সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক :: অবশেষে পাওয়া গেছে মুন্নীর আসল পরিচয়। তার পূরো নাম মরিয়ম আকতার মুন্নী। অনুমান ২৯ বছর বয়েসী মুন্নী সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ হাতিমবাগের জাকির হোসেনের মেয়ে। মুন্নী নিজেকে নগরীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফিজা এন্ড কো’র মালিক ও একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক মোঃ নজরুল ইসলাম বাবুলের পুত্র আজহারুল ইসলাম মোমিনের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকে। গত ১৪ নভেম্বর ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সিলেটের বহুবিধ ও রকমফের রোমান্টিকতার নায়িকা সেই মুন্নী। ধরা পড়ালএকটি অপহরণ-ধর্ষণ মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। এর আগে ধরা পড়ে তার ধর্ষক ভাই রাব্বীও। এই দুই মামলায় মুন্নীকে পাঠানো হয় শ্রীঘরে।
পরবর্তী তার জামিন হয়েছে কি না জানা যায়নি। কথিত আছে এই মুন্নী হলো সিলেটের আলোচিত সেই তিন্নী-মুন্নী জুটির এক প্রেয়সী।
এক সময় সিলেটের লন্ডনি যুবকদের কাছে তাদের পরিচিতি ছিল ব্যাপক। টাকাওয়ালা পরিবারের দিকে থাকতো চোখ। টাকার সেই চোখ এখনো বদলায়নি তার। তাই অপরাধ জগৎ থেকে ফিরতে পারেনি মুন্নী। এ কারণে এবার ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা,মুন্নীর সঙ্গে সিলেটের ইয়াবা নেটওয়ার্কের রয়েছে গভীর ও গোপন সম্পর্ক । ইয়াবা বেচা-বিক্রিতে তার নেতৃত্বে থাকতে পারে একটি চক্রও।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইং-এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মুন্নী আটকের কথা স্বীকার করা হয়। অটকের পরদিনই তার কথিত স্বামী চম্পট দেয় যুক্তরাষ্ট্রে। একাধিক বিয়ে, পরপুরুষকে নিয়ে রোমান্সসহ নানা ঘটনায় সিলেটে বহুল আলোচিত এই মুন্নী।
নিজ এলাকাসহ নগরীর কয়েকটি বাসায় রয়েছে মরিয়ম আক্তার মুন্নীর যাতায়াত। একেক সময় সে একেক বাসায় বসবাস করে। কখনো গোপনে, কখনো আবার প্রকাশ্যে তার বসবাস।
এসএমপি’র মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়- ১৪ নভেম্বর সকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল জানতে পারে নগরীর সোনারপাড়া ঊর্মি ৪৭/২ বাসায় অবস্থান করছে মুন্নী। এই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে মুন্নীকে ইয়াবাসহ করে। তখন মুন্নী শাহপরান থানার একটি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি ছিল।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মুন্নী শশুরালয়ে না থেকৈ সোনারপাড়া ওই বাসায় আশ্রিতা হিসেবে বসবাস করতো। এবং সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ইয়াবা পাইকারি দরে এনে বিক্রি ও সেবন করতো। ওই বাসায় ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের একটি আস্তানাও গড়ে তুলেছিল সে। এর আগেও সে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। গ্রেপ্তারের পর মুন্নীকে সিলেটের শাহপরান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। সিলেটের শাহপরান থানার ওসি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানান, গত ৩ অক্টোবর শাহপরান থানায় দায়ের করা একটি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় মুন্নী ও তার ভাই রাব্বীকে এজাহারভুক্ত আসামী করা হয়। মামলার পর তার ভাই রাব্বী তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও মুন্নী পলাতক ছিল। মুন্নীকে গ্রেপ্তারের পর ওই আপহরণ-ধর্ষণ মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। মুন্নীর বিরুদ্ধে মাদক বিক্রিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান ওসি।
পুলিশ জানায়, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর মুন্নীর ভাই রাব্বী তালুকদার একই এলাকায় বসবাস করা এক কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে নিয়ে যায় ঢাকার মানিকগঞ্জে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মা শাহপরান থানায় এজাহার দাখিল করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তখন এজাহারটিকে তদন্ত পর্যায়ে রেখেছিল। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে বড় বোন মুন্নীর সোনারপাড়াস্থ বাসায় অপহৃতা ওই কিশোরীকে নিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো রাব্বী । পরে স্থানীয় মুরুব্বিরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। মুন্নীও তাতে সায় দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে মুরুব্বিদের রায় মানেনি মুন্নী। উল্টো পুলিশ দিয়ে সবাইকে শায়েস্তা করার হুমকি দেয় বলে এলাকার লোকজন জানান। পরে এলাকাবাসীর পরামর্শে ১ অক্টোবর কিশোরীর মা ওসি আব্দুল কাইয়ূমের শরণাপন্ন হন। পরে শাহপরান থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই দিন রাতেই মুন্নীর বাসা থেকে অপহৃতা কিশোরীকে উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করে প্রধান আসামি রাব্বী তালুকদারকে। ওই সময় সটকে পড়ে মুন্নী। তাকে খোঁজে পাঅয়নি পুলিশ। তখন এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাহপরাণ থানায় একটি মামলা হয়। তখন আটক রাব্বী তালুকদার ওই অপহরণ ও ধর্ষণের এই মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হলে পলাতক থাকে মুন্নী।
অপহরণ-ধর্ষণ ও মামলার এক মাস পর মুন্নী ইয়াবাসহ সিলেটে ফের অবস্থান তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুন্নী গ্রেফতারে পরই আমেরিকায় পাড়ি জমায় তার কথিত স্বামী ও ফিজা’র বাবুলের প্ত্র আজহারুল ইসলাম মোমিন। সম্ভাব্য গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যায় সে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd