বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সরকারি বরাদ্দের ওয়াশব্লক ও কালভার্ট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১৩ ব্যক্তি এবং একটি মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়ার পিএস দবির মিয়ার বিরুদ্ধে।
তিনি বিশ্বনাথ পৌরসভার মিয়াজানেরগাঁও গ্রামের মৃত সজিদ মিয়ার ছেলে এবং পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য ও দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। সোমবার (১৪ আগস্ট) উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের মৃত মখন মিয়ার ছেলে এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি জামাল আহমদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দবির মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ওই অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে জামাল আহমদ উল্লেখ করেন, ‘রাজনৈতিক সহকর্মী হওয়ার সুবাদে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দবির মিয়া আমাকে জানান, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়ার পক্ষ থেকে সরকারি বরাদ্দের বেশ কয়েকটি ওয়াশব্লক কিছু দরিদ্র পরিবারকে প্রদান করা হবে এবং কয়েকটি কালভার্টও নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
সে জন্যে তিনি আমাকেও কয়েকটি পরিবারের নামের তালিকা দিতে বলেন। আমি সেপ্টেম্বর মাসেই ওয়াশব্লক পাওয়ার উপযুক্ত ১২টি পরিবারের ১২জন ব্যক্তির নাম ও আমার গ্রামের নতুন জামে মসজিদের নাম এবং ৪টি পরিবারের যাতায়াতের রাস্তায় একটি কালভার্টের জন্যে ১ ব্যক্তির নামের তালিকা তাকে দিই। কিছুদিন পর দবির মিয়া আমাকে জানান, আমার দেওয়া তালিকার সবকটি নামেই কাজের অনুমোদন হয়েছে।
তাই, প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ফি দিতে হবে। তার কথা অনুযায়ী ফি-র পুরো টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ১২ ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে, ১ ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা মিলিয়ে আমি ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ করি।
ওই টাকা থেকে দবির মিয়ার সাথে ওয়াশব্লকের জায়গা পরিদর্শনে আসা ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়দানকারী জনৈক সুহেল শিকদারকে তার (দবিরের) কথা অনুযায়ী ৮ হাজার টাকা দিই। অবশিষ্ট ৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা আমি তুলে দিই দবির মিয়ার হাতে।’
জামাল আহমদ অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, ‘ওই সময়ে দবির মিয়া তার এক পাওনাদারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্যে আমাকে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে বিকাশের মাধ্যমে আমি সেই পাওনাদারকে টাকাগুলো প্রদান করি। সবমিলিয়ে দবির মিয়া আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন।
এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হতে থাকলেও ওয়াশব্লক ও কালভার্ট না পেয়ে তার সাথে বারবার যোগাযোগ করি। তিনি প্রতিবারই আশ্বাস দিতে থাকেন। একটা সময় আমি ফি-র টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যে তাকে চাপ দিলে দবির মিয়া জানান, সব টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়াকে তিনি দিয়ে দিয়েছেন।
যোগাযোগ করলে উপজেলা চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আমাকে আশ্বাস দেন। এর মধ্যে ফের দবির মিয়াকে টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার জন্যে চাপ দিলে চলতি বছরের ২৯ জুন তিনি আমাকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বিশ্বনাথ শাখার তার নামীয় একাউন্টের ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি চেক সাক্ষরসহ আমাকে দেন।
ওই চেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে নিয়ে গেলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, দবির মিয়া আমার সাথে চেক প্রদানের ক্ষেত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা রয়েছেন। কোনোভাবেই তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে দবির মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও, তার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্ত করে দেখার জন্যে বুধবার (১৬ আগস্ট) উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
দবির মিয়া তার পিএস নয় দাবি করে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়া জানান, ‘এমনিতেই সে আমার সাথে থাকতো। ওয়াশব্লক কিংবা কালভার্ট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কারো কাছ থেকে সে টাকা নিয়ে থাকলে, সেটার দায়ভার একান্ত দবির মিয়ারই। পিঠের চামড়া বাঁচাতে সে আমার নাম ব্যবহার করেছে।’
Sharing is caring!