সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:২৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: স্বাস্থ্যসেবায় সিলেট ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য জেলার মানুষের কাছেও আস্থার প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মাত্র ১০ টাকা টিকিট দিয়ে চিকিৎসা নিতে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীরা আসেন এ হাসপাতালে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। দূর দূরান্ত থেকে এসে কেবল ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়েই রোগীদের বাড়ি ফিরতে হয় না। ব্যবস্থাপত্রের বেশিরভাগ ওষুধও মেলে বিনামূল্যে।
উন্নত চিকিৎসা, চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
সিলেট বিভাগের অসহায়, দরিদ্র ও তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। ৯০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা থাকে অন্তত ২২০০। সীমিত জনবল দিয়ে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি রোগীকে সেবা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সকল সংকট কাটিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় চিকিৎসাসেবায় দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নও হয়েছে হাসপাতালটিতে। একই সাথে বেড়েছে রাজস্ব আয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে ১০ টাকায় টিকিট কেটে প্রতিদিন ৩ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার সবচেয়ে বেশি রোগী আসেন। এ দুইদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মানুষ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। বেশিরভাগ রোগী বিনামূল্যে ওষুধও নিয়ে যান। তাছাড়া স্বল্পমূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে থাকেন।
শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেঝেতে থাকতে হয় রোগীদের। কখনও বারান্দায়ও থাকেন রোগী। রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক-নার্সদের। তারপরও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা থেকে সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন আব্দুর রব মুন্সি। সকাল সাড়ে ১১টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কিনে সার্জারি বিভাগে সেবা করেন।
বহির্বিভাগ থেকে বেরিয়ে আব্দুর রব মুন্সি বলেন, ‘ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় অনেক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছি। কিন্তু সুফল পাইনি। সর্বশেষ নিকটাত্মীয়দের পরামর্শে ওসমানী হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসক বলেছেন ১৫দিন ওষুধ খেতে। না কমলে একটি পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসার কথা বলেছেন।’
আব্দুর রব বলেন, ‘দুইটি ওষুধ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে পেয়েছি। চিকিৎসক যে পরীক্ষা করার কথা বলেছেন সেটিও এখানে কম দামে করা যাবে বলে জানিয়েছেন।’
আব্দুর রব আরও বলেন, ‘সিলেটে আসা-যাওয়ায় এক হাজারেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মাত্র ১০ টাকার টিকিটে এতো বড় চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়েছি। এটাই অনেক কিছু।’ এতো মানুষের ভিড়েও চিকিৎসক যে সেবা দিয়েছেন তাতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কালিবাড়ি এলাকার রবিউল ইসলামও এসেছেন ওসমানী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে। তিনি বলেন, আমি তিনমাস ধরে প্রতিমাসে একবার আসি নাক-কান-গলা বিভাগে চিকিৎসা নিতে। সিলেটে আসতে যেতে অনেক খরচ হয়। কিন্তু এখানে যে চিকিৎসা পাওয়া যায় তা আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ৯শ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি রোগী থাকেন দুই হাজারের বেশি। আর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন প্রায় তিন হাজার রোগী। চাহিদার তুলনায় কম জনবল নিয়েও আমাদের চলতে হচ্ছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনায় এখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুফল মিলছে।
তিনি বলেন, বহির্বিভাগে কখন চিকিৎসকরা যাচ্ছেন, কেমন রোগী অপেক্ষা করছেন, ভর্তি রোগীদের কীভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে, রাতের বেলা নিয়মিত চিকিৎসকরা ওয়ার্ড ভিজিট করছেন কী না- সবকিছু মনিটরিং করা হয়। পুরো হাসপাতাল সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেউ কোনো অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছে না।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের নজরে রাখা হয়। কেউ একটি ব্যাগ নিয়ে বের হলে ‘সন্দেহ’ হলে তাকেও নজরদারি করা হয়। মূলত মনিটরিংয়ের কারণে সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু সেবার মান বাড়েনি। বেড়েছে রাজস্ব আয়। গত বছর রাজস্ব আয় ছিল সোয়া ৮ কোটি টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি টাকার উপরে। এটাও আমাদের অর্জন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd