সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীর বাগবাড়ির প্রতিবন্ধী ২ বোন চামেলী রানী কপালী ও লাভলী রানী কপালী বাড়ি আত্মসাতের চেষ্টার সত্যতা মিলেছে। আপন বড় ভাই মনোজ কুমার কপালী ও তার স্ত্রী শিলি রানী কপালীর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি ওঠে এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্যাতিত দু’বোনের আবেদনের তদন্ত শেষে নগর বিশেষ শাখা প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোজ কপালীকে অত্যাচারী অপরাধী ও নেশাখোর উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত ২৩ জুন সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে প্রতিবন্ধী চামেলী ও লাভলী। আবেদনের পর তা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর বিশেষ শাখা।
আবেদনে মাদকাসক্ত ভাইয়ের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান প্রতিবন্ধী দুই বোন চামেলী রানী কপালি (৪১) ও লাভলী রানী কপালি (৪০)। তারা সিলেট নগরীর কোতয়ালী থানার উত্তর বাগবাড়ির প্রমুক্ত একতা-৩৩১ নাম্বার বাড়ির মৃত স্কুল শিক্ষক হরিদাস কপালীর মেয়ে। তারা আরো উল্লেখ করেন- স্কুলশিক্ষক বাবা বেঁচে থাকতে মা, বড় ভাই ও আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধী দুই বোনসহ খুব সুখেই চলছিল পরিবার। এরই মধ্যে তাদের বড় ভাই মনোজ কপালি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিদিন মাদকের টাকার জন্য পরিবারের উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এরইমধ্যে পিতা হরিদাস কপালিও মারা যান। বাবার মৃত্যুর কিছুদিন যেতে না যেতেই নেশার টাকার জন্য আমাদের দুই প্রতিবন্ধী বোন ও মায়ের উপর অমানসিক নির্যাতন চালাতে শুরু করে ভাই মনোজ কপালি। এই শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়াসহ বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল বাড়িটি রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে ছোট বোন লাভলী রানী কপালি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমাদের উপর নেমে আসে অন্ধকার। আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ভাগভাটোয়ারা হওয়ার পর আমরা দুই বোন একটি বাড়ি পাই। এই বাড়ির একটি কক্ষে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোনোরকমে থাকি আর বাড়ির অন্যান্য কক্ষগুলো ভাড়া দিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসারের খরচ চলে। সচ্ছলভাবে না হলেও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোনোরকম আমরা দিনাতিপাত করছি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরিত নগর বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান উল্লেখ করেন, ২০০৫ সালে চামেলী ও লাভলীর প্রতিবন্ধীতার কথা চিন্তা করে তাদের পিতা ২ মেয়ের নামে ৫.৪৪ শতাংশ ভূমি লিখে দেন। এ সংবাদ পেয়ে ভাই মনোজ কপালী জোরজবরদস্তি করে লিখে দেওয়া ভূমি ফিরিয়ে নেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষক হরিদাস কপালী স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩/৪ বছর বিছানায় ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পিতার মৃত্যুর পর এলাকাবাসী শালিস বৈঠক করে দেওয়া বাড়িতে মাকে নিয়ে ২ প্রতিবন্ধী বোন বসবাস করে আসছেন। ঘর ভাড়া, দোকান ভাড়া ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কোনোমতে চলে যাচ্ছে তাদের জীবন। কিন্তু বাড়িটি আত্মসাতের লক্ষে বড় ভাই মনোজ কপালী ও তার স্ত্রী শিলি রানী কপালী তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মাদকাসক্ত মনোজ কপালীর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে রাজী হন না। মা বোনকে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করেন যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। যারাই মনোজ কপালীর বিচারে যান তাদেরও গালিগালাজ করে সম্মানহানি করা হয়।
অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিভিন্ন তথ্য উপাথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছেন, মনোজ কপালী ও তার স্ত্রী শিলি রানী কপালী মৃত হরিদাস কপালীর পুরো সম্পত্তি নিজেরা দখলের পাঁয়তারা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd