ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : একের পর এক ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন বিয়ানীবাজারের জনপ্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ফৌজদারি মামলায় তাদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না সাধারণ মানুষ। সময়ের ব্যবধানে এসব মামলার হার কেবল বাড়ছে। একই সঙ্গে সাধারণ জনমনেও উদ্বেগ বাড়ছে। বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২২টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। হত্যা, সন্ত্রাস ও নাশকতা, প্রতারণা, নারী নির্যাতন এবং মারামারির ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে জনপ্রতিনিধিদের কেউ আবার মামলার বাদী হয়েও এলাকার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন। চারখাই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য রফিক উদ্দিনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী এমন অভিযোগ করেছেন। কুড়ারবাজার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য রাজু আহমদ ওরফে রাজু আলম ও তার সহযোগী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি বাঁধ থেকে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে।
চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা আদালতে বিচারাধীন। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা এবং সিলেটের আদালতে তার বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা চলছে বলে চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান। লাউতা ইউপি চেয়ারম্যান মো. গৌছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলছে। তিনি জানান, চলমান মামলা দুটি রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা হয়েছে। দুবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে তিনি এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান। কুড়ারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান এএফএম আবু তাহেরের বিরুদ্ধেও একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে অবশ্য পুলিশ প্রতিবেদনে এ মামলা মিথ্যা প্রমাণ হয় বলে জানান চেয়ারম্যান আবু তাহের। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিছবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলা আদালতে চলমান। ওই মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর ৬১নং আইনের ৩৪নং ক্রমিকে বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোনো পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্যের বিরুদ্ধে উপ-ধারা (৪)-এ বর্ণিত অপরাধে অপসারণের জন্য কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে অথবা অপরাধ আদালত কর্তৃক আমলে নেয়া হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের মতে চেয়ারম্যান অথবা সদস্য কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ পরিষদের স্বার্থের পরিপন্থী অথবা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন না হইলে, সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে চেয়ারম্যান অথবা সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ আইন অনুযায়ী বিয়ানীবাজারের অনেক জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত হওয়ার কথা। বিভিন্ন সূত্র জানায়, আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. গৌছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও হত্যার একাধিক মামলা ছিল। গত মেয়াদে দায়ের হওয়া এসব মামলায় তার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়নি। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ জানান, তৎকালীন সময়ে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ইউপি সদস্য গৌছ সেসব মামলায় খালাস পেয়েছেন। চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী জানান, ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য রফিক উদ্দিন মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। তিনি তাকে সতর্ক করার পরও ইউপি সদস্য দমছেন না। শেওলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আখতার হোসেন মিছবাহর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন এলাকাবাসী। কুড়ারবাজার ইউনিয়নের সদস্য রাজু আহমদ ওরফে রাজু আলমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি প্রতারণা মামলার প্রতিবেদনে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মাথিউরায় চেয়ারম্যান অথবা কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন। লাউতায় ইউপি সদস্য মুমিনুল ইসলাম রুমন একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়ে কারাভোগ করছেন। এসব বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান জানান, ‘পুলিশ প্রশাসন থেকে আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করা হলে আমরা আইনত ব্যবস্থা নেব।
Sharing is caring!