সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২০
ওয়েছ খছরু :: সিলেটে পাথর সংকট দেখা দিয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না পাথর। এতে করে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেমে আছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চান ব্যবসায়ীরা। সিলেটে পাথরের উৎস দুই ভাবে হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ভারতের এলসির পাথর। অপরটি স্থানীয়ভাবে কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথর। করোনার কারণে প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ এলসির পাথর।
আর লিজ না থাকায় সিলেটের পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন হচ্ছে না। ফলে পাথর পাওয়া যাচ্ছে না সিলেটে। অন্যদিকে সিলেটে পাথর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক লাখ মানুষ। পাথর আমদানি ও উত্তোলন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগও হুমকির মুখে পড়েছে। সিলেটের পাথরের চাহিদা দেশজুড়ে। গুণগত মান ভালো থাকায় গোটা দেশের নির্মাণকাজে সিলেটের পাথরের চাহিদা থাকে বেশি। ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং, লোভাছড়া সহ ১০-১২টি পাথর কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথর গোটা দেশের নির্মাণকাজের পাথরের চাহিদা পূরণ করে। সিলেটে উত্তোলিত পাথর স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পর দেশের নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও জাফলং দিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর আসে। এলসির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি করেন। কিন্তু করোনার কারণে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা ভারতের ব্যবসায়ীদের কাছে আটকা পড়ে আছে। চুনাপাথর আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, করোনাকালে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পাথর রপ্তানি করতে রাজি নয়। তারা পাথর দিচ্ছে না, পাশাপাশি টাকাও আটকে রেখেছে। এতে করে পাথর ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং সহ কয়েকটি পাথর কোয়ারি লিজে নেই।
এ কারণে এসব কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। মামলাসহ প্রশাসনিক নানা জটিলতার কারণে কোয়ারি লিজে না যাওয়ার কারণে লাখো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পাথর ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টোন ক্রাশার মিলের মালিকরাও গত ৫ মাস ধরে লোকসানের মুখে পড়েছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুন নূর জানিয়েছেন, পাথরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টোনক্রাশার মিলের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। পাথর না পাওয়ার কারণে এসব স্টোনক্রাশার মিলের মালিকরাও লোকসানের মুখে পড়েছেন।
গত কয়েক মাসে ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে স্টোনক্রাশার মালিকদের। পাথর না থাকলেও ক্রাশারের জমির ভাড়া ও শ্রমিকদের বেতন গুনতে হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানের একটি স্টোনক্রাশার মিলকে মাসে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে পাথর কোয়ারিসমূহ সচল করে কর্মহীন হয়ে পড়া লাখো মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি নিয়ে বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা নির্বাহকারী ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সভায় মিলিত হন। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে তারা এই মতবিনিময় করেন। ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দ সিলেটের পাথর কোয়ারিসমূহে পাথর আহরণ বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের লাখো শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবগত করেন।
তাছাড়া পাথর আহরণ বন্ধ থাকায় দেশের নির্মাণ শিল্পে সংকট সহ পাথর ব্যবসায় সম্পৃক্ত সিলেটের প্রান্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অসহায়ত্বের কথা মন্ত্রীকে অবগত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে বিদ্যমান সংকটের কথা অবগত হয়ে সরকারি নীতিমালার আলোকে পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা সচলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন সাহা, ডাইরেক্টর মাসুদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট তামিম আহমদ, ডাইরেক্টর আতিকুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, সিলেটস্থ কোম্পানীগঞ্জ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হক, বিমানবন্দর থানা স্টোনক্রাশার মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, সালুটিকর পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ, জাফলং স্টোনক্রাশার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন লিপু, বিশিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী হাজী মো. রফিকুল ইসলাম, আজির মিয়া, শাব্বির আহমদ, ইদ্রিস আলী প্রমুখ। সিলেটের কোয়ারিসমূহ থেকে পাথর উত্তোলনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবিকা সচলের দাবিতে পাথর ব্যবসায়ী, শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সভা বুধবার নগরীর একটি হোটেলের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়।
বিমানবন্দর থানা স্টোনক্রাশার পাথর ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এয়ারপোর্ট থানা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নূরুল আমিনের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক আতিকুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্টোনক্রাশার মালিক সমিতির সেক্রেটারি আফতাব আলী কালা মিয়া, বিমানবন্দর থানা স্টোনক্রাশার মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী নাছির উদ্দিন, জাফলং পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রহিম খান ও সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসেন, জাফলং স্টোনক্রাশার মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বক্ত ও সেক্রেটারি ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াদুদ আলম ও সেক্রেটারি সামসু মিয়া, সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি আমির উদ্দিন। সভায় বক্তারা বলেন, যুগ যুগ ধরে সিলেটের কোয়ারিসমূহে পাথর আহরণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করলেও কয়েক বছর ধরে পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের নির্মাণ শিল্পের জন্য অপরিহার্য পর্যাপ্ত পাথর সিলেট কোয়ারিগুলোতে বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও একটি মহল বিদেশ থেকে পাথর আমদানির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করে আসছে। অথচ স্থানীয়ভাবে পাথর আহরণ করে তা নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার করলে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার অপচয় থেকে দেশ রক্ষা পেতো বলে জানান তারা। সৌজন্যে: মানবজমিন
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd