সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২১
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষি জমি থেকে অবাধে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। আইন প্রয়োগকারী সদস্যকে ম্যানেজ করে স্থানীয় কতিপয় মাটি ব্যবসায়ীরা দিন রাত বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছে ফসলী জমি নষ্টের মত পরিবেশ বিধ্বংসী অপকর্ম। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
এই মাটি খেকো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় , সিলেট জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে গত ৩০ ডিসেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ছালিক মিয়া। অভিযোগে তিনি সব ব্রীক ফিল্ডের নাম, মালিকের নাম এবং কতিপয় মাটি ব্যবসায়ীদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন যে, গোয়াইনঘাট ও সালুটিকরের কমপক্ষে ১০/১২টি ইট ভাটার জন্যে ২০ জনেরও বেশি স্বার্থান্বেষী মাটি ব্যবসায়ী। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাজার হাজার একর কৃষি চাষাবাদের ফসলী জমি ও খাস ভুমি থেকে অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে। এ ছাড়া সালুটিকর কলেজ, পিয়াইনগুল হাইস্কুল, পিয়াইনগুল জামেয়া সহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয এবং জন বসতি কয়েকটি গ্রাম। অথচ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোন জনবসতি স্থানে ইট ভাটা গড়ে উঠতে পারবে না বলে পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে।
এ সব ইট ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোয়া জনস্বাস্থ্যের জন্যে হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে। পাশা পাশি, এ সব ইট ভাটার জন্যে চলছে গোঠা এলাকা জুড়ে অবাধে মাটি কাটা। কৃষি চাষাবাদের ফসলী জমি গুলো রক্ষা পাচ্ছে না দূর্বৃত্তদের হাত থেকে। টাকার লোভে এলাকার শত শত কৃষি জমি নষ্ট করতে মোটেও দ্বিধা করছে না মাটি ব্যবসায়ী কতিপয় । এস্কেভেটর মিশিন দিয়ে দিন রাত বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছে কৃষি জমি নষ্টের মহোৎসব।
কিন্তু আইনের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে এবং জনকল্যাণের বিষয় চিন্তা না করে এ সব স্থানে এত ইট ভাটা কিভাবে গড় উঠেছে? এই প্রশ্ন সচেতন মহলের। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে ও কৃষি জমি রক্ষার প্রয়োজনে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাটি ব্যবসায়ী আপ্তাব আলী মেম্বার, আমির উদ্দীন, আশরাফ হোসেন বিলাল, সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ইব্রাহিম আবদুল ওয়াহিদসহ একটি প্রভাবশালী মাটি খেকো চক্র। তারা স্থানীয় সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যদের ম্যানেজ করে এ সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই খালেদ প্রতি শুক্রবার মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন।
স্থানীয়রা জানান, মাটি ব্যবসায়ীরা যেখানে মাটি কাটছেন শুধু যে ঐ জায়গাটা নষ্ট হচ্ছে তা নয়, বরং চারপাশের ফসলি জমির মাটি ধসে পড়ে ক্ষেতের অনুপযোগী হয়ে উঠছে মূল্যহীন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার জায়গা। অনেক ভূমি মালিকরা অভিযোগ করলেও কেউ তাদের পাত্তা দিচ্ছে না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে অবাধে মাটি কাটার কাজ। মাটি ব্যবসায়ীরা শুধু আইনের সদস্যদের নয়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের লোক বুঝে বুঝে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখছেন।
দুই একজন সচেতন মহল জোড়ো হয়ে কথা বললে তাদেরকে উল্টো বুঝানো হয়, মাটি কাটার মাধ্যমে কিছু মানুষ যে কাজ করে খেতে পারছে এইটা বড় কথা, বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না।
অনেকে এটাকে ক্ষতির কারণ মনে করলেও বাড়তি একটা সমস্যা মনে করে অনর্থক সমস্যায় নিজেকে জড়াতে চান না।তোয়াকুল ইউনিয়নের একজন সহকারী শিক্ষক জানান মাটি ব্যবসায়ীদের একটি সংঘবদ্ধ দলে পরিণত হয়েছে। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাত করে তাদের ছত্রছায়ায় চলে বিধায় তাদের সাথে কথা বলে পারা যায় না। তিনি বলেন মাঠি ব্যবসায়ীরা তাদের রাখা জমি কাটার পাশাপাশি অন্যের জমির মাটিও কেটে নেয়, তাতে অনেক সময় বাকবিতণ্ডা বাজে। সর্বশেষ স্থানীয় ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়। এমন কি? কেউ মাটি বিক্রি করতে না চাইলে তাকে বড় অঙ্কের টাকার লোভ দেখানো হয়।
অভিযোগে প্রকাশ মাটি কাটার গাড়ি আনার সময় এলজিইডি সড়কের সকল বিটুমিন রাস্তার উপর দিয়ে এস্কেভেটর মাটির ড্রাম ট্রাক দিয়ে যত্রতত্র রাস্তার সোল্ডার নষ্ট করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নন্দিরগাঁও ইউনিয়ন সালুটিকর ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, স্থানীয় সবাইকে অবৈধভাবে মাটি না কাটার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ও জানিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি এ কে নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নে কামাদিয়ায় অভিযান করেছেন, শীগ্রই তোয়াকুল ও নন্দীরগাও ইউনিয়নে অভিযান চালাবেন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আইসির সাথে মুঠো ফনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এসআই খালেদ মাটি কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঠিকই তবে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd