সিলেট ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নীলিমা নামে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পারভেজ। ওই ঘটনায় পারভেজ গ্রেপ্তারও হয়। কিন্তু বয়সের কথা বিবেচনা করে হাইকোর্ট পারভেজকে জামিন দেয়। আর জামিন পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে পারভেজ।
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর শিশু নীলিমার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে পারভেজ। মামলা প্রত্যাহার না করা হলে তাদের মারপিট করে এলাকা ছাড়া করবে বলেও জানায় পারভেজ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজ, তার বাবা কাজিম উদ্দিন, মা মোছা. কামরুন্নাহার ও আবুল কালামের নাম উল্লেখ করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশু নীলিমার বাবা হাসান ওরফে ফালান। আর এর পর থেকেই পারভেজ এলাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এবার ঘটালো আলোচিত ফোর মার্ডারের মতো মারাত্মক ঘটনা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের জৈনাবাজার এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় পারভেজ (২০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার পারভেজ আবদার গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে।
রবিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান। এ সময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ও তিন সন্তানকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পারভেজ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। মাদকসেবন থেকে শুরু করে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। মাদক সম্পৃক্ততা ও বখাটে আচরণের কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে এড়িয়ে চলতো বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ। পরিবারের সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভালো পথে আনতে পারেননি বলেও জানান। অবশেষে ফোর মার্ডার মামলায় পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে পারভেজ।
পারভেজের চাচা আসাম উদ্দিন বলেন, পারভেজ অনেক আগে থেকেই মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। টাকার জোরে একটি মার্ডার মামলা থেকে পারভেজ পার পেয়ে যায়। তখন যদি সে ওই মামলায় পার না পেতো তাহলে এমন রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড আর ঘটতো না।
গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, পারভেজের একার পক্ষে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটনো কোনওভাবেই সম্ভব নয়। মামলার শুরুতেই ভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পূর্বের বিভিন্ন ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, এলাকার বখাটে, মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন জনের তথ্য সংগ্রহ করে পিবিআই।
এসব তথ্য পর্যালোচনা করে রবিবার রাতে পারভেজকে আবদার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সে। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় পিবিআই। এ সময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো মতে রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি পায়জামার ভেতর থেকে তিনটি গলার চেইন, ফাতেমার কানের দুলসহ কিছু স্বর্ণাঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা ও তিন সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা- বুধবার দিবাগত রাতের কোনও এক সময় দুর্বৃত্তরা চারজনকে গলাকেটে হত্যা করেছে।
নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত স্মৃতি ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৫), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৭)। তারা আবদার গ্রামের জৈনাবাজার এলাকায় জমি কিনে পাকা বাড়ি বানিয়ে প্রায় ২০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন।
নিহতরা হলেন- আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd