সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:১৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০
স্টাফ রির্পোটার : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা ঐতিহ্যবাহী রাজাগঞ্জ বাজারে একই দোকান কোটা ও ভুমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি জালিয়াত ও প্রতারক চক্র। প্রতারিত লোকজন স্থানীয় ভাবে বিচার সালিশসহ প্রশাসনের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে পাচ্ছেনা সঠিক বিচার। সর্বশেষ গত ১৯/৮/২০২০ ইং তারিখে বিষয়টি নিয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু সেই অভিযোগ গুলো থানায় যাওয়ার পরই গায়েব হয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগও পাওয়া গেছে। প্রতারিতদের সহযোগীতা না করে প্রতারকদের হয়ে কাজ করছে থানার পুলিশ, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কানাইঘাট উপজেলা রাজাগঞ্জ বাজারে জেএল নং-৯১, বিএস খতিয়ান ১৮৭, বিএস দাগ নং-২২৯৩ এর মাত্র ০.৫০ পয়েন্ট ভুমি নিয়ে প্রতারক চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যেমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একই ভাবে প্রায় ১০ জন লোকের কাছে জালিয়াতির মাধ্যেমে এই ০.৫০ পয়েন্ট জমি বিক্রিসহ দলিল করে দিয়েছে প্রতারক চক্র। কিন্তু কাউকেই সেই জমি কিংবা দোকান কোটার দখল সমজিয়ে দেয়নি।
সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার নিজ রাজাগঞ্জ গ্রামের মৃত আব্দুন নুরের ছেলে তাজ উদ্দিন, ও একই এলাকার মইনা গ্রামের আব্দুর রশিদ বেড়াই মিয়ার ছেলে বেলাল আহমদ (ঘাগরা বিলাল), তার ভাই দুলাল আহমদসহ উপজেলা সাবরেজিষ্টারী অফিসের মুহুরী সফিক মিয়াসহ একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র এসব জালিয়াতি ও প্রতারণা করে যাচ্ছে। সর্বশেষ চক্রটি ১০/০৮/২০২০ ইং উক্ত ০.৫০ পয়েন্ট ভুমি ও দুটি দোকান কোটা ৭ লক্ষ টাকা বিক্রি করে রাজাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ও মইনা পাহাড় গ্রামের মৃত বতাই মিয়া সিকদারের ছেলে ছয়ফুল আলমের কাছে। জমি ও দোকানের দাম বাবৎ ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রারী করে দিলেও পরদিন জমি ও দোকান ঘর সমজিয়ে দিতে গেলে বেরিয়ে আসেন প্রায় দশজন মালিক। তারা প্রত্যেকেই উক্ত জমি ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে তাজ, সোনা মিয়া, প্রতারক বিলালের কাছ থেকে খরিদ করার পর, দলিল রেজিষ্ট্রারী করে নিয়েছেন। কিন্তু উক্ত জমি কাউকে সমজিয়ে বা দখল বুঝিয়ে দেয়নি প্রতারক চক্রটি। সুকৌশলের সকলের সাথে সময় কাল ক্ষেপন করে যাচ্ছে। প্রত্যেক দলিল রেজিষ্ট্রারী সম্পাদনের কাজ করেন মুহুরি সফিক মিয়া।
জমি সমজিয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে নিজ নিজ দলিল নিয়ে হাজির হন মইনার পাহাড় গ্রামের মৃত কালা মিয়া ছেলে রফিক মিয়া, তিনি উক্ত জমি ৫/০২/২০১৮ সালে খরিদ করেন ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে তাজ উদ্দিন, সোনা মিয়া ও বিলালের কাছ থেকে। টাকা নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রারী করে দিলেও জমি ও দোকানের দখল পাননি কখনো।
এর কয়েকদিন পরই গোপনে উক্ত জমি আবারোও বিক্রি করে দেয় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কোনাগ্রামের হাজী আহমদ আলীর ছেলে আম্বিয়ার কাছে। কিন্তু তিনিও দোকান ও জমির দখল বুঝে পাননি কখনো।
পরে এই একই জমি আবার চক্রটি বিক্রি করে গাজিপুর গ্রামের মৃত আব্দুন নুরের ছেলে তাহির আলীর কাছে। তিনিও উক্ত জমি খরিদ করেন ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে। একই ভাবে দলিল রেজিষ্ট্রারী করে নিলেও দখল বুঝে পাননি। একই এলাকার ইমাম নামের জনৈক ব্যক্তির কাছে এই জমি ৪র্থ বার বিক্রি করে প্রতারক চক্রটি। এভাবে একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। তবে আশ্চর্য হলে সত্য, উক্ত দাগে কিংবা আশে পাশে প্রতারক চক্রের মালিকানাধিন কোন জমি-জমা নেই বলে জানান স্থানীয়রা। উক্ত চক্রের সদস্যরা গত ২০/০৭/২০২০ ইং তারিখে রাজাগঞ্জ বাজার রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করে নিজ রাজাগঞ্জ গ্রামে মানসিক রোগি ছমাদ আলী উরফে আব্দু সামাদকে, চক্রটি সমাদকে নিয়ে জোরপুর্বক তার বিভিন্ন দাগের প্রায় ২৩.৯০ শতক জমি দলিল রেজিষ্ট্রারী করে নেয়। পরে বিষয়টি ধরা পড়লে তাজ উদ্দিন,সোনা মিয়া, বিলালের বিরুদ্ধে সমাদের স্ত্রী জয়গুণ নেছা জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলে রাস্তায় মানসিক ভারসাম্যহীন সামাদকে প্রতারক চক্র একটি ঘরে আটক করে রাখে, পরে পুলিশ খবর পেয়ে সামাদকে উদ্ধার করলে থানায় এখনো মামলাটি রেকর্ড হয়নি।
উক্ত প্রতারক চক্রের সদস্য বিলালের বিরুদ্ধে রয়েছে স্থানীয় ভাবে একাধিক চাঁদাবাজীসহ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ। সম্প্রতি এই প্রতারক চক্র মইনা গ্রামের মাওলানা ইমরান আহমদের বসত বাড়ির বিদ্যুতিক লাইন কেঠে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে। পরে আবারো চাঁদা দাবী করলে এ বিষয়ে সিলেট জ্যুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রাট ৪র্থ আদালতে একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইমরান আহমদ। যাহার নং ১২৪/২০ইং। কিন্তু মামলা করার পর প্রতারক চক্র তাকে নানা রকম হুমকি-ধামকি দিচ্ছে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য। তিনি বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে গত ১৯/০৮/২০ ইং তারিখে সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd