দুই অভিনেত্রীর মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন সিলেটের মিহির

প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৩

দুই অভিনেত্রীর মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন সিলেটের মিহির

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ‘অস্বাভাবিকভাবে’ মারা গেলেন দুই অভিনেত্রী। একজন ২০১৮ সালে, আরেকজনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে গত ২ নভেম্বর। এই দুজনেরই মৃত্যুর আগে তাদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ট’ ছিলেন এক যুবক। তার নাম মিহির, বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। তাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ঘোর রহস্য ও নানা প্রশ্ন। খবর প্রথম আলো’র।

২০১৮ সালের ২২ মে মারা যান অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। প্রথম জানা যায়, তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে অভিনয় শিল্পী সংঘ জানতে পারে ঘটনাটি সাদামাটা ছিল না। কারণ, তাজিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে রেখে কেউ একজন পালিয়ে যায়। জানা যায়, তাজিনের সঙ্গে সেদিন তাঁর এক বন্ধু ও একজন রূপসজ্জাকারী ছিলেন। এই রূপসজ্জাকারীর নাম মিহির। এই মিহিরের নাম এবারও একইভাবে আলোচনায়। তিনি অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর বাসায় ছিলেন তার মৃত্যুর আগে।

অভিনয় শিল্পী সংঘের একটি সূত্র জানায়, এই মিহির কেন বার বার কাজ থেকে দূরে থাকা অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন? যার উত্তর মিলছে না।

অভিনয় শিল্পী সংঘের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রূপসজ্জাকারী মিহির দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় কাজ করেন। তাঁর বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। ব্যক্তিগত কিছু কারণে তাঁকে এড়িয়ে চলতেন শিল্পী–কলাকুশলীরা। পরবর্তী সময়ে কাজ কমায় সে হতাশ হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে কাজ কম থাকলেও শুটিংয়ে পরিচয় হওয়া বিভিন্ন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ান। এভাবেই তাঁর সঙ্গে করোনার আগে অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলেন, ‘মিহির অনেক আগে নিয়মিত কাজ করত। কিছু সমস্যার কারণে তাকে কাজে তেমন ডাকা হতো না। কোনো অভিনয়শিল্পী প্রস্তাব করলে হয়তো তার ডাক পড়ত। মিহিরের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, অল্প সময়ে সে সবার সঙ্গে মিশতে পারত। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে যেত। একবার ভালো সম্পর্ক হলেই যেকোনো প্রয়োজনে যে কেউ সহজেই তাকে পেত। এই কারণে একসময় সে সম্পর্ক গড়ে তোলা অভিনয়শিল্পীদের বাসাতেই থাকা শুরু করে। ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পাশে থাকত। এমনটাই জানতে পেরেছি।’

অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অনেকটাই একাকী জীবন যাপন করতেন। তাঁর বাবা মারা গিয়েছিলেন। পরে মায়ের কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হন। এই অভিনেত্রী সেই সময় কাছের কয়েকজনকে ঋণ নিতে সহযোগিতা করেন। পরে সেসব মানুষের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক হলে তিনি নিজেই ঝামেলায় জড়িয়ে যান। কাজ থেকেও তিনি দূরে ছিলেন। একাকী এই সময়ে মিহিরের সঙ্গে তাজিনের বন্ধুত্ব হয়। অর্থনৈতিক লেনদেন থেকেই এই সম্পর্ক। পরিবারের একজনের মতো ছিলেন এই মিহির। সম্প্রতি হোমায়রা হিমু মারা যাওয়ার পর আবার মিহিরের নাম এলে বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী চিন্তিত হন।

অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘হোমায়রা হিমু কিছুদিন কাজ করেননি। কিছুটা বিরতির পর সম্প্রতি সে দু–তিনটা ধারাবাহিকে নাম লিখিয়েছিল। এই বছরের শুরুর দিকে আমাদের শিল্পীদের বড় আয়োজন ছিল। সেখানে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ ছিল। এমন না যে তার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল বা কাজ পাচ্ছিল না। অনেকেই বলছেন, কেউ মারা গেলেই তাকে সবাই স্মরণ করেন, বিষয়টা এমন না। কেউ দূরে থাকলে অন্যদের কী করার আছে?’

হোমায়রা হিমুর বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। তাঁর মা–বাবা কেউ বেঁচে নেই। এসব নিয়ে মাঝে মধ্যে তাঁর মধ্যে একাকিত্ব পেয়ে বসত বলে জানান তাঁর সহকর্মীরা। এ জন্য অনেকটা নিজের মতো করেই চলতে পছন্দ করতেন। অনলাইনে তাঁর সক্রিয় থাকা কথা জানা গেছে।

কেউ না থাকায় মৃত্যুর পরে তাঁর সব দায়িত্ব পালন করেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘ। তখন তারা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করেই পাশে ছিল। কিন্তু এবার মনে সন্দেহ জাগায়।

নাসিম আরও বলেন, ‘এর আগেও একইভাবে তাজিনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একজন পালিয়ে যায়। এবারও হিমুকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একজন পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, তার বাসায় সেই মিহিরই ছিল। এই নিয়ে ঘটনা কী, কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, সেটা পোস্টমর্টেম হওয়ার পরেই জানা যাবে।’

অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে অভিনেত্রী দীপা খন্দকার বলেন, ‘তাজিনের বাসায় ছিল মিহির। সে মারা যাওয়ার পরে হোমায়রা হিমুর বাসাতেও সে থাকত। দুজনের মৃত্যু হলো। এটা অবশ্যই মনে একটা প্রশ্ন তৈরি করে। তাজিন ও হিমুর বাসায় তাদের মৃত্যুর আগে মিহিরের থাকাটা সন্দেহজনক, স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।’

অভিনেতা রওনক হাসান বলেন, ‘এই আত্মহত্যার ঘটনাটা আমাদের কাছে একটু ধোঁয়াশা তৈরি করছে। এ ছাড়া হিমুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এখন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া কিছুই বলা যাবে না।’

জানা যায়, মিহির তাজিনের আগে অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..