সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০২৪
সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা, গোয়াইনঘাট :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে দুই থেকে তিন ফুট গাছের প্রতিটি ডালের শাখায় রক্তিম লাল লম্বাটে ও গোল আকৃতির শত শত নাগা মরিচ গাছে ঝুলছে, দোল খাচ্ছে বাতাসে। এ অঞ্চলের ভোজন রসিক বাঙ্গালীর খাবারের থালায় নাগা মরিচ না হলে খাবারের মজাই পাওয়া যায় না। মুখের রুচি বাড়াতে ও রান্নার তরকারির স্বাদ অতুলনীয় করতে এক সময় এই অঞ্চলের বাড়ির আঙ্গিনা বা ছাদে চাষ করা হতো নাগা মরিচের গাছ।
সেই নাগা মরিচ এখন বাড়ির আঙ্গিনার চৌকাট পেরিয়ে অনুর্বর জমিকে উর্বর করে উপজেলার পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক হারে বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচের চাষ হচ্ছে। ইউনিয়নের নয়াখেল, খাসহাওর, সোনাপুরএলাকায় নাগা মরিচ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকেরা। ইউনিয়নের সিংহভাগ অনাবাদি জমিতে এখন লাল সবুজের মিলন মেলা।দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। নাগা মরিচ ও তরমুজ চাষ করে সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর একটি ইউনিয়নে পরিণত হয়েছে পূর্ব আলীরগাঁও।
জানা যায় নাগা মরিচ ও তরমুজ চাষ করে ভিটে মাটি বিক্রি না করে বিশাল অংকের মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে অনেকে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অনাবাদী প্রতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে। অনেকে আবার বিদেশ থেকে এসেই একক ও যৌথভাবে কৃষি কাজে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদে মনোনিবেশ করছেন।
তেমনি একজন কৃষক আব্দুল মতিন আট বিঘা জমির বিশাল এলাকা জুড়ে করেছেন নাগা মরিচের চাষ। সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে ৩ মাসের পরিশ্রমে সাত থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তার মূলধন উঠে গেছে। বর্তমানে লাভে আছেন। সামনে দুই মাস রয়েছে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাভ হবে।মধ্যখানে মরিচ রোগ বালাইয়ের আক্রমণে পড়ায় লাভের সংখ্যাটা কম এসেছে ,নতুবা ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাভ হতো। তার পাশাপাশি আরো অনেক কৃষক করেছেন নাগা মরিচের চাষ। তাদের উৎপাদিত নাগা মরিচ স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সিলেট সদর হাট-বাজার হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়।
প্রবাসে থাকা লোকেরাও তাদের রসনার স্বাদ মিটাতে খাবারের পর তৃপ্তির ডেকুর তুলতে দেশ থেকে নিচ্ছেন নাগা মরিচ। গোয়াইনঘাটের আলীরগাঁও ইউনিয়নের খাস হাওর সোনাপুর ও নয়াখেল গ্রামটি যেন নাগা মরিচের অপার ভাণ্ডার। এমনকি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগমনে ও পদচারণায় মুখরিত পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়ন।
পরিদর্শনে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নাজিয়া শিরিন বলেন, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির আওতায় সকল অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকার কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় এনে এবং উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদন করে কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী ফসল নাগা মরিচ।দেশে বিদেশে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও চাহিদা রয়েছে এবং এটা দুষ্প্রাপ্য একটি অর্থকরী ফসল।এরকম প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন করে কোন কৃষক নাগা মরিচ চাষে উদ্বুদ্ধ হলে তাকে কৃষি অফিস থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। No description available.
কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ৫-৬ বছর আগেও কেউ কেউ শখের বশে নাগা মরিচের চাষ করতেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ির আঙিনায় শোভা পেত নাগা মরিচের গাছ। ছিল না লাভের আশা বা বাণিজ্যিক চিন্তা। পাঁচ বছরের মাথায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। বাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে ফসলি জমিতে এখন চাষ হচ্ছে নাগা মরিচ। বাণিজ্যিক ভাবে নাগা মরিচ চাষ করে সফল হওয়ায় কৃষকের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন,উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমার ইউনিয়নের কৃষকরা নাগা মরিচ চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, যুবকরা কৃষিতে এগিয়ে আসছে। আগামীতে পূর্ব আলীরগাঁও একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর ইউনিয়নে পরিণত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন,পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়ন কৃষিতে সমৃদ্ধ। উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে রয়েছে। নাগা মরিচ ও তরমুজ চাষ করে এই ইউনিয়নের কৃষকরা সফলতা পেয়েছেন।প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের নাগা মরিচ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং আগামী বছর কৃষকদের জন্য আরো বেশ কিছু পরদর্শনী বৃদ্ধি করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd