সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার সংরক্ষিত ৬-৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর হেলেনা বেগমে খেলার বিরুদ্ধে সরকারি খাল দখল করে বসত বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
কয়েক বছর আগে হারানপুর খালের প্রবেশদ্বার দিরাই বাসস্ট্যান্ডের পাশে খাল দখল করে বসত বাড়ি নির্মাণ করেন ওই কাউন্সিলর। এরপর থেকে এখানেই বসবাস করছেন তিনি। নিজে বসবাসের পাশাপাশি ভাড়ায় খাটিয়ে অর্থ উপার্জনও করছেন তিনি। কাউন্সিলর হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে সম্প্রতি তিনি খালের উপরে তৃতীয় ঘর নির্মাণ করছেন। এছাড়া বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ সংলগ্ন খাল পাড়ের ভূমি মালিকরা মাটি ভরাট করে বসত বাড়ি দোকানকোঠা নির্মাণ করায় খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দুই পাড়ের বাসিন্দারা খাল দখল করে বসতভিটা নির্মাণ করায় প্রস্থ সংকুচিত হয়েছে। এ কারণে চামটি নদীতে বিভক্ত দিরাই পৌর এলাকার উত্তর পাশের বিশাল এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংযোগ ওই খালে হলেও সেটি এখন অচল। পলশ্রোতিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিতেই পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা ময়লা আবর্জনা খালটিকে গ্রাস করায় মশা-মাছির প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে শহর বাসিকে মুক্তি দিতে খাল অবৈধ দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
সরকারি খাল দখল করে বসত বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর হেলেনা বেগম খেলা বলেন, শুধু আমি নয় আরো অনেক মানুষ সরকারি খাল দখল করে ঘর নির্মাণ করে থাকছেন। আমিতো টিনসেট ঘর বানিয়েছি অনেকেই পাকা ঘর বানিয়েছে। নিজে থাকার ঘর ছাড়া আরো দুইটি ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো টিনের ঘর ঝড়ে যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে ভাড়া দিব কি করে। সরকার চাইলে যে কোন সময় ভেঙ্গে দিব।
জানা গেছে, দিরাই পৌরসভাধীন চান্দপুর,মজলিশপুর,দিরাই, দোওজ, দাউদপুর, রাধানগর ও সুজানগর- এ সাত মৌজায় ৩৪টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৯টি খালের। পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে হারানপুরের খাল বাসস্ট্যান্ড থেকে উৎপত্তি হয়ে চামটি নদীতে মিশেছে। পৌরশহর ঘোরে একই অবস্থা দেখা গেছে মজলিশ পুরের জলাই খালের। দুই পাড়ের বাসিন্দারা পাকা ঘরবাড়ি, দোকান, বৃক্ষরোপণ করে দখল পোক্ত করায় খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। পৌর এলাকায় চামটি নদী, নরসিং খাল, শিকারি বাড়ির খাল, কদমতলার খাল, ফুতের খাল, জুম্মা বাড়ির খাল, পূর্ব দিরাই খাল ও ভরারগাঁও খালেরও একই চিত্র। একসময় এসব খালে প্রবল স্রোত প্রবাহিত হতো। ছোট-বড় নৌকা চলাচল করতো।
পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতাকে দিরাই পৌরসভার প্রধান সমস্যা অভিহিত করে মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, সরকারি খালগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, দিরাই পৌর পরিষদ প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে অচিরেই এসব খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে।
দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী বলেন, শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত চামটি নদী দিরাই পৌরসভাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। উত্তর পাশে ছোট ছোট ২/৩টি হাওরবেষ্টিত খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। পূর্বে এ অবস্থা ছিল না। খালগুলোকে পূর্বের অবস্থায় নেয়া গেলে এ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, পাউবো, ভূমি অফিস আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এটা আমরা ডিমারগেট করে উচ্ছেদের মাধ্যমে খালটিকে তার সঠিক আয়তনে ফিরিয়ে দিয়ে পানিপ্রবাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়া পৌরসভা ঘিরে আরও বেশ কিছু খাল রয়েছে। এসব খালও কিছু জায়গায় দখল হয়েছে। এগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি। ২০২২ সালের বন্যার উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনও বলেন, বিগত বছরের বন্যায় পৌরসভার অনেকের বাড়িতেই পানি উঠে গেছে। যদি আমাদের খালগুলো ক্লিয়ার থাকতো, উঁচু বাড়িগুলোর মানুষ হয়তো অ্যাফেক্টেড হতো না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd