ভাস্কর্য বিতর্ক: শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে পাঁচ প্রস্তাবনা

প্রকাশিত: ৫:৪১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২০

ভাস্কর্য বিতর্ক: শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে পাঁচ প্রস্তাবনা

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ভাস্কর্য নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। কওমি মাদ্রাসাগুলোর সম্মিলিত বোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়া লিলজামিয়াতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চলমান ইস্যু নিয়ে ডাকা বৈঠকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ শীর্ষ আলেম যোগ দেন। দীর্ঘ আলোচনার পর তারা পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। তাদের প্রস্তাবনাগুলো হলো:

প্রস্তাবনা-১: মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য যেকোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।

প্রস্তাবনা-২: আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, বিষোদগার, ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।

প্রস্তাবনা-৩: বিগত সময়ে দ্বীনি আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দান ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারা দেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মপ্রাণ‍ মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।

প্রস্তাবনা-৪: সম্প্রতি শব্দদূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দ্বীনি মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ সাধারণ শব্দদূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে শব্দদূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব, জনগণকে কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনি মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।

প্রস্তাবনা-৫: যে সকল বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সে সব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণির মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানিও দিচ্ছে। এসবের খোঁজখবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য, উগ্র স্লোগান, মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে।

ওলামায়ে কেরাম কঠোর ধৈর্য সংযম অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্ভুত বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম, দ্বীন ও বাংলাদেশবিরোধী দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ রোধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।

আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী (খিলগাঁও); মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর) , আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী (সিলেট), মুফতী মনসুরুল হক (রহমানিয়া); মুফতী মুবারকুল্লাহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মুফতী রুহুল আমীন (গোপলাগঞ্জ), মুফতী রশিদুর রহমান ফারুক (পীর সাহেব বরুণা. মৌলভীবাজার); আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ); মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী (কামরাঙ্গীরচর), মুফতী জাফর আহমদ (পীর ঢালকানগর); মুফতী আরশাদ রাহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা মাহফুজুল হক (বেফাক মহাসচিব); মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী (বড় কাটারা); মুফতী ফয়জুল করিম (শায়খে চরমোনাই), মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক (যুগ্ম মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম); মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু (সিলেট), মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া (আরজাবাদ); মাওলানা আবু তাহের নদবী (পটিয়া); মাওলানা নাজমুল হাসান (বারিধারা); মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ (ঢাকা); মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদবী (আলেম-সাংবাদিক); মুফতী মুহাম্মদ আলী (আফতাবনগর); মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী (উত্তরা); মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী; মুফতী আবুল খায়ের বিক্রমপুরী, (কেরানীগঞ্জ), মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ গাজী প্রমুখ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..