সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ধলাই নদীতে বারকি শ্রমিকরা পুলিশের ধরপাকড়ে যেন অসহায়। দুই-তিন জন শ্রমিক যৌথ ভাবে এক বারকি নৌকা চিপবালি সংগ্রহ করতে সময় লাগে চার-পাঁচ ঘন্টা। সংগৃহীত পাথর বিক্রি হয় ৬-৭ শত টাকায়। দিনে দুই-তিন বারকি চিপবালি সংগ্রহ করতে পারলে বিক্রি হবে ১২-১৮ শত টাকা। নৌকা ভাড়া দিতে হয় ২-৩ শত টাকা। দিন শেষে একেকজন শ্রমিক প্রায় পাঁচশত টাকা আয় হয়। এরই মধ্যে পুলিশ আতঙ্কতো রয়েছেই। পুলিশের হাতে ধরা খেলে মালামাল সহ নৌকা হাতছাড়া। কখনো উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের সামনে পড়লে নৌকা ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হয়। নৌকা ফেরত পেলে ভাগ্য ভালো। ফেরত না পেলে নৌকা মালিককে ৫-৭ হাজার জরিমানা প্রদান করতে হয়। জরিমানার টাকা উসুল করতে প্রায় কয়েক মাস চলে যায়। এভাবেই কয়েক বছর ধরে বারকি শ্রমিকদের দিন পার হচ্ছে। এ যেন পুলিশের হাতে বারকি শ্রমিকের ভাগ্য বন্দি।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক সময় ৩-৪ হাজার বারকি শ্রমিক ছিল। গত কয়েক বছর ধরে পুলিশের ধরপাকড়ে কমছে বারকি নৌকা। আশঙ্কাজনক হারে কমছে শ্রমিক সংখ্যাও। নদীতে অল্পসংখ্যক বারকি নৌকা চললেও সেখানেও চাঁদাবাজদের শকুনিদৃষ্টি। শ্রমিকরা বারকি প্রতি ৫০-১০০ টাকা চাঁদা দিয়েই চিপবালি বিক্রি করতে হবে। চাঁদা না দিলে পুলিশ ডেকে সংগৃহীত চিপবালি সহ নৌকা ধরিয়ে দেয়। নদীর চাঁদাবাজদের সাথে ভোলাগঞ্জ ফাড়ির অসাধু কয়েক পুলিশ সদস্যের গভীর সখ্যতা রয়েছে। ঘাটে চাঁদাবাজ,নদীতে পুলিশ। অনেকটা জলে কুমির,ডাঙ্গায় বাঘের সাথে বসবাস বারকি শ্রমিকদের। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়েই চাঁদাবাজদের চাঁদা দিয়ে চিপবালি সংগ্রহ করতে হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন যাবত বারকি নৌকা বন্ধ থাকায় সরকারের কড়া সমলোচনা করছে বারকি শ্রমিক পরিবার সহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজন। আর এসব ক্ষুব্ধ জনতাকে স্থানীয় এমপি ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি ও তাদের আদর্শপোষ্যরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে শ্রমিকদের বারকি বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে রাজনীতির গুটি চালছে। শ্রমিকদেরকে কাছে ভেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক বছর পাথর কোয়ারী বন্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে বারকি নৌকা বন্ধ করে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের কাধে দূষ চাপিয়ে ভোটারদের কাছে টানছেন কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি। গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত শ্রমিক অধ্যুষিত দয়ার বাজার, কালীবাড়ি, কলাবাড়ি, উত্তর রাজনগর, বালুচর, রাধানগর, সাতাল জীবনপুর,জীবনপুর, কাইলারাগ,নাজিরগাওয়ের সাধারণ ভোটারদের উল্লেখজনক হারে কাছে টানছে বিএনপি ও তার পোষ্যরা। বারকি বন্ধ হওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনের এই ভোটাররদের মধ্যে বড় রকমের পরিবর্তন আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
কালীবাড়ি গ্রামের মাসুক মিয়া জানান, আগে পাথরের ব্যবসা করতাম। এইত কয়েকদিন আগেও চিপবালি সংগ্রহ করে সংসার চালাইতাম। পুলিশ ও চাঁদাবাজের ভয়ে তাও বন্ধ।
বারকি বন্ধ হওয়ায় দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আলীম জানান, কিছুটা প্রভাব পড়বে কারণ মানুষ এক সময় পাথর কেন্দ্রিক জিবিকা নির্বাহ করত। হঠাৎ কর্মসংস্থান হারিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। শ্রমিক থেকে মধ্যবিত্ত বেশি সমস্যার মুখোমুখি। আমরা আশাবাদী আগামী নির্বাচনে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সিলেট-৪ আসনের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের নির্বাচন।যেহেতু আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমেদের নেতৃত্বেই আগামীতে আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির সিনিয়র এক নেতা প্রতিবেদককে জানান, এই সরকার চায় পাথর উত্তোলন কিংবা বারকি চলাচল বন্ধ থাকুক। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবার পাথর কোয়ারী খুলবে। শ্রমিকরা বারকি নৌকা চালাতে পারবে।
বারকি বন্ধের ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের বড় কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামিম আহমদ শামিম প্রতিবেদককে জানান, বারকি এ অঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নের সূতিকাগার। নদীতে যতদিন বারকি চলতো ততদিন পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতো না। কোয়ারী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে মানুষ আবারও বারকি নৌকার যুগে প্রবেশ করেছে। বারকি দিয়ে শত বছর পাথর চিপ সংগ্রহ করলে পরিবেশের ক্ষতি হবেনা। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো বারকি নৌকা শ্রমিকদের উপর যেন ধরপাকর না চালায়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd