সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। এদের মধ্যে ৩ জন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করছেন। ঢাকায় বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মামলায় একজন প্রধান আসামি হয়েছেন।
আরও ৫ জন রয়েছেন যারা প্রকাশ্যে ডাহুক দিয়ে ভূরিভোজ করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অপরাধ করেছেন। এসব নিয়ে সিলেটে সমালোচনার ঝড় বইছে। অথচ এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীর জবাব অনেকটা দায়সারা।
জানা যায়, বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি ও অনুসরণীয় আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে ২০১১ সালের ১৯ জুন একটি পরিপত্র জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। যার ৭(খ)-তে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়: পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার এবং পৌরসভার মেয়রদের বিদেশ ভ্রমণে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী অনুমোদন দেবেন। কিন্তু সিসিকের তিন কাউন্সিলর এই পরিপত্র ভঙ্গ করে বিদেশ সফর করছেন।
সিসিকের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী ১৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ত্রিশ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি ১৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠান সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর অনুমতি এখনও পৌঁছায়নি সিসিকে। অনুমতি না পৌঁছালেও ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি এবং ৩০ দিনের ছুটি চেয়ে ৬৫ দিন পর ৩১ আগস্ট দেশে ফেরেন। একই অবস্থা সিসিকের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছয়ফুল আমিন বাকেরের ক্ষেত্রেও। ৫ জুলাই ৬০ দিনের ছুটি চেয়ে করা তার আবেদন ৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও এখনও অনুমতিপত্র আসেনি।
তাবে তিনি এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। সর্বশেষ ৬ অক্টোবর ত্রিশ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন সিসিকের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। তার আবেদনটিও ১৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত সেই অনুমতি সিসিকে পৌঁছায়নি। কিন্তু ২৪ নভেম্বর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। এখনও দেশে ফেরেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী বলেন, কিছু করার ছিল না। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ জরুরি ছিল, তাই অনুমতির অপেক্ষা করার সুযোগ ছিল না। এটা আইন পরিপন্থী কি না-জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি। আর কাউন্সিলর ছয়ফুল আমিন বাকের বলেন, ৪৫ দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম।
২ মাসের ছুটির আবেদন দিয়েছিলাম। মঞ্জুর হয়েছে কি না, তা জানি না। কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এখনও যুক্তরাজ্যে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সিসিকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কিছু পাইনি।
এদিকে ১১ ডিসেম্বর রাতে সিসিকের পাঁচ কাউন্সিলর জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের একটি রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে বন্যপাখির গোশত খেয়ে তা ভিডিও-স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এরপরই ছবিগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে সমালোচনার মুখে পড়েন সিসিকের ওই পাঁচ কাউন্সিলর। গোশত খাওয়ায় অংশ নেন সিসিকের প্যানেল মেয়র ও ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান, ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদ ও ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজের সঙ্গে পারভেজ মাহমুদ অপু নামে সিলেটের এক ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রায়হান আহমদ।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, কোনো পাখির গোশত ক্রয়-বিক্রয়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনের তফসিল অনুযায়ী, দেশের স্থানীয় বন্যপাখি ধলাবুক ডাহুক নিষিদ্ধের তালিকার অন্তর্ভুক্ত। ভিডিওতে পাখি খাওয়ার দৃশ্য পরিষ্কার দেখা গেলেও পাঁচ কাউন্সিলর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাইলে দু’জন হাঁসের মাংস, একজন রাজহাঁসের মাংস, একজন খাসির মাংস, একজন মাছ এবং আরেকজন মুরগির মাংস খাওয়ার কথা জানান।
আর কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ জানিয়েছেন, তারা হরিপুরের একটি রেস্টুরেন্টে খেয়েছেন এবং সেখানে পাখি বিক্রি হতে দেখেছেন। তবে পাখির গোশত তারা খাননি।
বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করি। হরিপুরে পাখি বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি, তাদের অবশ্যই আইন মেনে চলা উচিত। আইন অমান্য করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সিসিকের ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বর্তমানে ঢাকায় জেলহাজতে রয়েছেন। ১৯ ডিসেম্বর আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় অরাজকতাসহ কেন্দ্রে ভাংচুর করে সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করাসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগে মোট ৩টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট থানা।
রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম বলেন, বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা চলাকালে হামলা, অরাজকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তারেক উদ্দিন তাজকে একটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ঘটনার আরও দুই মামলায়ও তিনি আসামি। তবে তাকে এখনও রিমান্ডে নেয়া হয়নি। রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। শিগগির এসব মামলার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, কে বিদেশে আর কে ছুটিতে বা কে গ্রেফতার অফিশিয়ালি এরকম কিছু জানি না। তিনজন কাউন্সিলর আমার মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার জন্য ছুটির আবেদন করেছিলেন। এরপর কী হল জানি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের প্রধান মেয়র। ওনার সঙ্গে কথা বলে এসব ব্যাপারে করণীয় ঠিক করব।
এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সোমবার বলেন, কাল (মঙ্গলবার) অফিসে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাব। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র-যুগান্তর
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd