সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২০
কানাইঘাট প্রতিনিধি :: সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর দুপাশে মজুদকৃত পাথর জব্দ করার পর নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে একের পর এক নাটকের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় অফিসের পরিচালক এমরান হোসেনের ভূমিকা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কোটি ঘনফুট পাথর অবৈধ আখ্যায়িত করে সীজ করার পর দুই দফা নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করার পর সর্বশেষ তৃতীয় দফায় গত বুধবার আলমপুরস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ে জব্দকৃত পাথর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিলামে মাত্র বৈধভাবে নিজাম উদ্দিন নামে একজন জব্দকৃত পাথরের মূল্য ১৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ধরে ভ্যাট টেক্স সহ ব্যাংক ড্রাফট সহ শিডিউল জমা দেন।
জানা গেছে, জব্দকৃত পাথর নিলাম প্রক্রিয়া বাতিলের দাবীতে উচ্চ আদালতে ২০টির অধিক রীট পিটিশন মামলা রয়েছে। তারমধ্যে জব্দকৃত পাথর নিজেদের বৈধ পাথর দাবী করে তা বিক্রির জন্য ইতিমধ্যে ২৫/৩০ জন পাথর ব্যবাসয়ী উচ্চ আদালতের রীট পিটিশন মামলা করেছেন। আদালত ভিন্ন ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রথম দফায় জব্দকৃত পাথর নিলামে সিলেটের নজরুল ইসলাম ৩৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় নির্দিষ্ট পরিমান রেন্ট জমা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মনোনীত হন। তার দাবী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নানা ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তাকে পাথর বুঝিয়ে না দিয়ে দ্বিতীয় দফায় নিলাম ডাকেন। এমনকি তার জমা দেয়া ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ফেরত না দিয়ে সেই টাকা জব্দ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এতে করে লোভাছড়া নদীর দুই পাশসহ কানাইঘাট ব্রিজ পর্যন্ত রক্ষিত পাথরের প্রথম নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতা নজরুল ইসলাম কর্তৃক সুপ্রিমকোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট আদালত বুধবারের নিলাম স্থগিত সহ, আবেদনকারি নজরুল ইসলামের ২৮ জুলাইয়ের আবেদন নিষ্পত্তির আদেশ দেন। আদেশে উচ্চ আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পরবর্তী ৭ কার্যদিবস পর্যন্ত পাথর নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ রয়েছে। রিট শুনানীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন দুদকের প্রধান আইনজীবী খোরশেদ আলম খান।
কিন্তু স্থগিতাদেশ থাকা স্বত্বেও বুধবার বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে পরিচালক মোহাম্মদ এমরান এমরান হোসেন টেন্ডার বক্স খোলার মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেন।
পাথর ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়া স্বত্ত্বেও কেন তাকে নিলামে বর্ণিত এলাকার পাথর বুঝিয়ে না দিয়ে পুনঃনিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল, তা চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি আদালতে ২৮ জুলাইয়ের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিলাম, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন বিপণন ইত্যাদি স্থগিত রাখার জন্য আবেদন করেন। বিচারপতি শহিদুল করিমের আদালত ১০ আগস্ট ভার্চুয়াল কোর্টের শুনানী শেষে রিট পিটিশন (নং ১০৪/২০২০) নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত বুধবারের নিলাম স্থগিত করেন। কিন্তু সেটা অমান্য করে নিলাম প্রক্রিয়া চলমান রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নজরুল ইসলাম।
সর্বোচ্চ দরদাতা নজরুল ইসলামের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তব্য ছিলো নজরুল ইসলামের দায়েরকৃত আবেদন নিষ্পত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া। আদালতও এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যাচ্ছেন। লোভাছড়ায় জব্দকৃত পাথর নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এমন খামখেয়ালীপনার ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি জব্দকৃত পাথর নিলাম নিয়ে গণমাধ্যমে কোন ধরনের সঠিক কথাবার্তা না বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন সবকিছু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সংবাদকর্মীদের ফোনও তিনি অনেক সময় রিসিভ করেন নি। করলেও সঠিক কোন কথা বলেননি। তৃতীয় দফায় নিলামে অংশগ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি নিজাম উদ্দিন জব্দকৃত পাথর নিলামে পেয়েছেন কি না এ ব্যাপারে পরিচালক এমরান হোসেনের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলে একবার ফোন রিসিভ করে বলেন, এখনও পাথর নিলামের কে সর্বোচ্চ দরদাতা মনোনীত হয়েছেন তা চ’ড়ান্ত করা হয়নি। বিষয়টি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুারো সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিলাম প্রক্রিয়ার কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। তারা সিন্ধান্ত নিবেন নিলাম প্রক্রিয়া আবার হবে কি না অথবা নিলামে অংশগ্রহণকারী কাকে জব্দকৃত পাথর আইনী বিষয়ে পর্যালোচনা করে দিবেন।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যখন লোভাছড়া কোয়ারীর দুই পাশের পাথর মাপযোগ করেন তখন কোয়ারীতে অন্তত ৩ কোটি ঘনফুট পাথর মজুদ ছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ও পরিবেশ অধিদপ্তর পাথর জব্দ করার পরও কোয়ারি থেকে অন্তত ২ কোটি ঘনফুট পাথর নৌপথে পাচার হয়েছে। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তর ১ কোটি ঘনফুট পাথর জব্দমূলে ইতিমধ্যে ৩ দফা নিলাম প্রক্রিয়ায় বিলম্বিত করায় বর্তমানে কোয়ারীতে ৫০/৬০ লক্ষ ঘনফুট পাথর মজুদ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এত পাথর কারা পাচার করেছে তাদের প্রশাসন এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। তবে বার বার পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়ে আসছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর যে পাথর জব্দ করেছে সেই পাথর তারা শুকনো মৌসুমে উত্তোলন করেছিলেন, বিধায় তাদের বৈধ পাথর বিক্রির সুযোগ সহ নিলাম প্রক্রিয়া বাতিলের দাবীতে উচ্চ আদালতের ধারস্থ সহ নানা ভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান গত আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জানিয়েছেন, লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারনে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুারো (ডিএমডি) ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর পাথর জব্দ করেছে। লীজের শর্তের মধ্যে শুকনো মৌসুম উত্তোলনকৃত পাথর বর্ষা মৌসুমে নৌপথে পরিবহন করা হবে এমন কোন শর্ত নেই। কোয়ারির পুরো বিষয়টি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুারো পরিবেশ অধিদপ্তর দেকবাল করছে তিনি কোন কমিটির সদস্য নয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd