বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ফসল রক্ষায় প্রাকৃতিক উপায়ে ‘পার্চিং’ পদ্ধতি ব্যবহারে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। ব্যয়বিহীন ও পরিবেশবান্ধব এ প্রদ্ধতির ব্যবহারে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে জমির ফসল রক্ষা হওয়ায়, কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি।
পার্চিংয়ের ব্যবহারে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাশাপাশি কৃষকদের সাশ্রয় হচ্ছে টাকাও।
উপজেলার দঘশর ইউনিয়নের সমের্মদান গ্রামের কৃষক লুৎফুর রহমান এ বছর ৪৭ বিঘা জমিতে রোপন করেছেন আমন ধান।
এর মধ্যে তিনি ৪৫ বিঘা জমিতে পার্চিং প্রদ্ধতি ব্যবহার করেন। বিঘা প্রতি জমিতে ৪টি করে ১শ ৮০টি বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে রাখেন। সেখানে প্রতিনিয়ত পাখিরা বসে, ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। তাই এ বছর আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি তার।
৪৫ বিঘায় এতে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আর ২ বিঘা পরখ করতে রেখেছিলেন পার্চিং ছাড়া। ওই বিঘায় আক্রমণ করেছে মাজরা পোঁকা।
তিনি জানান পোকামাকড়ের হাত থেকে ধানের গাছ রক্ষা করতে চারা রোপণের মাসখানের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যবধানে তিনি গাছের ডাল, বাঁশের কঞ্চি ও খুঁটি পুঁতে রাখেন।
ওগুলোতে বসে ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায় ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল পাখিরা। অন্যবার যেখানে তাকে তিন-চার দফা কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এ বছর মাত্র একবার তিনি কীটনাশক ব্যবহার করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলায় ১৩ হাজার ২শত ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও উপকরণ সহযোগিতায় নতুন জাতের ধান ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৯৫সহ ধান লাইনে রোপণ ও পার্চিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ বছর কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে পার্চিং বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, পার্চিং হলো পোকা দমনে একটি জৈবিক প্রদ্ধতি। পার্চিয়ের পোতানো ডাল বা বাঁশের কঞ্চিতে পাখি বসে ধানের ক্ষতিকর পোকা, যেমন মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, শীশ কাটা লেদা পোকার মা পোকা তথা মথকে খেয়ে তাদের দমন করে। ফলে সঠিক সময়ের পার্চিং করা হলে এ পোকাগুলো ধানের ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে না।