সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় এবং স্বামী ও পিতার দ্বন্দ্বে গত ১২ দিন ধরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে এক কিশোরীর লাশ। কিশোরীর নাম লাকিং মে ওরফে হালিমাতুস সাদিয়া।
কে পাবে কিশোরী লাকিং মের মরদেহ! কোন ধর্মে সমাহিত হবে সে! এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। শেষপর্যন্ত আদালত র্যাদবকে দায়িত্ব দিয়েছে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য।
গত ১০ ডিসেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুমূর্ষু লাকিং মেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে তাকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার স্বামী আতাউল্লাহ। হাসপাতালে তার বিষপানের আলামত দেখে চিকিৎসকরা তার পাকস্থলী পরিষ্কার করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরে তার লাশ হস্তান্তরে দেখা দেয় জটিলতা। কারণ লাকিং মের পিতা লালা অং ও স্বামী আতাউল্লাহ পৃথকভাবে লাশ দাবি করছেন। যে কারণে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাউকে মরদেহ দেয়নি। তারা সিদ্ধান্তের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আবদুল হালিম জানান, গত ১০ ডিসেম্বর সদর হাসপাতাল থেকে অপমৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ লাশ গ্রহণ করে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। এ সময় স্বামী আতাউল্লাহ ও পিতা লালা অং লাশের দাবি করায় পুলিশ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত কাকে লাশ হস্তান্তর করবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় লাশটি পুলিশি হেফাজতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
পিতার দাবি গত ৫ জানুয়ারি তার কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শীলখালী চাকমাপাড়া থেকে। এ সময় থানায় অপহরণের মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে কক্সবাজার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ মামলা করেছিলেন তিনি। সেই মামলার সঠিক তদন্ত না হওয়ায় মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ এ করুণ পরিণতি হয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি।
পিতার দাবি তার অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের লাশ হলেও ফিরে পেতে চান এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় বিধানমতে সৎকার করতে চান।
লাকিং মের পিতা লালা অং বলেন, আমি সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। এসে শুনি একটি সিএনজিতে করে আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে। সব জায়গায় ঘুরেছি কোথাও আমার মেয়ে পাইনি। এখন লাশ পাওয়া গেছে, আমি আমার মেয়ের লাশ চাই।
এদিকে লাকিং মের স্বামী আতাউল্লাহ দাবি করেন, গত ২১ জানুয়ারি কুমিল্লায় লাকিং মে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হালিমাতুস সাদিয়া নাম ধারণ করে। ওই দিনই এফিডেভিট মূলে তারা বিবাহ সম্পন্ন করেন। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। যার বয়স এক মাসের কাছাকাছি। গত ৯ ডিসেম্বর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের আগে লাকিং মের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। তাতেই অভিমান করে কীটনাশক পান করে সে। তার স্ত্রীর ইসলাম ধর্মমতে দাফন করতে চান তিনি।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ উল্লাহ জানান, ৫-৬ মাস আগে আতাউল্লাহ চাকমা মেয়েটিকে নিয়ে বাড়িতে আসেন এবং সংসার করে যাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন বিষপানের খবরে তিনি সেখানে যান। গিয়ে শুনেন বিষপানে সে মারা গেছে।
লাকিং মের পিতার নিয়োগকৃত আইনজীবী মো. মহিউদ্দিন জানান, যেহেতু সে অপ্রাপ্তবয়স্কা ছিল, সেহেতু তার ধর্মান্তরিত কিংবা বিয়ে করার মতো নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো আইনি অধিকার সৃষ্টি হয়নি। ফলে তার পিতাই মেয়ের লাশের দাবিদার। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পিতাকে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্জুন চৌধুরী জানান, তিনি গত শনিবার মামলাটি হাতে পেয়েছেন এবং তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। আইনানুযায়ী তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার সৎকার করা হবে বলে জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd