সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদন : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অফার্নেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সিলেট ছিল আতংকের ও ভুতুড়ে নগরী। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি’র সংঘর্ষের আশংকায় স্তবির হয়ে পড়েছিল জনজীবন। সকাল থেকে রাস্তঘাটে তেমন যানবাহন চলাচল করে নি। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় ফাকা এবং বেশীরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্টান ছিল বন্ধ। দোকানপাট ও বিপনীকেন্দ্র খোলা থাকেলও তা’ ছিল প্রায় ক্রেতাশূন্য। অফিস আদালতে উপস্থিতিও ছিল কম।
সকালে নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান অফিসিয়ালি খোলা থাকলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি একেবারে নেই। এ কারণে এক পিরিয়ড শেষেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। তবে, অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আগে থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রুটিন মোতাবেক এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা অনুষ্টিত হয়েছে।
সকাল থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান করছিল আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। রাস্তায় রাস্তায় জোরদার ছিল পুলিশের তল্লাশি। রাস্তায় দেখা মেলেনি বিএনপি নেতাকর্মীদের। তবে এমসি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে মহড়া দিচ্ছিল। বেলা বাড়তে থাকলে জেলা ও মহানগর বিএনপির একটি বলয়ের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় সিলেটের আদালত পাড়ায়। এর বিপরিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল সিলেট জেলা পরিষদ পঙ্গনে। রায় ঘোষনার পরই বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংঘঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কোর্ট থেকে বের হতেই মূখোমূখি হয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলে পড়ে। হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা। এসময় নগরজুড়ে আতংকেতর সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে এক পুলিশসহ বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত হন। মুহূর্তেই দোকানপাট ও মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং রাস্তাঘাট জনশূণ্য হয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। দোকানপাট যানচলাচল ছিল অনেকটা বন্ধ।
রায় ঘোষনা ও সংঘর্ষের পর সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কোর্ট পয়েন্ট থেকে লাঠিমিছিল বের করেন। মিছিলটি বন্দরবাজার প্রদক্ষিণ করে নগরভবনের সামনের পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপির অভিযোগ,বৃহস্পতিবার সিলেটে বিএনপির নির্ধারিত কোনো কর্মসূচী না থাকলেও নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি অনেক নেতা আগে থেকেই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ অনেক নেতার বাসা-বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনী।
এদিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে নিরীহ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের ‘যৌথহামলা’র তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ উপরোক্ত কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন-একদলীয় শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি ভুয়া রায় দেয়া হয়েছে। এ রায় বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা গণবিরোধী রায়। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য আদালত এই রায় দিয়েছেন। রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি। বিচারের নামে চরম অবিচার করা হয়েছে। দেশনেত্রীর রায় পরবর্তী সময়ে পুলিশের সহযোগিতায় সশস্ত্র ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কোন উস্কানী ছাড়াই সিলেটে নিরস্ত্র বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে বিএনপির সিনিয়র নেতা সহ বেশকিছু ছাত্রদল নেতাকর্মী গুরুতর আহত ও গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। এই ধরনের ন্যাক্কারজন সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি।এই ধরনের নোংরামি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডমুলক রাজনীতি থেকে সরে আসার জন্য সিলেট আওয়ামীলীগের প্রতি আহ্বান জানান তারা। একই সাথে ন্যাক্কারজনক হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসী এবং পুলিশের সাথে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দানকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কতিপয় অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ও উস্কানী বন্ধ করারও আহ্বান জানান তারা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd