সিলেট-তামাবিল সড়কে চাঁদা আদায়, হদিস নেই কোটি টাকার: পণ্য-পরিবহণের আন্দোলন

প্রকাশিত: ৭:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২০

সিলেট-তামাবিল সড়কে চাঁদা আদায়, হদিস নেই কোটি টাকার: পণ্য-পরিবহণের আন্দোলন

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে রোডে বাঁশকল বসিয়ে চাঁদা আদায় বাণিজ্য বন্ধে আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের টনক নড়ছেনা। এনিয়ে চলছে দামাচাপার ষড়যন্ত্র। সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কার্ভাডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে এর প্রতিকার দাবিতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলেও রহস্যজনক কারনে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা নীরব। যদিও নেতাকর্মীরা হুশিয়ারি দিয়েছেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে চাঁদা আদায় বাণিজ্য বন্ধ না হলে জেলা ভিত্তিক পণ্যবাহী সকল পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতকিছুর পরেও রহস্যজনক কারনে টনক নড়ছেনা প্রশাসনের।

জানা গেছে, সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে একবছরের জন্য সারী নদী, ফেরিঘাট ও পাঁচহাতি এলাকায় বালু উত্তোলন করতে শাহিন নামক এক ব্যক্তিকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় ইজারা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাহিন স্থানীয় এলাকায় একটি সিন্ডিকেট গ্রুপ নিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ শুরু করেন। রহস্যজনক হলেও সত্য যে, এক ব্যাক্তির নামে তিন তিনটি ইজারা প্রদান করায় স্থানীয়দের মধ্যে চলছে জল্পনা কল্পনা ও ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। ইজারা প্রদানে প্রভাবশালী ক্ষমতাধররা বালু উত্তোলন করছে সরেজমিনে আর পরিবহণ হতে ‘চাঁদা’ আদায় করতে বাঁশ কল বসিয়ে ব্যবহার করছে সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে রোড। অভিযোগ রয়েছে সরকারদলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাবশালী মহল গোপনীয়তা রক্ষা করে জেলা প্রশাসন হতে হাতিয়ে নিয়েছে এসকল বালু মহাল। প্রায় ৫০জনের গ্রুপ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চাঁদা আদায় বাণিজ্যের এই বাহিনী। ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, হামলার ভয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে নারাজ। অবশেষে এর প্রতিকার ছেয়ে আন্দোলনের ডাক দিল পরিবহণ শ্রমিকরা। আজ বৃহস্পতিবার (২০ আগষ্ট) সকাল পর্যন্ত্য সেই ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছে পরিবহণ শ্রমিকরা। এর আগে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন বাঁশকল বন্ধে উদ্দ্যেগ নিলেও পরবর্তীতে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে।

এদিকে একজন ব্যক্তির নামে তিনটি ইজারা প্রদান নিয়ে চলছে তোর জুড়। ১ কোটি ২০ লাখ টাকার হদিস নিয়েও দেখা দিয়েছে জল্পনা। সেই টাকার মালিকের ব্যাংক হিসাব তলিয়ে দেখছেনা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা তার সাথে থাকা শেয়ার ক্রয়ের ঘনিষ্ঠজনদের। তবে সরেজমিন অনূসন্ধ্যানে জানা গেছে, সরকারদলের লোক ব্যতিত বিরোধিদলের নেতাকর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এই চক্রটি নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ব্যাবহার করছে কথিত কয়েকটি ভূইফোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনলাইন। পাশাপাশি এ ঘটনাকে প্রশাসনের নজর এড়াতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইজারা প্রদানকারী ব্যক্তি শেয়ার বিক্রয়ের নামেও অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। অথচ সরকার থেকে কোন মহাল ইজারা নেওয়ার পর সেই ব্যক্তি কাউকে শেয়ার বা জড়িত করতে পারবেন না সরকারি শর্ত উল্লেখ থাকলেও কোনকিছুই মানছেন না তিনি। পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে বলতে দেখা গেছে এক ব্যক্তিকে কিভাবে তিন তিনটি বালু মহাল জেলা প্রশাসন ইজারা প্রদান করেছেন? তাদের মতে যখাযথ নিয়ম না মেনে প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিকে হাত করে তারা ইজারাদারের রোষানলে পড়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এসব কর্মকান্ড চালিয়েছেন। তাই এ ইজারা অবিলম্বে বাতিল করে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিক ও ব্যাবসায়ী ব্যক্তি প্রতিবেদক’কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইজারাদার ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে অবিলম্বে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এসময় তারা বলেন, প্রয়োজনে উর্ধ্বতন কোন স্পেশাল বা গোয়েন্দা সংস্থার লোক দিয়ে তাদের বিরোদ্ধে নজরদারী বাড়ানোর। তারা উল্লেখ করে বলেন এর পূর্বে ২০১২ সালে একইভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে বাঁশকল চাঁদা আদায় বাণিজ্য উচ্ছেদ করা হয়। এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে এবারও। এই সময়ে যদি শক্ত হাতে এর প্রতিকার না নেওয়া যায় তাহলে ফের চাঁদাবাজি চলবে রাস্তার উপরে।

এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত্য জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কার্ভাডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ের সভাপতি আবু সরকার নিশ্চিত করেছেন মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া পরিবহণ ধর্মঘট আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত্য চলছে। এসময় প্রতিবেদক’কে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল দু’টার দিকে এনিয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার’র সঙ্গে একটি বৈঠক রয়েছে। তিনি বলেন, এ বৈঠকে যদি কোন সূরাহা না আসে তাহলে তারা জেলাভিত্তিক পণ্যবাহি সকল পরিবহণ নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিবেন।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..