সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২৪
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যহার করে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে।
আজ রবিবার (১৮ এপ্রিল) হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদন করেন। এ সময় তিনি বেনজীরকে নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেন।
আবেদনে বেনজির আহমেদের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘বেনজিরের বিরুদ্ধে যে রিপোর্ট আসছে প্রায় হাজার কোটি টাকার, তার দুর্নীতির ব্যপারে যে অভিযোগ আসছে পত্রিকায়, হেডলাইন হয়েছে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ইনকোয়্যারির (অনুসন্ধান) ব্যবস্থা না দেখে দুদকে এসে নাগরিক হিসেবে আবেদন করে বলেছি, এর (অভিযোগের) ইনকোয়্যারি করা দরকার। কারণ সাবেক আইজিপি মহোদয়ের যদি এত সম্পদ থাকে তবে বাংলাদেশের পুলিশ ফোর্সের মধ্যে যারা সৎ অফিসার আছেন তারা খুব বেশি ফ্রাসট্রেটেড (হতাশাগ্রস্ত) হবেন এবং দেশে যারা কিছু সৎ আছেন তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আর যারা অসৎ আছেন, তারা মোটামুটি প্রতিযোগিতায় নামবেন। যদি অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে তাহলে তারা বলবেন আমরা সবাই বেনজীর হইতে চাই। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশের জন্য এটা একটা ভয়ানক বিষয়!’
দুদক পদক্ষেপ না নিলে কি করবেন জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘পরিষ্কার, হাইকোর্টে যাব।’
সুমনের আবেদনের পর সুপ্রিম কোর্টে দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জানতে পেরেছি প্রাক্তন আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে যে খবর ছাপা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন দুদকে একটি দরখাস্ত দাখিল করেছেন। তার এই দরখাস্তের প্রেক্ষিতে দুদক তার আইন ও বিধি অনুসারে যাচাই-বাছাই করবে। কমিশন যদি মনে করে এটি দুদকের আওতার মধ্যে পড়ে তাহলে দুদক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে।’
এক প্রশ্নে এ আইনজীবী বলেন, ‘এখানে ব্যক্তি মূখ্য নয়। কে কি সেটি এখানে ইস্যু নয়। দুদক দেখে যে অভিযোগটি তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না। কমিশন দেখবে তথ্যে সত্যতা কতটুকু। এখানে অনেকগুলো ধাপ আছে। উনি (সায়েদুল হক সুমন) আজকে যে দরখাস্ত দিয়েছেন তা যাচাই বাছাই কমিটিতে যাবে। কমিটি সেটি দেখে সিদ্ধান্ত দিবে। এরপর কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে কমিশন যদি মনে করে অনুসন্ধান করা উচিত, তারা সেটি করবে।’
আবেদনে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম আইজি ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু চাকরিতে থাকাকালে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের নামে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে, যে সম্পদগুলো তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি দুই পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায় গত ৩১ মার্চ। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদের খোঁজ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি। উঠে এসেছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রামে বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় গড়ে তোলা অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র সাভানা ইকো রিসোর্টের খোঁজও।
শুধু এই এক ইকো রিসোর্টই নয়, পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কালের কণ্ঠ।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের দুই দিনের মাথায় আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ২ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত ভাওয়াল রিসোর্ট। ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রায় ১০৬ বিঘা জমির ওপর এটির যাত্রা শুরু। পরে এতে যোগ হয় আরো ৫৪ বিঘা জমি। ৬২টি ভিলার সঙ্গে হেলিপ্যাড, রেস্তোরাঁ, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল, স্পাসহ অনেক কিছু রয়েছে এর ভেতরে।’
এই রিসোর্টের একটি বড় অংশই গড়ে তোলা হয়েছে বনের জমি জবরদখল করে। এতে নেপথ্যে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদ এই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিক। আর বনের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে তোলার সময় বেনজীর আহমেদ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার।
পর পর এ দুই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয় প্রতিবেদন দুটি। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনও ছাপে। প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি যুক্ত করে দুদকে আবেদন করেন সংসদ সদস্য সুমন।
প্রতিবেদনের তথ্যের বরাত দিয়ে সুমনের আবেদনে বলা হয়েছে, ‘বেনজীর আহমেদের বৈধ আয়ের চেয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে বেনজীর আহমেদ চাকরিতে থাকাকালে পদ-পদবী, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। ফলে বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী সন্তানদের সম্পদের তদন্তে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd