সিলেট ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বাংলাদেশের চোয়াল ঘেঁষে অবস্থান ডাউকি ফল্টের। একেবারেই সিলেট সীমান্তে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের হিমালয় পর্বতশ্রেণির ঠিক নিচে। আবহাওয়া বিজ্ঞানের পরিভাষায়, যে ফল্ট বা ভূচ্যুতি ভূমিকম্পের মূল কারণ। যার প্রভাবে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে এ অঞ্চলে। সর্বশেষ গত ১৪ই আগস্ট রাতে ৫.৫ মাত্রার ভূকম্পন হয়েছে এই চ্যুতির কারণেই। ধীরে ধীরে এটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। একইসঙ্গে বড়সড় ভূমিকম্পের আভাসও দিচ্ছে। এসব কারণে সিলেট অবস্থান করছে ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে।
বিগত কয়েক বছরে সংঘটিত ভূমিকম্পের অন্তত ২০টির উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের ভেতরে। প্রত্যেকটিই সিলেটে আঘাত হেনেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এর ১১টি হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে। বাকি ৭টি সীমান্ত এলাকাসহ আশপাশের দেশগুলোতে। এবারের ভূমিকম্পটি হয়েছে বাংলাদেশের ভূগর্ভের ডাউকি চ্যুতি নামে পরিচিত চ্যুতিরেখা বা ফাটল বরাবর। গত কয়েক বছরে এই চ্যুতিরেখায় বেশকিছু ভূমিকম্প হয়েছে। এই ফল্টের কাছে আবার ভূমিকম্প হওয়ায় ডাউকি ফল্ট নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসাম মিলিয়ে ডাউকি চ্যুতি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার বিস্তৃত। ১৮৯৭ সালে ‘ডাউকি ফল্টে’ ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ছোট গুচ্ছ ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা জাগায়। এখানেও তাই। ২০ বছরে সাড়ে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি দেশে। সোমবারের ভূমিকম্পের উৎসস্থলটি ডাউকি চ্যুতি বরাবর। সেখানে ভূমিকম্প বাড়ছে। এটা ওই এলাকায় বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের মতে, ডাউকি ফল্টের কারণে বড় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিলেট শহর। কিন্তু এই ক্ষতি কমাতে কোনো বাস্তবিক উদ্যোগ নেই আমাদের। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ২০২১ সালের মে ও জুনে পর পর ৬ দফা ভূমিকম্পের পর বড় ভূমিকম্পে ক্ষতি কমিয়ে আনতে সিলেট নগরীর সব বহুতল ভবনের ভূমিকম্প সহনীয়তা পরীক্ষা ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, সিলেটের প্রায় ৪২ হাজার ভবনের ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভবনই ভূমিকম্পের কথা চিন্তা না করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ৮০ শতাংশ বহুতল ভবন ভেঙে পড়তে পারে। আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে ইউএসজিএস’র তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে বেশি মাত্রা ছিল ২০০৩ সালের ২৬শে জুলাইয়ে সৃষ্টি হওয়া একটি ভূমিকম্পের। সেটি চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে অনুভূত হয়। মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। বাংলাদেশে গত এক বছরে ৩টি ৫ মাত্রার বেশি ক্ষমতার ভূমিকম্প হয়েছে। সোমবারেরটির বাইরে বাকি দুটি হলো- ২০২২ সালের ১৫ই আগস্ট ৫ দশমিক ১ মাত্রা এবং গত ২৩শে জানুয়ারি ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প। সবমিলিয়ে গত এক বছরে বাংলাদেশে ১৭টি ভূমিকম্প হয়েছে। বেশির ভাগের মাত্রা ছিল ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে।
তাই ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিমন্তবর্তী এলাকা হওয়ায় তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট বিভাগ। সিলেটে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে যেকোনো সময়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, সিলেটে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। কিছু ভবন তারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিতও করেছিল। তবে এগুলো শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেনি তারা। ২০২১ ও ২২ সালে কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে ২০২১ সালের মে মাসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া সিলেটের ৬টি বিপণিবিতান বন্ধ করে দিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। উল্টো কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের খুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানগুলো।
অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যে ভেঙে ফেলতে হবে তা নয়- ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙে না ফেলে রেক্টোফিটিংও করা যেতে পারে। সাপোর্টিং পাওয়ার দিয়ে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষার পর ২০২১ সালের ৩০শে মে নগরের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিসিক। তবে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল নানা কারণে তা এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। চেষ্টা চলছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd