সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের চারাগাঁও বিওপি সংলগ্ন কলাগাঁও এলাকা দিয়ে কয়লা পাচারের অভিযোগে ৬ চোরাচালান চক্রের সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ সময় নৌকাভর্তি ৮ মেট্রিকটন কয়লা ও পরিবহনে ব্যবহৃত নৌকা জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) ভোররাতে টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন পাটলাই নদী পথ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে কয়লা পাচারকালে জয়পুর এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন চোরাচালান চক্রের সদস্যদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃত চোরাচালানকারীরা হলেন, তাহিরপুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মৃত জজ মিয়ার ছেলে হারুন মিয়া (১৯), তার সহোদর মামুন হোসেন (২২), একই গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে সাইদুল হক (২৪) ও উসমান মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (২৪), কলাগাঁও গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আতিকুল ইসলাম (২০) এবং রতনপুর (কামনাপাড়া) গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে মনির হোসেন (২৯)।
অপরদিকে, কলাগাঁও ট্রলার ঘাটে থাকা কিশোরগঞ্জ জেলার চামড়া ঘাটগামী যাত্রীবাহি ইঞ্জিন নৌকা থেকে ১৮ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ করে বিজিবি। শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে মাদক জব্দ করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি জোয়ানরা। চারাগাঁও বিওপি’র ক্যাম্প ইনচার্জ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল জানায়, বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) মধ্যরাতে উপজেলার কলাগাঁও গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। অভিযানকালে দুলাল মিয়ার বসতবাড়ি থেকে ৮শ’ ৩ বস্তা কয়লা জব্দ শেষে তাকে আটক করা হয়। এ সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব সরদার (৫০) নামে অপর চোরাচালানকারী পালিয়ে যায়। আটককৃত দুলাল কলাগাঁও (মাঝহাটি) গ্রামের মৃত আসমত আলীর ছেলে। পালিয়ে যাওয়া চোরাচালানকারী হাবিবুর রহমান কলাগাঁও (বাজার হাটি) গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে। চোরাচালানের মাধ্যমে কয়লা পাচারের দায়ে আটককৃত ও পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক আসামী গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তে অনুপ্রবেশ,আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে চলতি বছরের ২০ মে উপজেলার বড়ছড়া সীমান্তে জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর হুশিয়ারি দেন সুনামগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২৮ এর পরিচালক লে. কর্নেল মাহবুবুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ, তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইফতেখার হোসেন প্রমুখ।
বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২৮ এর পরিচালকের এমন বক্তব্যের পর থেকে গাঁ ডাকা দেয় চোরাচালানকারী চক্রের সদস্য ও গডফাদাররা। প্রায় মাস ধরে সীমান্তজুড়ে শুনশান নিরবতা চলে। গেল জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চারাগাঁও, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি, লালঘাট, লাকমা সীমান্ত দিয়ে কয়লা-মাদক পাচারে বেপরোয়া হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ ওই চোরাচালানকারী চক্রটি । এলাকাবাসী বলছেন, চোরাচালান চক্রের হাতে জিম্মি গোটা এলাকা। প্রশাসন আন্তরিক হলে চোরাচালানকারী ও হোতারা ধরাশায়ী হবে অচিরেই। তারা বলছেন, চোরাচালান প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের ভূমিকা ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না!’ অবস্থা হওয়ায় চোরাচালানের দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে প্রতাপশালী বেপোরোয়া ওই চক্রটি।
এদিকে, তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রæপের নদী পথে কর্মরত বৈধ কয়লা-চুনাপাথরবাহী নৌকা পাহারায় নিয়োজিত পাহারাদারদের (সেন্ট্রি) ভূমিকা নিয়েও এলাকায় রয়েছে নানা গুঞ্জন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি চোরাই নৌকা থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দায়িত্বরত পাহারাদাররা। এ ব্যাপারে জানতে শনিবার দুপুরে এক পাহারাদারকে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। অপরদিকে, কয়লাবাহী নৌকা আটক করতে প্রশাসন নৌকা কিংবা স্পিডবোর্ড নিয়ে আসার সময় চোরাচালান চক্রের কাছে খবর পৌঁছে দিতেও রাত জেগে পাহারা দেন হাওর পাড়ের গ্রামের জনৈক ব্যক্তি। এমন দায়িত্বে প্রতিরাতে ২ হাজার টাকাও নেন ওই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, গত একমাস ধরে চোরাচালান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা বিভিন্নপ্রান্তে পাচার হয়েছে।
এদিকে, গেল বছরের ন্যায় এবার নদীপথে চোরাই কয়লার নৌকা তাদের কব্জায় নিয়ে ইচ্ছেমতো চাঁদা আদায় করতে না পেরে বেকায়দায় রয়েছেন একাধিক সাংবাদিক পরিচয়ধারী চাঁদাবাজেরা। তবে, চোরাচালানের বিষয়ে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে ফুসফাঁস, তর্জন-গর্জন চালিয়ে মনের অমাবস্যা দূর করছেন অনেকেই- এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসব এলাকা দিয়ে শুক্রবার রাতে (১৫ জুলাই) নৌকাযোগে পাটলাই নদী পথে প্রায় ৩০টি কয়লা বোঝাই নৌকায় অন্তত ৫শ’ মেট্রিকটন কয়লা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এসব কয়লা পার্শ্ববর্তী নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা বাজারের জনসেবা নৌকাঘাট ও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার এলাকায় চলে গেছে। তথ্যমতে, ৩০টি নৌকা থেকে আদায় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রশাসনের ‘লাইনম্যান’ পরিচয়ধারী কলাগাঁও গ্রামের জনৈক ব্যক্তি অপরদিকে বিজিবি’র সোর্স পরিচয়ধারী দুধের আউটা গ্রামের জনৈক ব্যক্তি এসব টাকা গিলে নির্বিঘেœ চোরাচালান পরিচালনা করে আসছেন এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যও পাওয়া গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে প্রতি রাতের আধাঁরে পাচার হয় শতশত মেট্রিকটন কয়লা। চারাগাঁও বিওপি ক্যাম্প, বালিয়াঘাট বিওপি ক্যাম্প, তাহিরপুর থানা পুলিশ, একাধিক হলুদ সাংবাদিকের নাম ভাঙিয়ে এসব টাকা লুটে নিচ্ছে জনৈক ‘লাইনম্যান’- সোর্স’। ওই হলুদ সাংবাদিকদের বিকাশে অর্থ দেয়ার পর আবার স্ক্রীনশর্ট দিয়ে সংরক্ষণে রাখছেন দুর্ধর্ষ “লাইনম্যান-সোর্স”।
জানা যায়, গত বছরের এ সময়ে ১৫ মেট্রিকটন কয়লাবাহী নৌকা হতে ৩৭-৪৮ হাজার টাকা নিয়েছে জনৈক মূলহোতার আশীর্বাদপুষ্ট এসব ‘লাইনম্যান-সোর্স’। তবে, চলমান দ্রব্যমূল্যের চড়া বাজারেও বর্তমানে চাদাঁর হার কমে ২৫ হাজারে নেমে এসেছে। প্রতি নৌকায় এখন ২৫ হাজার টাকা করে নেন জনৈক দুই ‘লাইনম্যান-সোর্স’। লাইনম্যান পরিচয়ধারী ব্যক্তি কোথায় কত দেন সম্প্রতি কলাগাঁও বাজারে চোরাচালানকারীদের বৈঠকে সে সংক্রান্ত বক্তব্যের ভিডিও বার্তাও এ প্রতিবেদকের হাতে পৌছেঁছে। পলাতক চোরাচালানকারী কোন কৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মধ্যরাতে পালিয়ে যান, কয়লা পাচারে কত টাকা জনৈক ‘লাইনম্যান’কে দেয়ার পরেও কেন তার কয়লা জব্দ হয় এসব বিস্তর তথ্যের একটি অডিও রেকর্ডও সংরক্ষিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাতের প্রথম প্রহরে ঘাঁপটি মেরে থাকা ‘লাইনম্যান-সোর্স’ পরিচয়ধারী সরব হন রাত ১২টার পর। মুঠোফোনের মাধ্যমে চোরাচালানকারীদের অভয় দেখিয়ে উড়াধুড়া কয়লা-মাদক পাচারের মহোৎসব সেরে নেয় তখন। গভীর রাতে কর্তাব্যক্তিদের বিরক্তবোধের বিষয়টি ভেবে যেন উপরমহলে কেউ ফোন না দেন এ কুটচালে চোরাচালানের রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে প্রতাপশালী ও বেপোরোয়া ওই চোরাচালনকারী সক্রিয় চক্রটি!
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd