সিলেট ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ৩৮তম বাংলাদেশ সার্ভিস কমিশন (বিসিএস) এ চিকিৎসক ক্যাডারে অষ্টম হয়েছেন ডা. তনুশ্রী তালুকদার। হাওর অঞ্চল খ্যাত সুনামগঞ্জ শহরের মেয়ে তিনি। ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা থেকে শুরু করে বাস্তব করেছেন বাবার স্বপ্নও, বিসিএস ক্যাডার। বর্তমানে তিনি রয়েছেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার হিসেবে।
শহরের জীবনে বেড়ে উঠা ডা. তনুশ্রী তালুকদারের পড়াশুনার শুরু সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুনামগঞ্জ শহর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ছোটবেলা থেকে পড়াশুনায় মনযোগী হওয়ায় প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্ডপুলে পেয়েছেন বৃত্তি সাথে হয়েছেন সিলেট বিভাগের মেধা তালিকায় ৪র্থ। পরবর্তীতে এ সাফল্যকে পুঁজি করে এগিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে শহরের সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (এসএসি উচ্চ বিদ্যালয়) এ ভর্তি হয়ে নবম শ্রেণিতে নেন বিজ্ঞান। সেই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যান নিজের মতো করে।
পরবর্তীতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই এসএসি পরীক্ষা দিয়ে পান গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং মেধা তালিকায় সিলেট বিভাগে হন ১০ম। তারপর ভর্তি হন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। সেখানেই কলেজ জীবন চালিয়ে যান তিনি। বাবা পেশায় শিক্ষক হওয়ায় বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন সবরকমের সহযোগিতা। কলেজ জীবনেরও তিনি সাফল্য ধরে রেখেছেন তিনি। এইচএসসি পরীক্ষায়ও পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং মেধা তালিকায় সিলেট বিভাগের মধ্যে হয়েছেন ৫ম। যেহেতু ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছেন একজন ডাক্তার হওয়ায় সেই সময় থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করেন মেডিকেলে পড়ার জন্য। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পান সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই থেকে যাত্রা শুরু হয় ডাক্তার হওয়ার। মানুষকে সেবা দেওয়া প্রত্যয়কে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের সাথে শেষ করে পড়াশুনা।
ডা. তনুশ্রী তালুকদার জানান, তার সকল সাফল্য কৃতিত্ব তার বাবা রবীন্দ্র কুমার তালুকদার। বাবার অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সবকিছু অর্জন করতে পেরেছেন। কোন রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হলেও ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার মৌখিকের সময় ছিলেন অসুস্থ। সেই অসুস্থতার মধ্যেই তিনি দিয়েছেন মৌখিক পরীক্ষা। সে সময় তিনি সিলেটে তারা মেসোর বাড়িতে থেকে নেন বিসিএসের প্রস্তুতি। তনুশ্রী’র বাবা চাইতেন তিনি যেনো বিসিএস ক্যাডার হন। তিনি তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। বাবা ও মা দুজনই তারই সাফল্যে অনেক খুশি। এছাড়া তনুশ্রী তালুকদার বিবাহ জীবনে আবদ্ধ হন ২০১৯ সালে। উনার স্বামীও সুরজিৎ পুরকায়স্থও একজন চিকিৎসক। স্বামী-স্ত্রী দুজনই মিলেই মানুষের সেবা করার শপথ করেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সংসার। বিসিএসের প্রস্তুতি’র সবকিছুই স্বামী ও তার পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন সবার আগে। তার এ সাফল্যে খুশি তিনিও। ডা. তনুশ্রী তালুকদার বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দিনে পড়াশুনা করেছেন ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা।
ডা. তনুশ্রী তালুকদারের স্বামী ডা. সুরজিৎ পুরকায়স্থ বলেন, আমি তনুশ্রীর এ সাফল্যে অনেক খুশি। সে অনেক কষ্ট করেছে যার জন্য আজকে তার এই কৃতিত্ব। আমি আমার পরিবার অনেক খুশি হয়েছি। আমি চাইবো সে যেনো তার উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করে।
এছাড়া ডা. তনুশ্রী তালুকদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাবা ছোটবেলা থেকে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন আমি বিসিএস দিব। সেই স্বপ্নটা বাস্তব করতেই আমার বিসিএস দেওয়া। আমি ৩৮তম এবং ৩৯তম দুটোই দিয়েছি এবং দুটোতেই কৃতকার্য হয়েছি। তবে ৩৮তম বিসিএস এ আমি চিকিৎসা ক্যাডারে অষ্টম হয়েছি। যার পুরোটা আমি আমার বাবা ও আমার স্বামীকে দিবো। কারণ তারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। বাবা ছোটবেলা থেকেই আমাদের কোন রকম কষ্ট হোক সেটা চাননি। আমি আমার এই সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সেবা করে যাব সবসময়।
নিজের স্বপ্ন সফল করে তিনি বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, সবসময় বাবা-মাকে সম্মান করতে হবে। তাদের আদেশ নিষেধ মানতে হবে। স্বপ্ন যাইহোক না কেন মন দিয়ে পড়াশুনা করতে হবে। পড়াশুনার কোন বিকল্প নেই। বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই পড়াশুনায় বেশি মনযোগী হতে হবে। আমরা ডিজিটাল হচ্ছি মোবাইল কম্পিউটার আছে। আমাদের এটি প্রয়োজন কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার কম করে পড়াশুনা করতে হবে, তবেই তুমি তুমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd