সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৪৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : যৌতুকের জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জেলা কালচারাল অফিসার খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে স্বামী মো. দেলোয়ার হোসেন মিজান। শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে এমন অভিযোগ করে মামলা করেছেন রেদওয়ানার ছোট ভাই খন্দকার মো. আরশাদুল আবিদ।
ওই দিন বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালের দোতলার ১১ নম্বর কেবিনে রেদওয়ানা ইসলামকে বালিশ চাপা ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মো. দেলোয়ার হোসেন মিজান পালিয়ে যান দাবি করেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন মিজান পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর চার ভাঙ্গারিয়া গ্রামের মো. এলাহী মোল্লার ছেলে। তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ভোলা সদরের মহাজনপট্টি শাখায় কর্মরত। অন্যদিকে নিহত রেদওয়ানা ইসলাম রংপুর সদর থানার ইসলামপুর হনুমানতলার মৃত খন্দকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
নিহতের ছোট বোন খন্দকার ফাদওয়ানা ইসলাম ও ছোট ভাই খন্দকার আরশাদুল আবিদ জানান, ২০০৪ সালে প্রথম বিয়ে করেন দেলোয়ার হোসেন মিজান। তার আরনাফ নামে ১২ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক টাঙ্গাইল শাখায় কর্মরত থাকাবস্থায় ২০১৯ সালের ১৮ মে রেদওয়ানা ও দেলোয়ার নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেন। এটা ছিল উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের কিছুদিন যেতেই দেলোয়ারের আসল চেহার ফুটে ওঠে। তিনি বিভিন্ন অজুহাতে রেদওয়ানার কাছে টাকা দাবি করতেন।
চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে চলতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। একাধিকবার হত্যার হুমকি ও চেষ্টাও করা হয় রেদওয়ানকে। বিয়ের দুই বছরে রেদওয়ানার কাছ থেকে দেলোয়ার ১৫ লাখ টাকা নিলেও সম্প্রতি আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকার জন্য দেলোয়ার একটি খালি চেকে রেদওয়ানার স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। এর মধ্যে রেদওয়ানা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। সেটা দেলোয়ার মানতে পারেননি। রেদওয়ানার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টাও করেন দেলোয়ার হোসেন মিজান।
গত সোমবার (২২ মার্চ) সকালে প্রসবব্যথা নিয়ে রেদওয়ানা ইসলাম কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিন সকাল ১০টায় সিজার অপারেশনের মাধ্যমে মেয়ে শিশুর জন্ম দেন তিনি। শুক্রবার (২৬ মার্চ) হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তবে মেয়ে অসুস্থ থাকায় তিনি ছুটি না নিয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ১১ নম্বর কেবিনে থেকে যান।
শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে হাসপাতালে স্বামী আসায় শিশুটিকে মায়ের বুকের দুধ খাইয়ে রেদওয়ানার মামি খোদেজা ও মর্জিনা তিনতলায় নিয়ে যান। সাড়ে ৩টার দিকে বাচ্চাকে পুনরায় দুধ খাওয়ানের জন্য খোদেজা বেগম ফিরে এসে কেবিনের দরজার তালা আটকানো দেখেন। ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কেউ দরজা না খোলায় কর্তব্যরত সেবিকাকে তিনি বিষয়টি জানান। পরে অতিরিক্ত চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে মরদেহ দেখতে পান।
এদিকে রেদওয়ানার ছয়দিন বয়সের কন্যাসন্তানটি শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। শিশুটির অবস্থা ভালো বলে কুমুদিনী হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে রোববার বাদ জোহর টাঙ্গাইল শিল্পকলা একাডেমিতে রেদওয়ানার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতে দাফন করা হবে বলে তার ছোট ভাই আরশাদুল আবিদ জানিয়েছেন।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ভোলা মহাজনপট্টি সদর শাখার ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন মিজান গত বছর মার্চ মাসে টাঙ্গাইল সদর শাখা থেকে এ শাখায় যোগদান করেন। তার পারিবারিক ঝামেলা ছিল বলে আমাদের জানিয়েছিলেন। স্ত্রীর ডেলিভারির কথা বলে সোমবার (২২ মার্চ) তিনদিনের ছুটি নিয়ে মির্জাপুরে যান। কর্মস্থলে যোগদানের জন্য তার ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান খান বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। আসামি মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল হক মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন মিজানকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd