মুহম্মদ জাফর ইকবাল

দেখতে দেখতে বছরটি শেষ হয়ে গেল। প্রতিবারই যখন বছর শেষ হয় তখন আমি চাই কিংবা না-ই চাই, বছরটি কেমন কেটেছে সেটি মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।

এই বছর যখন বিষয়টি চিন্তা করছি তখন সবার আগে মনে পড়ল ওই বছর ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। অন্যরা বিষয়টি কে কিভাবে নিয়েছে আমি জানি না; কিন্তু আমার মনে হয় বাকি জীবনে এটি ভুলতে পারব না যে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ক্লাস ওয়ানের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। এ দেশে এখন যে শিক্ষানীতিটি রয়েছে আমি তার প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য ছিলাম, আমার যত দূর মনে পড়ে সেখানে আমরা বলেছিলাম, স্কুলের বাচ্চাদের প্রথম তিন বছর কোনো পরীক্ষাই থাকবে না। কিন্তু আমরা বেশ অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছি শুধু ক্লাস ওয়ান নয়, প্রি-স্কুলে পর্যন্ত বাচ্চাদের পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সেই পরীক্ষা নিয়ে মা-বাবাদের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অর্থ এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের ধারণা হয়েছে, ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হবে এবং সেটি করার জন্য প্রশ্নটি ফাঁস করিয়ে বাচ্চাদের সেই ফাঁস করা প্রশ্ন মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতে হবে। আমি যখন খবরটি দেখছি তখন আমি কি হাসব, না কাঁদব, নাকি দেয়ালে মাথা কুটতে থাকব—কিছুই বুঝতে পারিনি। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন নিয়ে অভিভাবকরা তাঁদের ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাকে কী বুঝিয়েছিলেন আমার জানার খুব ইচ্ছা করে!

অবশ্যই এ বছরের সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা হচ্ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের ঘটনা। এত দিনে আমরা সবাই জেনে গেছি মিয়ানমারের মিলিটারি জেনারেলরা তাঁদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফটোজেনিক নেত্রী, সেই দেশের সাধারণ মানুষ সবাই মিলে ঠিক করেছে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে রাখা যাবে না। কাজেই রোহিঙ্গাদের অমানবিক নিষ্ঠুরতায় খুন করা হতে লাগল, কোনো একটি হিসাবে এক মাসেই ৯ হাজার নিরীহ মানুষ এবং ৭০০ থেকে ৮০০ শিশু হত্যা করা হয়েছিল।

মেয়েদের ধর্ষণ করা হতে থাকল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হতে থাকল। এই অব্যর্থ প্রেসক্রিপশন নির্ভুলভাবে কাজ করেছে, সে দেশের সব রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে হাজির হয়েছে। প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও আমরা শেষে সবাইকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আরো লাখ দশেক রোহিঙ্গাকে আমরা খাওয়াতে পারব। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে আমরা লাখ দশেক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি, খেতে দিচ্ছি, প্রাণ বাঁচিয়ে থাকতে দিচ্ছি।

আমরা সাধারণ মানুষ সাধারণভাবে চিন্তা করি, তাই কোনোভাবেই বুঝতে পারি না মিয়ানমার নামের দেশটি একেবারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এত বড় একটি বর্বরতা করে যাচ্ছে; কিন্তু কেন সারা পৃথিবীর সবাইকে সেটি দেখতে হচ্ছে এবং শুনতে হচ্ছে। কেউ কিছু করতে পারছে না, কেউ কিছু বলতে পারছে না। সিকিউরিটি কাউন্সিলে যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয় তখন মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে চীন সেখানে ভেটো দেয়; যার অর্থ চীন নামের এক বিলিয়ন মানুষের দেশটি সারা পৃথিবীর সামনে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে, ‘মিয়ানমারের জেনারেলদের, মিয়ানমারের মিলিটারিদের এবং মিয়ানমারের পাবলিকদের শান্তিমতো রোহিঙ্গাদের খুন করতে দাও, গ্রাম জ্বালাতে দাও, মেয়েদের ধর্ষণ করতে দাও। খবরদার কেউ তাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে পারবে না!’

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় চীন নামের দেশটি আমাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। প্রায় অর্ধশতাব্দী বছর পরও দেশটির মানবিক মূল্যবোধে কোনো পরিবর্তন হয়নি। জ্ঞানী-গুণী মানুষরা এ বিষয়গুলো অর্থনীতি, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক—এসব বড় বিষয় দিয়ে বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারেন। আমি ক্ষুদ্র মানুষ, এত কিছু বিশ্লেষণ করতে পারি না। শুধু মনে হয়, আহারে! এতগুলো মানুষকে এত নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলল, দেশছাড়া করে ফেলল, অথচ পৃথিবীর মানুষ ঘটনাটির নিন্দা পর্যন্ত জানাতে পারবে না? আমরা কোন পৃথিবীতে আছি?

রোহিঙ্গাদের ঘটনাটি এখন সারা পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে। আমাদের দেশের যে ঘটনাটি নিয়ে শুধু আমাদের দেশের মানুষই মাথা ঘামাচ্ছে, সেটি হচ্ছে ‘গুম’। মাঝেমধ্যেই আমরা পত্রপত্রিকায় দেখি একজন ‘গুম’ হয়ে গেছে। কী ভয়ানক একটি ব্যাপার। মাঝখানে ফরহাদ মজহার গুম ব্যাপারটিকে একটি হাস্যকর কৌতুকের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন; কিন্তু সেটি বিবেচনা করা না হলে প্রতিটি ‘গুম’ আসলে বড় ধরনের নিষ্ঠুরতা। গুম হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ভেতর কেউ কেউ কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস পর ফিরে আসছেন; কিন্তু ফিরে আসার পর মুখ খুলছেন না। বোঝাই যাচ্ছে যারা গুম করে নিয়ে যাচ্ছে, ছেড়ে দেওয়ার আগে তারা এমনভাবে ভয় দেখাচ্ছে যে মানুষগুলো আর মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পান না। তার পরও বলতে হবে, তাঁরা খুবই সৌভাগ্যবান মানুষ, ভয়ভীতি যা-ই দেখানো হোক, অন্তত আপনজনের কাছে ফিরে আসতে পারছেন। কিন্তু যাঁরা ফিরে আসছেন না, তাঁদের আপনজনদের কথা চিন্তা করলে আমি কেমন জানি বিপন্ন অনুভব করি। কিছুদিন আগে খবরের কাগজে গুম হয়ে যাওয়া অনেক মানুষের পরিবারের একটি ছবি দেখেছিলাম। ছোট ছোট বাচ্চা তাদের বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মা সন্তানের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে বুকটা ভেঙে যায়।

বহুদিন আগে আর্জেন্টিনার সরকার তাদের দেশের মানুষদের এভাবে ধরে নিয়ে যেত। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারত না। তখন সেই মানুষগুলোর মায়েরা তাঁদের সন্তানদের ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকতেন। এক দিন নয়, দুই দিন নয়, প্রতিদিন। নিঃশব্দ সেই প্রতিবাদ সারা পৃথিবীর সব মানুষের বিবেককে স্পর্শ করেছিল। এত দিন পরে আমাদের দেশেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটছে, সেটি মেনে নেওয়া কঠিন। যে দেশে একজন মানুষ গুম হয়ে যায় এবং দেশটি সেই গুম হয়ে যাওয়া মানুষটির কোনো খোঁজ দিতে পারে না, সেই দেশটির জন্য এর  চেয়ে বড় অবমাননা আর কী হতে পারে? তবে কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে আমাদের দেশের ভেতর আরো একটি দেশ আছে, যেই দেশটির ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? কী ভয়ানক কথা!

এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা ‘ভালোভাবে’ শেষ হয়েছে। আমার কাছে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এখানে অবশ্য ‘ভালোভাবে’ শব্দটি এ দেশের ছেলে-মেয়েদের জন্য নয়। শব্দটি এ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য। যাঁরা এই ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে ‘টু পাইস’ কামাই করেন, সেই টাকা দিয়ে নতুন ফ্রিজ-টেলিভিশন কিনেছেন! অন্য সব বছরের মতো এ বছরও বিশ্ববিদালয়ে ভর্তি হতে আসা ছেলে-মেয়েগুলো একটি অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে গিয়েছে এবং সেটি নিয়ে এ দেশের কোনো মানুষের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি গত বছরই একবার সব উপাচার্যকে একটি সভায় অনুরোধ করেছিলেন যেন ছেলে-মেয়েদের কষ্ট কমানোর জন্য সবাই মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমার ধারণা ছিল রাষ্ট্রপতি কিছু চাইলে সেটি করে ফেলতে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের উপাচার্যরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুরোধকেও উপেক্ষা করার ক্ষমতা রাখেন।

ভাসা ভাসা শুনেছিলাম, এই মাসের ৬ তারিখ সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হবে। আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। পত্রপত্রিকায় কোথাও সেই গুরুত্বপূর্ণ সভার কোনো খোঁজখবর পাইনি।

সম্ভবত আমাদের ছেলে-মেয়েদের কষ্ট দেওয়ার বিনিময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সামনের বছরে নতুন টেলিভিশন, ফ্রিজ কিংবা ওয়াশিং মেশিন কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন!

প্রতিবছরের মতো এ বছরও হিন্দু পরিবারের ওপর আক্রমণ হয়েছে। প্রক্রিয়াটি হুবহু অন্যান্য বছরের মতো। কোনো একজন হিন্দু মানুষের নাম ব্যবহার করে বলা হবে, ‘অমুক মানুষটি ধর্মের অবমাননা করেছে। ’ তারপর হাজার দশেক লোক জড়ো করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর আক্রমণ করা হবে। তাদের ঘরবাড়ি লুট করা হবে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। যে মানুষটি কিছুই করেনি তাকে অ্যারেস্ট করে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। গত বছর ছিল নাসিরনগর, নিরীহ মানুষটির নাম ছিল রসরাজ। এ বছর রংপুরের ঠাকুরপাড়া, নিরীহ মানুষটির নাম টিটু রায়! আমি প্রতিবছরই আশা করে থাকি, এ বছর আমরা এ রকম কিছু না ঘটিয়ে কাটাতে পারি কি না। নিশ্চয়ই কোনো একটি সময় আমরা সাম্প্রদায়িকতার এই বিষাক্ত শিকড় মাটি থেকে উৎপাটন করতে পারব।

এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ‘চরিত্রের’ নাম হচ্ছে চিকুনগুনিয়া! প্রথমবার যখন এই বিচিত্র অসুখের নাম শুনেছি আমি নিজের মনে হা হা করে হেসে বলেছি, কী বিচিত্র একটি নাম! তারপর যখন রমজানের ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম পায়ের তালুতে ব্যথা এবং দেখতে দেখতে সারা শরীরের গিঁটে গিঁটে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল, তখন আমি চিকুনগুনিয়া নামের মাহাত্ম্য আবিষ্কার করলাম।

অসুখবিসুখের ব্যাপারে আমি যথেষ্ট উদার। মানুষ হিসেবে আমার যদি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার থাকে, তাহলে পশুপাখি, বৃক্ষলতা, পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের কেন বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না? কাজেই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ারা যখন বেঁচে থাকার জন্য কিছুদিন আমাদের শরীরে বসবাস করতে চায়, আমি আনন্দের সঙ্গে তাদের থাকতে দিই। চিকুনগুনিয়ার বেলায়ও আমি সেটিই ধরে নিয়েছিলাম, কিছুদিন ভুগে আমি ঠিক হয়ে যাই। কিন্তু প্রথমে বিস্ময় এবং পরে আতঙ্ক নিয়ে আবিষ্কার করেছি, এই ভয়াবহ অসুখের কোনো মাত্রাজ্ঞান নেই। প্রথম কয়েক সপ্তাহ জ্বর, শরীর ব্যথা, বমি ইত্যাদি। এরপর অসুস্থতার উপসর্গ চলে গেল; কিন্তু আমি আবিষ্কার করলাম যে আমি সোফায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না। লেখালেখি দূরে থাকুক, আমি একটি বই পর্যন্ত পড়তে পারি না। কয়েক বছর থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি কলাম লিখে যাচ্ছি—এই প্রথমবার আমি কলাম লিখতে পারলাম না।

আমি শুধু আমার অসুস্থতা নিয়ে নাকি কান্না কেঁদে যাচ্ছি; কিন্তু সেটি আমার উদ্দেশ্য না। আমার এই অসুস্থ হয়েছিল বলে আমি জানি এটি কী ভয়াবহ! এই গ্রীষ্মে ঢাকা শহরের লাখ লাখ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। মানুষের সময়কে যদি অর্থমূল্য দিয়ে বিবেচনা করা যেত, তাহলে আমরা দেখতাম কত অল্প সময়ে কত হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রথমে শুনেছিলাম, এই রোগে মানুষ মারা যায় না; কিন্তু পরে জেনেছি এটি সত্যি নয়, অনেকে মারাও গেছেন, বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক। মারা যেতে যেতে বেঁচে এসেছে তার সংখ্যাও কম নয়। আশা করি, সামনের বছরগুলোতে আমাদের যেন চিকুনগুনিয়ার বৃত্তান্ত আর লিখতে না হয়।

গত বছরের ইতিবৃত্ত লিখতে লিখতে আবিষ্কার করলাম, যা কিছু লিখেছি সবই নেতিবাচক। ভালো কিছু ঘটেনি, এটি তো হতে পারে না। এবার ভালো কিছু লিখি।

আমরা এখন প্রায় মোটামুটি নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আমাদের ছেলে-মেয়েদের পাঠিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অলিম্পিয়াড হচ্ছে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও ইনফরমেটিকস (প্রগ্রামিং) অলিম্পিয়াড। এবার এই তিনটি অলিম্পিয়াডে আমাদের ছেলে-মেয়েরা এক ডজন মেডেল এনেছে। পদার্থবিজ্ঞানে একটি সিলভার, তিনটি ব্রোঞ্জ, গণিতে দুটি সিলভার, দুটি ব্রোঞ্জ এবং ইনফরমেটিকসে চারজনের চারজনই একটি করে ব্রোঞ্জ। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেমন করছে বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারতের প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনা করা। তাদের জনসংখ্যা আমাদের ছয় গুণ, সুযোগ-সুবিধার কোনো তুলনা নেই, লেখাপড়ার মান ভালো (প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না), তার পরও আমরা নিয়মিত বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে আসছি। কী আনন্দ!

আরেকটি আনন্দের সংবাদ হতে পারে আমাদের রূপপুর নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন। খাঁটি বুদ্ধিজীবীরা অবশ্য নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, রাশিয়ার চেরনোবিল, জাপানের ফুকুসিমার উদাহরণ দেন। আমার অবশ্য সে রকম দুর্ভাবনা নেই, বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের বিদ্যুতের প্রয়োজন মেটাতে পারলেই দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র থেকেই শুধু বড় মাপের বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব। পৃথিবীর সব দেশে এই প্রযুক্তি থাকবে, আমাদের থাকবে না—এটি কেমন কথা!

রূপপুর নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র নিয়ে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছে, সেখানে এটিকে ‘পারমাণবিক’ শক্তি কেন্দ্র বলা হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায়, এটি সঠিক নয়, এই শক্তি পরমাণু থেকে আসে না, এটি আসে পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াস থেকে। কাজেই এর নাম আসলে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র। তবে যে নামেই এটিকে ডাকা হোক, সেই শৈশব থেকে যে রূপপুর শক্তি কেন্দ্রের কথা শুনে এসেছি, শেষ পর্যন্ত তার কাজ শুরু হয়েছে দেখে ভালো লাগছে। নতুন বছরে সবার জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা।

লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট