সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
সুবাস দাস, গোয়াইনঘাট :: নিজেদের অবৈধ ফাঁয়দা হাসিল করতে না পেরে সিলেট জেলার শ্রেষ্ট ওসি আব্দুল আহাদের একটি মিথ্যা অভিযোগ আদালতে দাখিল করে বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ করছেন জাফলংয়ের নয়বস্তি গ্রামের বাসিন্দা ইনছান আলী। তার এই সাজানো অভিযোগ ও মিথ্যা অপপ্রচারের গুজবে কান দিয়ে ওসি আহাদ’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে এমনটাই মনে করছেন গোয়াইনঘাটের প্রতিবাদী জনতা। ওসি আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় বয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ওসির বিরুদ্ধে আদালতে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে উপজেলার ৬ নম্বর ফতেহপুর ইউনিয়নে আমরা ফতেহপুরবাসীর আহ্বায়ক সাংবাদিক মো. ইসলাম আলীর উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে সাংবাদিক মো. ইসলাম আলী বলেন, গোয়াইনঘাটের ইতিহাসে এমন একজন সৎ অর্দশবান যোগদান করতে দেখা যাায়নি। জাফলংয়ের সন্ত্রাসী ও শীর্ষ চাঁদাবাজ আলীম উদ্দিনের পিতার একটি সাজানো অভিযোগ ও মিথ্যা অপপ্রচারের গুজবে কান দিয়ে ওসি আহাদ’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। যদি এই মিথ্যা অভিযোগে ওসির বিরুদ্ধে কোন ধরণের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে গোয়াইনঘাটে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাবে। এরপর থেকে কোন অপরাধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেই ওসিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে তাদের কেউ ফিরাতে পারবে না। গোয়াইনঘাটে প্রভাবশালী অপরাধীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। অন্যান্য ওসিদের মতো আলীম উদ্দিনের সাথে হাত মিলালেই ওসি আহাদের আর কোন দোষ থাকবে না। ওসি আহাদের দোষ একটাই তিনি অপরাধীদের কাছে মাথা নতো করেন না।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের সীমান্তবর্তী থানাগুলো বার বার ঘুরে ফিরে কয়েকটি ইস্যুতে আলোচনায় আসছে। কখনোবা বালু-পাথর, কখনোবা চোরাচালান কিংবা অস্ত্রের চালান, মাদকের চালান এসব ইস্যুতে মাঝেমধ্যে নানা ঘটনা ও আলোচনার জন্মদেয় সীমান্তবর্তী থানার অফিসার ইনচার্জরা। যদিও এসব ইস্যু তাদের ধর্তব্য দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা। এসব ইস্যুর বিস্ফোরণ মোকাবেলায় বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরই যতেষ্ট। কিন্তু সবকিছুর পর পুলিশই এসব ইস্যুতে কখনো একিভূত হয় বা করানো হয়। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে।
দু’দিন আগেও একটি মামলা নিয়ে লেখালেখি হয়। হয়তোবা ভবিষ্যতেও আরও হবে। সীমান্তের পাঁচটি থানার মধ্যে কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ রয়েছে। এসব থানা এলাকায় চোরাচালান ও বালু-পাথর নিয়ে প্রায়ই মামলা মোকাদ্দমা, হত্যাকান্ড ও অপ্রীতিকর ঘটনা লেগেই থাকে। অধিকাংশ ঘটনায় পাথর খেকো, ভূমি খেকো বা চোরা কারবারিরা মামলার আসামী হয় কিন্তু একটি ক্ষেত্রে ঘটেছে ব্যত্যয়।একটি সাজানো নাটকে যদি অভিযুক্ত বা আসামী হয় খোদ ওসি তখন বিষয়টি কেমন দেখায় ? মিথ্যে নাটক দিয়ে কিছুদিন পর পরপর টিভি চ্যানেলের স্ক্রোলে কিংবা পত্রিকার ফ্রন্টলাইনে তাজা খবর প্রকাশ করে একশ্রেণীর অতিউৎসাহী গণমাধ্যমকর্মী। শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বস্থরে মানুষের মাঝে নানা জল্পনাকল্পনা। বলছিলাম গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদ’র কথা। সিলেটের অন্যান্য অফিসারদের পাশ কাটিয়ে-ওসি আহাদকে নিয়ে কেন বার বার অভিযুক্ত করা হচ্ছে ! উত্তরটা হয়তো- চারভাবে দেওয়া যায়।
১. হয়তো তিনি দোষী বা চরম খারাপ লোক। ২. অথবা কোনো গোষ্টি তাকে সহ্য করতে পারছে না। ৩. স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দুটি পক্ষ পরষ্পরবিরোধী হয়ে ওসিকে ভিকটিম বানাচ্ছে। ৪. না হয় কোন পক্ষ তার নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ওসির বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক নাটক মঞ্চায়ন করে। আর এটিকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু লোক ফায়দা লুটতে চায়।বলাবাহুল্য যে, ২০১৯সালে অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদ কানাইঘাটে কর্মকালীন সময়ে থাকাবস্থায় তিনিসহ ৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন খ্যাতিমান একজন আইনজীবী। ঐসময় তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে ৪৫০কোটি টাকা ভারতে পাচার ও সাড়ে ৪কোটি টাকা ঘুষ আদায়ের মাধ্যমে ভারতীয় চোরাই ও চোরাচালানের গবাদি পশুর হাট বসিয়ে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে যাহা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।
সর্বশেষ ওসি আব্দুল আহাদসহ ৯জনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৪ফেব্রুয়ারি জাফলং নয়াবস্তির গ্রামের বাসিন্দা ইনছান আলী আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।দায়েরকৃত অভিযোগের বাদি জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা ইনছান আলী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, মৌরসী জায়গায় অন্যান্য আসামীদের পাথর তুলতে দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক ফায়দা হাসিল করেছেন ওসি আহাদ। এক্ষেত্রে তিনি নিষেধ করলে তার উপর বল প্রয়োগ করা হয়। এমনকি অন্যান্য সরকারি খাস জায়গা থেকে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আসামীদের পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
তার এ অভিযোগের সত্যতা বা মিথ্যার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ বেরিয়ে আসবে বলে সচেতন মহলের দাবী। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের কর্মকান্ড নিয়ে, জাফলং নয়াবস্তির যুবক সালামকে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কে হত্যা করলো ? কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে কে ধর্ষণ করলো ? ধর্ষক গ্রেফতারের জন্যে জাফলংয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কে হুংকার দিলো ? ধর্ষণ ছাড়াও ৭বছর ধরে জাফলংয়ে অবাধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং লুটপাটের রামরাজত্ব কে করলো ? রাতের আধাঁরে নয়াবস্তি, কান্দুবস্থি, চা-বাগান থেকে পাথর উত্তোলনকালে মাটি চাপায় শ্রমিক নিহতের লাশ কে গুম করলো ? এসব নাটকের মূলহোতা যদি হয় বাদী (ইনছান আলী)’র ছেলে আলীম উদ্দিন তখন করনীয় কি ? পেছনে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক কাহিনির বাদী ইনছান আলী নিজ পুত্রকে রক্ষায় সৃষ্ট নাটকের মূলভূমিকায় ফেঁসে গেলেন ওসি আহাদ।এদিকে ওসি আহাদকে নিয়ে চলমান সময়ের সৃষ্ট অভিযোগে জাফলংয়ে আলিম উদ্দিনের রাজত্বে বাধা না নাকি অন্য কারণে ওসিকে অভিযোক্ত করা হয়েছে সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মামলার একাধিক স্বাক্ষী তলের বিড়াল বের করে বলেছেন – তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ওসি আহাদ আসলেই কি একাধিক বারের শ্রেষ্ঠ ওসি হওয়ার যোগ্য ! না কি অভিযুক্ত তা খোঁজতে হবে খবরের পেছনের খবরে। খোজঁতে হবে দুটি অভিযোগের মধ্যে কোনো যোগসুত্র আছে কি না ? বার বার ওসি আহাদ কেন টার্গেট হবেন কি এমন অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে-এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে নিবৃত্ত চিত্তে।
এ বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগকারী জাফলয়ের ইনছান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওসি আমার ছেলেকে নয় মাসে নয়টি মামলা দিয়েছেন। কেন আপনার ছেলেকে মামলা দিয়েছেন এবং বাদিকে পুলিশ না পাবলিক? উত্তরে তিনি বলেন সকল মামলার বাদি পাবলিক। ওসি মামলা না নিলে তো পারতেন। এমনকি আমার জমি থেকে পাথর উত্তোলন হচ্ছে ওসি বাধা দিচ্ছেন না। আপনে কি কোন মামলা করছেন? এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে তিনি মোবাইল বন্ধ করে দেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd