প্রেমের টানে সুনামগঞ্জে ভারতীয় তরুণী

প্রকাশিত: ১:২৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২৩

প্রেমের টানে সুনামগঞ্জে ভারতীয় তরুণী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। একজন বাংলাদেশের, অন্যজন ভারতের। তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। পরিচয় থেকে চুটিয়ে প্রেম। কিন্তু প্রেমের পুর্নতায় বাধা ছিল পরিবার, জাতীয়তা ও ভৌগলিক সীমানা। অবেশেষে তিন বছরের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। পরিবারকে বুঝিয়ে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে কাঁটাতারের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশি প্রেমিকের বাড়িতে এসেছেন ভারতীয় তরুণী কারিশমা শেখ (১৯)। বাঙালি প্রেমিকে সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি।

আলেচিত এই প্রেমিকযুগল হলেন, ভারতের আসাম প্রদেশের শোনিতপুর বালিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাচিম শেখের কন্যা কারিশমা শেখ ও বাঙালি প্রেমিক সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চরগাঁও গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে আশরাফুল আলম (২২)। আশরাফুল বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ভারতীয় তরুণী বাঙালি প্রেমিকের বাড়িতে এসে বিয়ে করার ঘটনা জানাজানি হওয়ায় এলাকায় হৈ-চৈ পড়েছে এবং প্রেমিক যুগলকে দেখতে আসছেন আশপাশের লোকজন।

জানা যায়, তিন বছর আগে ভারতীয় তরুণী কারিশমার সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়ে চরগাঁও গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুলের। পরিবারের অজান্তেই তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। এরপর দু’জন চুটিয়ে প্রেম করেন। প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর অন্যদেশের ছেলে হওয়ায় বাধ সাধেন কারিশমার বাবা। কিন্তু নাছোরবান্দা কারিশমা বাবাকে বুঝিয়ে রাজী করান। এরপর মেনে নেয় দু’জনের পরিবার। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সীমান্তের কাঁটাতার আর দু’জনের জাতীয়তা। অবশেষে সববাধা ডিঙ্গিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় গত ১৬ জুলাই বেনাপোল সীমান্ত হয়ে বৈধপন্থায় আশরাফুলের বাড়িতে আসেন এই তরুণী। বাংলাদেশে এসে ১৯ জুলাই সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ ঘোষণা করেন এবং ভালবাসার মানুষের সাথে ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কারিশমা শেখ। বাঙালি যুবককে বিয়ে করায় বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিত্ব চান কারিশমা শেখ।

ভারতীয় তরুনী কারিশমা শেখ জানান, তিনি ভারতের আসাম প্রদেশের ডিকেরায় হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার বাবা আব্দুল কাচিম শেখ এলাকার একটি জামে মসজিদে ইমামতি করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে কারিশমা শেখ সবার বড়। বাংলাদেশি তরুণের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও পরে মায়ের মাধ্যমে বাবাকে জানান তরুণী। বাবা প্রথমে বিষয়টি মেনে না নিলেও আশরাফুলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হওয়ায় পর সম্পর্ক মেনে নেন তিনি। পরে বাবার সাহায্যে পাসপোর্ট করে ভিসা নিয়ে ১৪ জুলাই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন কারিশমা। গোহাটি হয়ে কলকাতা যান। পরে কলকাতা থেকে বেনাপোল সীমান্তে আসতে দুই দিন সময়ে লেগেছে তার। ঝুঁকি নিয়ে একা একাই এতদূর চলে আসেন এই তরুণী।

এদিকে ঝুঁকি নিয়ে দেশ, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় এই তরুণীকে নিজের সন্তানের মতো করে গ্রহণ করেছেন আশরাফুলের পরিবার। ভারতীয় তরুণীকে জীবনসঙ্গি হিসেবে পেয়ে আশরাফুল আলমও বেশ খুশি। আজীবন এক সঙ্গে থাকতে স্ত্রী কারিশমা শেখ’কে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ এই তরুণের।

ভারতীয় তরুণী কারিশমা শেখ বলেন,‘ তিন বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়। তারপর আমাদের দুজনের ঘনিষ্টতা বেড়ে যায়। প্রথমে আমার পরিবার বিষয়টি না মানলেও আশরাফুলের পরিবারের আশ্বাসে মেনে নেয়। বাবার সহযোগিতায় তিন মাসের ভিসা নিয়ে আমি বাংলাদেশে এসেছি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়েছে। বাংলাদেশে আসার পর আশরাফুলের পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছেন এবং ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। আমি স্বামীর সাথে বাংলাদেশে থাকতে চাই। আমি বাংলাদেশের সরকারের কাছে নাগরিকত্ব দাবি করছি।’

আশরাফুল আলমের বাবা আলফাজ উদ্দিন বলেন,‘ আমারও তিন মেয়ে ছিল, তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। যেহেতু মেয়েটি তার দেশসহ সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসেছে তাই মেয়েটিকে আমরা মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমরা চাই তারা সংসার জীবনে সুখি হোক। আমার ছেলে বউয়ের নাগরিকত্বের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করব।’

দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি ভারতের এক তরুণী আমাদের কলেজের ডিগ্রি পড়–য়া এক ছাত্রের বাড়িতে চলে এসেছে এবং তিন দিন আগে তারা নাকি বিয়েও করেছে।’

বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার দুপুরে থানার এক অফিসার আমাকে জানিয়েছে ভারতের এক তরুণী নাকি চরগাঁও গ্রামে এসেছে এবং ওই গ্রামের এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। ওই তরুনী বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছে কি না এই বিষয়টির খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। ’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..