সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
কাইয়ুম উল্লাস :: সিলেটের উন্নয়নে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান অনন্য অবদান রেখেছিলেন, এটা দলমতের বাইরে গিয়েও অনেকেই মানবেন। তৎকালীন সময়ে আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন সিটি কাউন্সিলর। একটু গুন্ডা টাইপের কাউন্সিলর ! অতীতের খাতা যারা দেখেন নি, দেখে নিবেন। তবু মরহুম সাইফুর রহমান আরিফকে স্নেহ করতেন। কারণ, উন্নয়ন করতে একজন গতিশীল গুন্ডা তার দরকার ছিল। গুন্ডা আরিফের ফর্মুলায় সাইফুর রহমান সিলেটে একচেটিয়া উন্নয়ন সাধন করেছিলেন। যে কারণে আকস্মিক দুর্ঘটনায় সাইফুর রহমান মারা যাওয়ার পর কেঁদেছিল সিলেটবাসী।
সাইফুর রহমানের প্রসঙ্গ এখানে মোটেই ধান ভাঙতে শিবের গীত নয়। কেননা, আওয়ামী লীগের সফল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতও আরিফকে ধরেছেন সাইফুর রহমানের মতো সিলেটের উন্নয়নের রূপকার হতে। আরিফের সেই আগের গুন্ডামি এখন আর নেই। মাঝখানে দুর্নীতি মামলা ও কিবরিয়া হত্যা মামলায় তিনি হুইল চেয়ারে চড়ে আদালতে আসা-যাওয়া করেছিলেন। জেল-টেল খেটে সিটি নির্বাচনের কল্যাণে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হয়েছিলেন। প্রথম দফায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরেও আরিফ জেলেই ছিলেন বেশিরভাগ সময়। সিটি কর্পোরেশনের বেশিরভাগ উন্নয়নে কাজ করেছিলেন সে সময়ের প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবিব। দ্বিতীয় দফায় জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের সঙ্গে এই বিএনপি নেতার সখ্যতা গড়ে ওঠে। আরিফকে স্নেহ করেন মুহিত, সিলেট নগরীকে কীভাবে আরও স্মার্ট করা যায়- সেই ফর্মুলা মেকার হিসেবে। পাশাপাশি মুহিত নিজ দলের নেতাদের ওপরও আস্থা রাখতে পারছিলেন না। কারণ, তারা কেউ-কেউ সমালোচিত ছিলেন। সিলেটে উন্নয়ন করার মতো আবুল মাল মুহিতের হাতে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো জায়গা ছিল না। আরিফ মেয়র হিসেবে মুহিতকে সেই স্পেস দিয়েছেন, বিনিময়ে আরিফও মুহিতের স্নেহ নিরাপদে মেয়রের পথ চলা আরও মসৃণ করেছিলেন। আবুল মাল মুহিতের স্বপ্ন সাইফুর রহমানের পথে স্মরণীয় হয়ে থাকা, সেটা আরিফের হাত ধরে যাত্রা করেছেন। আর আরিফের গোপন বাসনা বিএনপি জাহান্নামে যাক, নিজে বেঁচে মেয়র হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জনের ধান্দা। এই ধান্দায় আরিফ সফল, যদিও বিএনপি তাকে গোপনে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে গাল দেয়। একটা সময় গুঞ্জন রটেছিল আরিফ আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে পারেন। যা-ই রটুক, আরিফের লক্ষ্য মুহিতের স্নেহের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মাথায় লবণ রেখে বরই খাওয়া। সেটা আরিফ ভালোমতোই খাচ্ছেন। কিন্তু আবুল মাল মুহিত অবসর নিয়েছেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সফল আগেই বলেছি। মানুষ হিসেবেও সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ মানুষ। তবে তিনি কী পেরেছেন সাইফুর রহমানের মতো উন্নয়নের রূপকার হতে ? প্রশ্নের উত্তর হয় তো বেশি দূরে নয়। এবার আরিফ মুহিত পরিবারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে সিলেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। তাই বলা যায়, মুহিত এবং তাঁর পরিবারের জন্য মেয়র আরিফ একদম ফিট।
মুহিত পরিবারের জন্য কেন আরিফ ফিট ? সেটা তো বললাম। এবার বলি রবীন্দ্রনাথের জন্য আরিফ কেন অযোগ্য। প্রথমত আরিফ অতটা পড়ালেখা করেননি যে, রবীন্দ্রনাথকে তিনি বুঝবেন। দ্বিতীয়ত, বিএনপির সঙ্গে যেহেতু শরীকদল জামায়াত, তো রবীন্দ্র চর্চা এই মতাদর্শের মানুষের ধাঁতে পড়ে না। রবীন্দ্রনাথ মানে বাঙালির পয়লা বৈশাখ, যেটা আরিফের শরীক লেজের মতাদর্শীরা পালন করা তো দূরে থাক, মানতেই চায় না। ইদানীং দেখছি, রবীন্দ্রনাথের জন্য অনেকের নতুন দরদ জেগেছে। তারা বলছেন, রবীন্দ্রনাথ কি রাজনীতি করতেন ? আমি বলব, কবিরা রাজনীতি না করলেও রাজনীতি সচেতন থাকেন। ইতিহাস তো তা-ই বলে। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে যে বিষয়গুলো এনেছিলেন, এগুলো মানতে পারে নি পাকিস্তানিরা। আজও ছায়ানটে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমাবাজি হয়। এই বোমাবাজি কোন মতাদর্শের লোকেরা করে একটু ভেবে দেখুন। তার মানে রবীন্দ্রনাথ না চাইলেও রাজনীতি রবীন্দ্র অনুষ্ঠানে জড়িয়ে গেছে অনেক আগেই।
আসল কথায় এবার আসা যাক। সিলেটে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন। তাই একটি স্মরণোৎসব হবে। একটা কমিটি করা হয়েছে। যেটাতে শ্রদ্ধেয় আবুল মাল মুহিতের পরেই আরিফ চালকের আসনে। অবসরপ্রাপ্ত মানুষ মুহিত। তিনি তো আর এসব দেখবেন না। পুরো উৎসবযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ করছেন আরিফ। এই দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন স্নেহের সুযোগে। আমি তো বলেছি-ই, মুহিতের জন্য আরিফ ঠিক আছেন, আমরা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ রাস্তার উন্নয়ন কাজ নয় ! [চলবে]
লেখক : তথ্যচিত্র নির্মাতা
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd