মানুষ হিংস্র,অমানুষ।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ খায়রুল কবির রুমেন বলেন, প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত হলে এমন নৃশংস হত্যা ঘটত না।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই মূলত হত্যাকা-টি ঘটায় তুহিনের বাবা ও চাচারা। তাদের তিনজনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে তাদের কাছ থেকে হয়ত আরো তথ্য জানা যাবে বলে জানান সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান।
তিনি আরো জানান,আর উদ্ধার হওয়া ছুরি দুটি ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কেজাউড়া গ্রামের বিল নিয়ে মারামারি,হত্যাসহ সাত-আটটি মামলা এখনো তদন্তাধীন। তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বাছির,মছব্বিরসহ পাঁচজন। এর মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
উল্লেখ্য,উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে সোমবার ভোরে নিহত শিশু গাছে ঝুলে ছিল আছে শিশুর তুহিনের লাশ। পেটের মধ্যে ঢুকানো ছিল দুটি ছুরি। ডান হাতটি গলার সঙ্গে থাকা রশির ভেতরে ঢুকানো আছে। বাম হাতটি ঝুলে আছে লাশের সঙ্গে। কেটে নেওয়া হয়েছে শিশুটির কান ও লিঙ্গ। আর তার পুরো শরীর ভিজে আছে রক্তে। এমন নৃশংস ভাবে তুহিনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তার মরদেহ গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে যায়। খবর পেয়ে সকাল ১০টায় পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়না তর্দন্তের পর রাতেই দাফন সম্পন্ন করা হয়। এঘটনায় নিহত তুহিনের মা মনিরা বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার ১০জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd