ফেঞ্চুগঞ্জে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী!

প্রকাশিত: ২:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২৩

ফেঞ্চুগঞ্জে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী!

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও বালাগঞ্জ, কুলাউড়া, রাজনগর, গোলাপগঞ্জ, মোগলাবাজার এলাকার বিভিন্ন রুগীরাও আসেন এখানে। কিন্তু নানা সমস্যা জর্জরিত হাসপাতালটি যেন নিজেই রুগী হয়ে আছে। ৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে চলছে কার্যত ৩১শয্যার জন ও যন্ত্রবল দিয়ে। এতে সেবা নিতে আসা রুগীরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। চিকিৎসা সেবা ছাড়াও রয়েছে পানি ও বৈদ্যুতিক সমস্যা। রুগী ও রুগীর সাথে থাকা স্বজনরা অধিকাংশ সময় পানি কিনে এনে খাওয়া ও অন্যান্য কাজ চালাতে হয়।

 

গরীব রুগীদের জন্য এটি একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও বৈদ্যুতিক পাখা(ফ্যান) বিভিন্ন সময় চলে না বলে অভিযোগও আছে। এ ছাড়াও পুরুষ ও মহিলা দুই ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোর অবস্থাও নাজুক। টয়লেটগুলোতে রয়েছে নোংরা,পানি স্বল্পতার সমস্যা। অন্যদিকে বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি।

 

হাসপাতালে সরকারি ৩টি থাকলেও ২টিই অকেজো ও খোলা। একটি টিউবওয়েল আছে তাও সিস্টার কোয়ার্টারের কাছে! রুগী ও তাদের স্বজনরা কেউ কেউ বিপদে পড়ে ওখানে গেলেও অধিকাংশরা পানি কিনেই চলছেন। রুগীদের অভিযোগ আছে এখানে টুকিটাকি রান্না,পানি গরম,ঝাউ বানানোর জন্য একটা গ্যাল চুলা ছিল ওটাও এখন নাই। তাই রুগীদের প্রয়োজনীয় খাবার গরম গরম করা,পানি গরম করা বা নরম খাদ্য(ঝাউ) বানানো যাচ্ছে না। ট্যাপের পানিতে এসব কাজ করা যায় না।তাই রুগীর বাড়ি থেকে এসব নিয়ে আসতে হয়।সরেজমিনে দেখা যায়,হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সামনের দিকে একটি গ্যাস সঞ্চালন পাইপ আছে শুধু। এ ছাড়াও রয়েছে, হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ছাদ ও দেয়াল ঘেঁষে বৃষ্টির পানি ঢুকে ঝুঁকি ও বিড়ম্বনা দুটি বাড়াচ্ছে।

 

হাসপাতালে অনেক দরজা জানালা ভাঙ্গা,হাসপাতালের চারপাশের ড্রেন ও দক্ষিণের দেয়াল অনেকখানি ভাঙ্গা, এ ছাড়াও হাসপাতালের কোন ডাম্পিং না থাকায় হাসপাতালের লোকজন ও রুগীদের ফেলা ময়লা আবর্জনা এক কোনায় রাখায় দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর করে তুলছে। এসব সমস্যা নিরসনের ২০টি নির্দিষ্ট সমস্যা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

 

চাহিদা তালিকায় রয়েছে- পুরুষ, মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট, বাথরুম, দরজা জানালা, স্টোরের সংস্কার, ওয়ার্ডগুলোর পুরো বৈদ্যুতিক লাইন সহ ফ্যান মেরামত, ভবনের ছাদ ও দেয়াল ঘেঁষে পানি পড়ে, পানি সরবরাহ লাইনে ঠিকমতো পানি আসতেছে না তাই জরুরী ভিত্তিতে ছাদ,দেয়াল ও পানির লাইন মেরামত প্রয়োজন,ড্রেন ও ভাঙ্গা দেয়াল মেরামত, পিট বা ডাম্পিং জোন নির্মাণ,হাসপাতালের ভিতরে নিরাপদ ও আয়রন মুক্ত পানির কোন টিউবওয়েল না থাকায় ভর্তি হওয়া রুগী ও হাসপাতালের আবাসিকে থাকা স্টাফদের পানির সংকট নিরসন জরুরী, এনসিডি কর্নার মেরামত, পুরাতন ভবনের নিচতলায় অফিস রুম সহ প্রায় সকল রুমের দরজা জানালা ভাঙ্গা।দ্রুত মেরামত প্রয়োজন, পুরাতন অফিসার্স কোয়ার্টারের ২য় তালার ডান পাশের অংশের দরজা জানালা মেঝে ইত্যাদির অবস্থা নাজুক,হাসপাতালের পুরাতন নার্স ডরমিটরির দেয়াল কিছু কিছু ভেঙ্গে পড়ছে, সেই সাথে দুইটি রুমের বৈদ্যুতিক লাইন,পানির লাইন দরজা জানালা জরুরী ভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চতুর্থ শ্রেণীর কোয়ার্টার অত্যন্ত পুরাতন। গত বিশ বছরেও এখানে কোন সংস্কার হয়নি। ছাদ ও মেঝে খসে পড়ছে এসব মেরামত প্রয়োজন।উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড:রাশেদুল হক সিলেটভিউকে জানান, আমরা যে চাহিদা পাঠিয়েছি আশাকরি শীঘ্রই এগুলো সমাধান করা হবে। অন্যদিকে প্রয়াত এমপি মাহমুদ উদ সামাদ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালে প্রায় ১০কোটি টাকা ব্যয়ের হাসপাতালটি ৫০শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেবাদান চালু করা যায় নি। এমপি।

 

মাহমুদ উদ সামাদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করায় অন্যান্য কাজ শেষ করতে পারেন নি। এখন নামমাত্র ৫০শয্যায় আটকে আছে হাসপাতালটি।৫০শয্যা ক্যাপাসিটি অনুযায়ী যন্ত্রপাতি, লোকবল না থাকায় ৫০শয্যার সুফল পাচ্ছেন না রুগীরা। এ ব্যাপারেও অনেক আগে চাহিদা পাঠানো হলেও পাওয়া যায় নি।

 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড:রাশেদুল হক বলেন কোন সমস্যা বা ঘাটতি হলে আমরাই সারিয়ে নিতে পারবো এমন এখতিয়ার নেই।তাও কয়েক দিন আগে পুরুষ ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ফ্যানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।রুগীদের কষ্ট দেখে আমার ব্যক্তিগত টাকায় লাইন ও ফ্যান সচল করিয়ে দিয়েছি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..