সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
সুন্দরী নারী সুবর্ণা রূপা। গর্জিয়াস মেকআপ আর বাহারি পোশাকে সেজে হাজির হন আড্ডায়। সোশ্যাল মিডিয়া ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভে নিয়মিত দেখা যায় তাকে। সন্ধ্যা হলেই নিজের বাসায় বসে গানের আসর। পরিচিতজনরা সবাই তাকে শিল্পী হিসেবেই জানেন।
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। স্বামী, সন্তান কেউ সঙ্গে না থাকলেও বিভিন্ন পরিচয়ে থাকেন কয়েক তরুণী ও এক তরুণ। শিল্পী পরিচয়ের আড়ালে তার ছিলো ভিন্ন ব্যবসা। নারী ও মাদকের আখড়া ছিলো তার ফ্ল্যাট। এমনটিই জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা।
খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকার ১৯ নম্বর সড়কের ছয় তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন সুবর্ণা রুপা। ওই বাসা থেকেই রুপা ও তার সহযোগী রুবেলকে ইয়াবাসহ আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তারা। গ্রেপ্তারের পর বারবার নিজেকে বড় মাপের শিল্পী এবং কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক এক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতার পুত্রবধূ হিসেবে পরিচয় দেন সুবর্ণা। তাকে ছাড়িয়ে নিতে তদবির করেন পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী অনেকেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই সুবর্ণার বাসাতেই আয়োজন করা হতো পার্টির। এতে অংশ নিতেন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ প্রভাবশালী অনেকে। বিলাসবহুল গাড়িগুলো পার্কিং করা থাকতো নিচে। গভীর রাত পর্যন্ত চলতো পার্টি। সেখানে গান করতেন সুবর্ণা রুপাসহ অনেকে। এই পার্টিতেই নিরাপদে ইয়াবা সেবন করতেন আগতরা। সেইসঙ্গে মনোরঞ্জনের জন্য থাকতো একঝাঁক সুন্দরী। গানে, মাদকে বুঁদ হয়ে স্বল্পবসনা তরুণীদের সঙ্গে নাচ করতেন পার্টিতে অংশগ্রহণকারীরা।
ওই বাড়ির মালিক বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আলী আহমদ। অভিযানিক টিমকে তিনি জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর সুবর্ণার ফ্ল্যাটে অনেকেই যেতেন। এসব কারণে চলতি মাসে তাকে বাসা ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে। শুরুতে ওই বাড়ির ছয় তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। কয়েক মাস আগে ভাড়া নিয়েছেন তিন তলার ফ্ল্যাট।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়মিত চার-পাঁচ জন তরুণী থাকতো সুবর্ণা রুপার বাসায়। অভিযানকালে বাসায় চার তরুণীকে পাওয়া গেছে। ওই তরুণীরাও মাদকাসক্ত। আটকের পর উত্তরার একটি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে তাদের।
তরুণীদের সম্পর্কে সুর্বণা রুপা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের শুরুতে জানিয়েছেন, একজন গৃহপরিচারিকা, দ্বিতীয়জন আত্মীয়, বাকি দু’জন তার ভক্ত। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। থাকেন জর্ডানে। ফেসবুকে পরিচয়। এই সূত্রধরে সোমবার বেড়াতে এসেছিলেন তার বাসায়। এ বিষয়ে তিনি একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন।
সুবর্ণার বাসায় থাকেন রুবেল। রুবেলকে প্রথমে ভাই পরিচয় দিলেও এক পর্যায়ে জানিয়েছেন, পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালীর সেনবাগের ছাতাপাইয়া এলাকার সম্পর্কে রুবেল তার ভাই হয়। ইয়াবা ও নারীদের খদ্দের সংগ্রহের কাজ করতেন এই রুবেল। প্রায় তিন লাখ টাকা মূল্যের ফিজার বাইক চালান তিনি। ইয়াবা বিক্রেতা ও অনৈতিক ব্যবসার দালাল পরিচয়ের আড়ালে নিজেকে পাঠাও চালক হিসেবে পরিচয় দিতেন রুবেল। মূলত পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছেই নিয়মিত ইয়াবা বিক্রি করা হতো। সুবর্ণা রুপা জানিয়েছেন তার স্বামী রেজাউল করিম রেজা থাকেন সৌদি আরবে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছেলে ও স্কুল পড়ুয়া এক মেয়ে রয়েছে। দুই সন্তানই থাকেন কক্সবাজারে। কক্সবাজারের বাহারছড়ায় সুবর্ণা রুপার শ্বশুরবাড়ি। প্রতিবেশীরা জানান, ছেলে-মেয়ে খিলগাঁওয়ের ওই বাসায় তেমন আসতো না। মাঝে-মধ্যে এলে তখন ওই বাসায় কোনো পার্টি হতো না। বাইরের লোকজনও আসতো না। ছেলে-মেয়ে থাকাকালীন বোরকা পরে চলাফেরা করেন সুবর্ণা।
ইয়াবা বিক্রি করার খবর পেয়ে খিলগাঁওয়ের বাসায় তল্লাশি চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসময় তার শরীরের বিশেষস্থানে রাখা ১০৭ পিস ইয়াবা জব্দ করে অধিদপ্তরের নারী সদস্যরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করেছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, হোম পার্টিসহ রুবেলের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্নস্থানে ইয়াবা সাপ্লাই দিতেন সুবর্ণা। ইয়াবা সংগ্রহ করা হতো কক্সবাজার থেকে। তার সঙ্গে বড় কোনো মাদক সিন্ডিকেটের সম্পর্ক রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, মানবজমিন
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd