সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ৫০ পয়েন্ট ভূমির জায়গায় ৫ শতক চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। ৪টি দলিল সম্পাদন করে প্রতারণার অভিযোগও উঠেছে একটি সিন্ডিকেটের উপর। সরকার এতে প্রায় ১২/১৪ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থার নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন জেলা রেজিষ্ট্রার জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া। ঘটনার প্রায় এক সাপ্তাহ হলেও জড়িত দলিল লেখক দাতা-গ্রহিতা ও এক নকল নবিশের বিরুদ্ধে এখনো কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহন করেননি সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়। এ ঘটনা নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে চলছে তোলপাড়। অপরদিকে একটি সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপণে করছেন বৈঠক।
সদর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বুধবার সিলেট সদর উপজেরার দেবপুর মৌজার তিনটি এবং পরদিন বৃহস্পতিবার আরো একটি দলিল সম্পাদিত হয়। দলিল নাম্বার ৮২৬৮, ৮২৬৯, ৮২৭০। তিনটি দলিলে ১৫ শতক ভূমি রেজিস্ট্রি হলেও প্রতিটি দলিলে দেখানো হয় ভূমির পরিমাণ ৫০ পয়েন্ট করে। বাস্তবে দলিলের ভেতরে দেখা যায় প্রতিটি দলিলে ভূমির পরিমাণ ৫ শতক। পরদিনই একই কায়দায় আরো একটি দলিল সম্পাদন হয়।
সদর সাব রেজিস্ট্রারের চোখে ফাঁকি দিয়ে এমন প্রতারণা করায় রেজিস্ট্রি অফিসে তোলাপাড় শুরু হয়। অভিযোগ উঠে দলিলগ্রহিতা, সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক ও এক নকল নবিশের যোগসাজসে ভূমি রেজিস্ট্রি ফি এর ১২/১৪ লাখ টাকা ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে আসার পর টনক নড়ে। এরপর সাব রেজিস্ট্রারের অগোচরে দাতা গ্রহিতাদের ডেকে এনে দলিলের পাতা সংশোধনের চেষ্টা করছে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের ভেতরে থাকা একটি চক্র।
এই চক্রটি নিয়ন্ত্রন করেন বিশ্বনাথ ভূমি অফিসের পিসি মহরার তপন কান্তি দে। সূত্র জানিয়েছে, তপনের নির্দেশনায় এই অপকর্ম করেছে কপিস্ট জুনেদ আহমদ, কপিস্ট উজ্জল, রাসেল কম্পিউটার অপারেটর রাসেল ও দলিল লেখক আক্তার।
সূত্র আরো জানায়, সিলেট সদর উপজেরার দেবপুর মৌজার তিনটি দলিল নাম্বার ৮২৬৮, ৮২৬৯, ৮২৭০ এবং পরদিন বৃহস্পতিবার আরো একটি দলিল সম্পাদিত হয়। উল্ল্যেখিত এই তিনটি দলিলে ১৫ শতক ভূমি রেজিস্ট্রি হলেও প্রতিটি দলিলে দেখানো হয় ভূমির পরিমাণ ৫০ পয়েন্ট করে। বাস্তবে দলিলের ভেতরে দেখা যায় প্রতিটি দলিলে ভূমির পরিমাণ ৫ শতক। পরদিনই একই কায়দায় আরো একটি দলিল সম্পাদন হয়।
জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেরার দেবপুর মৌজার এই ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির কাজ নেন কপিস্ট উজ্জল, রাসেল কম্পিউটার অপারেটর রাসেল। তাদের যোগসাযোশে রের্কড রুম থেকে ভলিয়ম বহি: আনেন কপিস্ট জুনেদ আহমদ এবং দলিল লেখক আক্তারের মাধ্যমে দলিল গুলো দাখিল করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে শুরু হয় তোলপাড়। বর্তমানে সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপণে করছেন বৈঠক। গত বৃহস্পতিবার রাতে কপিস্ট জুনেদ আহমদের গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জের বাড়িতে বিশ্বনাথ ভূমি অফিসের পিসি মহরার তপন কান্তি দে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বৈঠক করেন। পরদিন শুক্রবার জুমা নামাজের পর আবারো কপিস্ট জুনেদ আহমদের বাড়িতে কপিস্ট উজ্জল, রাসেল কম্পিউটার অপারেটর রাসেল, দলিল লেখক আক্তার ও বিশ্বনাথ ভূমি অফিসের পিসি মহরার তপন কান্তি দে বৈঠক করেন। এসময় রাসেলের পক্ষে তার গ্রামের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মোটা অংকের টাকারো লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে সূত্র। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর তালতলার হোটেল শাবানের দারুচিনি রেস্টুরেন্টে দলিল লেখক সমিতির কিছু লোকদের নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পিযুষ কান্তি দে’র ভাই পরিচয়দানকারী বিশ্বনাথ ভূমি অফিসের পিসি মহরার তপন কান্তি দে। বিশ্বনাথ ভূমি অফিসের তার কাজ থাকলেও তিনি সপ্তাহে ২/৩ দিন সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বসেন। তিনি ইতোমধ্যে সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেকর্ড কিপার হিসেবে নিয়োগ পাবেন বলে জানিয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, তারা সবাই আমার পরিচিত। তাই আমি তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আমি চাই প্রকৃত ঘটনাকারি যেনো শাস্তি পায়। সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দেয়া হয়েছে। আমি চাই তারা সেই টাকা আবার সরকারকেই ফেরত দিতে।
এদিকে সদর সাব রেজিস্ট্রার দলিল লেখক সমিতির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি মিমাংসা করে দেবেন বলে প্রতারকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিশ্বনাথ ভূমি অফিসের পিসি মহরার তপন কান্তি দে। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
আপনার কাজ বিশ্বনাথ ভূমি অফিসে তবে কেনো সদর সাব রেজিস্ট্রারের ঘটনার বিষয়টি নিয়ে আপনি মিমাংসা করছেন? সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল সম্পাদন ও সাব রেজিস্ট্রারের সাথে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার জন্য সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পিযুষ কান্তি দে’র গ্রুপের একজন কর্মীসহ বিভিন্ন লোক দিয়ে প্রতিবেদকে অনুরোধ করেছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন মুহুরি জানান, এই চক্রটি পুরো ঘটনার জন্য দোষ চাপাতে চাচ্ছে তাদের চক্রের এক সদস্য দলিল লেখক আক্তারের উপর! আর এই সিন্ডিকেটটাই নিয়ন্ত্রণ করে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সকল অপকর্ম।
সিলেট সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কেরানি দিলীপ দাস জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর দলিল গ্রহিতা-দাতা ও সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক রশিদুজ্জামান আক্তার এবং সংশ্লিষ্টদের ডেকে আনা হচ্ছে। তিনি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল সম্পাদন ও সাব রেজিস্ট্রারের সাথে প্রতারণার বিষয়টি নজরে আসার পর গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান।
সদর সাব রেজিস্ট্রার পারভীন আকতারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ করেননি।
সিলেট জেলা সাব রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত। আমি বিষয়টি দেখছি। তিনি বলেন, রাজস্ব ফাঁকি ও প্রতারণার অভিযোগে কেউ ধরা পড়লে ছাড় পাবে না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd