সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৭
নবীগঞ্জে এবার জিন্দা শাহ পীরের আবির্ভাব ঘটেছে। জিন্দা শাহ নামের এই ব্যক্তির অদ্ভুত কর্মকান্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জিন্দা শাহ গত শনিবার রাতে কবরবাসে গেছেন। সেখানে থাকবেন তিনদিন। এটিকে ‘কবর চিল্লা’ বলে দাবি করেছেন জিতু মিয়া ওরফে জিন্দা শাহ‘র স্ত্রী জাহেদা বেগম। তিন দিন কবরে থাকার পর মঙ্গলবার দুপুর ঠিক ১২ ঘটিকায় কবর থেকে উঠবেন বলেও জানালেন। আর এই জিন্দা শাহ’র এমন কর্মকান্ডকে ‘ভন্ড পীরের আবির্ভাব’ বলেও মন্তব্য এলাকার (২য় পৃষ্ঠায় দেখুন) সচেতন সমাজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা জিতু মিয়া। বয়স প্রায় ৭০ বছরের বেশি হবে। জিতু মিয়া নিজেকে জিন্দা শাহ দাবী করেন। এমনকি এলাকার লোকজন তাকে ‘জিন্দা বাবা’ নামেই ডাকেন। গত শনিবার রাত ৩ টার সময় জিন্দা শাহ নিজের ঘরের ভিতরে একটি কবর খনন করে নিজেই চলে যান কবরবাসে। কবরে তাকবেন তিন দিন। তার পরিবারের লোকজনের দাবী কবর চিল্লা থেকে উঠে তিনি মহা পবিত্র ওরসের আয়োজন করবেন।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জিতু মিয়ার কবরে যাওয়া এবারই প্রথম নয়! এর আগেও তিনি একাধিকবার কবরে অবস্থান করেছেন। এমনিক পানিতে ভেসেও রাত কাটিয়েছেন। জিন্দা বাবা গত ৪৫ বছর ধরে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন মাজারে মাজারে গিয়ে ‘সাধনা’ করেছেন। তিনি হবিগঞ্জ শহরতলীর মরহুম আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান মাহবুব রাজার ভক্ত। স্বপ্নের মাধ্যমে মাহবুব রাজার কাছ থেকে ‘চিল্লা’য় যাওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন তিনি। ‘চিল্লা’ মানে হচ্ছে কবরে প্রবেশ করা।
জিতু মিয়ার স্ত্রী জাহেদা বেগম জানান, ‘জিন্দা শাহ’ নিজের ইচ্ছায় কবরে গেছেন। যাওয়ার আগে বলে গেছেন, তিনি কবর থেকে উঠার আগ পর্যন্ত স্ত্রী জাহেদা বেগমকে কবরের পাশে ‘আসন’ বসিয়ে এবং বড় একটি ‘ডেগ’ রেখে মান্নত নজরানা সিন্নি গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে যান। এমনকি অন্য কোন লোক যেন ঘরে প্রবেশ করতে না পারে এদিকে কঠোর নজর রাখতে বলেন।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা জিতু মিয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের বছরে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার তিমিরপুর গ্রামের মনর উল্লার মেয়ে জাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরতে থাকেন। প্রায় ১ যুগ ধরে নবীগঞ্জের তিমিরপুর তার শশুর বাড়ীতে ঘর তৈরী করে বসবাস শুরু করেন। সংসার জীবনে তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা। ছেলে মেয়ে সবাই বিবাহিত। কিন্তু সংসারে তিনি থাকেন না। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন।
জিন্দা শাহর কবর চিল্লায় যাওয়ার ঘটনায় অনেকেই এটা ‘শিরিক’ গুনাহ সহ নানা মন্তব্য করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে নবীগঞ্জ থানা মসজিদের ইমাম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে নানা কূসংস্কারে জড়িত। যেমন কবর চিল্লা এটা ভন্ডামি ছাড়া কিছু নয়। এসব ভন্ডরা সাধারন মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য নানা পন্তুা অবলম্ভন করছে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ আমাদের গ্রষ্টি করেছেন তার ইবাদত বন্দেগি করার জন্য, ভন্ডামি করার জন্য নয়। কবর চিল্লা সম্পূর্ন শিরিক ও বিদাত।
কবর চিল্লা ইসলাম ধর্ম কি বলে এমন প্রশ্নের জবাবে নবীগঞ্জ ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান মাওলানা শায়খ আব্দুর রকীব হক্কানী বলেন, এগুলো মনগড়া, কুপ্রবিত্তির প্ররোচণা। এসব কর্মকান্ড ইসলামের নামে চালিয়ে যাওয়া সম্পূর্নই ভূল ও বিভ্রান্তকর। সত্যকারের আল্লাহ প্রেমিক হতে হলে কোরআন সুন্নাহের অনুশীলন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় হযরত শাহজালাল ও শাহপরান রহঃ এর ৩৬০ আউলিয়ার সফর সঙ্গীসহ সকল কামিল পীরগন ইসলামের আলোকে জীবন পরিচালনা করেছেন। তারা কোন দিন কবর চিল্লার নামে এভাবে সাধনা করেননি এবং এমন নজির ইতিহাসেও নেই।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd