অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাসায় ‘বুয়া’র কাজ করেন নারী কনস্টেবলরা

প্রকাশিত: ৮:১৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২৪

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাসায় ‘বুয়া’র কাজ করেন নারী কনস্টেবলরা

শাকিলা ববি :: সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহফুজা আক্তার শিমুল। নিয়ম অনুযায়ী তার সঙ্গে একজন গানম্যান ও একজন গাড়িচালক থাকার কথা থাকলেও তিনি পারিবারিক কাজের জন্য চার থেকে পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবলকে ব্যবহার করেন।

জানা যায়, প্রতিদিন একজন নারী কনস্টেবলকে তার বাসায় ‘বুয়া’র কাজ করতে হয়। তার মাথায় তেল লাগিয়ে দেওয়ার জন্যও আরেকজন নারী কনস্টেবলকে প্রতিদিন তার বাসায় যেতে হয়। তার ছেলেকে সব সময় দেখাশোনা করা ও তার হাতে মেহেদি পরানোর জন্য তিনি আলাদা নারী কনস্টেবলদের বাসায় ডিউটি করান।

সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিলেটের মাঠপর্যায়ে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর সাধারণ পুলিশ সদস্যরা তাদের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।

খবরের কাগজের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সিলেটে ডিআইজির বাসায় মুরগি পাহারা দিতে হতো তিন পুলিশকে! এই শিরোনামে খবরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর এই পুলিশ কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়মবহির্ভূত কাজের তথ্য এই প্রতিবেদককে জানান সিলেটের ভুক্তভোগী সাধারণ পুলিশ সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নারী কনস্টেবল খবরের কাগজকে বলেন, ‘‘আমাদের ‘আলফা টু’ (মাহফুজা আক্তার শিমুল) স্যারের প্রতিদিন ছয় থেকে সাতজন কনস্টেবল লাগে। তার বাসায় কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে ইস্ত্রি করা, মেহেদি ও শাড়ি পরাতেও আলাদা নারী কনস্টেবল ব্যারাক থেকে নেন। মোট কথা, বাসায় একজন বুয়ার যেসব কাজ করে সেসব কাজ তিনি নারী কনস্টেবলদের দিয়ে করান। আমরা নারী কনস্টেবলরা নিজেদের নামেই বক্তব্য দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা নাম প্রকাশ করছি না আমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য। আমাদের পরিবারের সদস্যরা যদি জানতে পারে পুলিশের চাকরি করতে এসে এখানে বুয়ার কাজ করতে হয় তা হলে তারা কষ্ট পাবেন। আমার দেশের সেবা করার জন্য পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম। বাসার বুয়ার কাজই যদি করতে হয় এই বাহিনীতে যোগ দিয়ে কী লাভ হলো আমাদের!’’

ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহফুজা আক্তার শিমুলের টাকার বিনিময়ে পোস্টিং ও ছুটি বাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। কোর্ট, ডিবি, ডিএসবি, থানা, ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্যদের পোস্টিং নিতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং ছুটির জন্য পাঁচ শ, এক হাজার থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয় তাকে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার শিমুলের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা ভুক্তভোগীদের একজন সিলেট জেলা পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল কাইনাতুল ইসলাম।

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিদিন একজন নারী কনস্টেবল শুধু ওনার মাথায় তেল দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয়। ওনার বাসায় নিয়মিত আরেকজন নারী পুলিশ সদস্য ঘরে থালা-বাসন ধোয়াসহ (গৃহকর্মী) সব ধরনের কাজ করেন। ওনার ছেলেকে সব সময় দেখাশোনা করেন আরেকজন। বাসার কাজের মধ্যে ভুল হলে এই নারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন এবং গালাগালি করেন।

ড্রাইভার, গানম্যান থাকা সত্যেও ওনার বাসায় একজন পুরুষ কনস্টেবল নিয়মিত কাজ করেন। দিনের বেলায় তিনজন নারী কনস্টেবল এবং রাতের বেলার দুইজন পুরুষ কনস্টেবল ওনার বাসায় অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য রাখেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী উনি বডিগার্ড এবং ড্রাইভার ছাড়া আর কোনো সদস্য পাওয়ার কথা নয়।’

টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না উল্লেখ করে কনস্টেবল কাইনাতুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য ছুটির জন্য আবেদন দিলে তা বাতিল করে দেন তিনি। অযথা হয়রানি করেন। লম্বা সময়ের ছুটির আবেদন দিলে ওনার কাছে পুটআপে যেতে হয়। তখন বিভিন্ন ইঙ্গিতে টাকার কথা বলেন। আমি নিজে গত মে, জুন, জুলাই মাসে ছুটির জন্য দুবার আবেদন দিয়ে ছুটি করাইতে পারি নাই। ছুটির দরখাস্ত বাতিল হয়ে আসে। বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই ছুটির আবেদন দিয়েছিলাম। ছুটি না হওয়ায় বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি। বাবা এখন বাড়িতে আছেন।’

তার পোস্টিং বাণিজ্যের ব্যাপারে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেহেতু তিনি প্রশাসন ও অর্থের দায়িত্বে আছেন, তাই সব ধরনের পোস্টিং, ছুটি তার মাধ্যমে হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি এই পোস্টিং বাণিজ্য করেন।

অন্য জেলা থেকে কোনো পুলিশ সদস্য নতুনভাবে সিলেট জেলায় এলে থানা, ডিবি, ডিএসবি, কোর্ট, বডিগার্ড, এসপির বাসার অডার্লি বা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দিতে ঘুষ দিতে হয়। বিশেষ করে কোর্ট, ডিবি, ডিএসবি, থানা ফাঁড়িতে যেতে চাইলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ছাড়া পোস্টিং দেন না তিনি।’

টাকার বিনিময় পোস্টিং বাণিজ্য এবং তার বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়মবহির্ভূত কাজের জন্য মে মাসে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার লিখিত কৈফিয়ত চান। এই কৈফিয়তের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহফুজা আক্তার শিমুল তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা ও গুজব বলে দাবি করে তার অফিসে কর্মরত কনস্টেবল ও সিভিল স্টাফদের ওপর দোষ চাপান।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহফুজা আক্তার শিমুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..