হত্যাকান্ডের ১ মাস ৫ দিন পার : সাংবাদিক তুরাবের খুনী এখনো অধরা

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২৪

হত্যাকান্ডের ১ মাস ৫ দিন পার : সাংবাদিক তুরাবের খুনী এখনো অধরা

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: পুলিশের গুলীতে নির্মমভাবে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়েরের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অধরা রয়ে গেছেন খুনীরা। আসামীদের কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে আর কয়েকজন আত্মগোপনে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। খুনীদের গ্রেফতারে পুলিশের ভুমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ক্ষোভ জানিয়েছেন তুরাবের পরিবার।

জানা গেছে, দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এটিএম তুরাব হত্যার ঘটনায় গত সোমবার (১৯ আগস্ট) সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন তার বড় ভাই আবুল হাসান মো: আজরফ (জাবুর)। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এমএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো: সাদেক দস্তগীর কাউছার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় আরো ২০০/২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।

মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন, কতোয়ালী মডেল থানার সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, কতোয়ালী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) ফজলুর রহমান, এসআই কাজী রিপন আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি আপ্তাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি পীযুষ কান্তি দে, সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, শিবলু আহমদ, সেলিম মিয়া, আজহার, ফিরোজ ও উজ্জ্বল।

এর আগে আবুল হাসান মো: আজরফ (জাবুর) তার ভাই হত্যার ঘটনায় কতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এটিকে জিডি হিসেবে গ্রহন করে। আদালতে মামলা দায়ের করে আবুল হাসান মো: আজরফ (জাবুর) বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনি আদালতের স্বরানাপন্ন হয়েছেন।

তবে মামলা এফআইআর হওয়ার পরও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ভাই হত্যার ১ মাসেরও বেশী সময় পার হয়েছে। মামলা এফআইআর হওয়ার পর আরো ১ সপ্তাহ চলে যাচ্ছে এরপরও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় আমরা বিস্মিত। এর মাধ্যমে পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে ত সব পুলিশ জড়িত নয়। তাহলে আসামীদের গ্রেফতার করা হচ্ছেনা কেন।

জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাপক সমালোচিত এসএমপির উপ পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)-কে সিলেট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। তুরাব হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার না করে বদলী হওয়ায় বিচার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো: সাদেক দস্তগীর কাউছারসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী জকিগঞ্জ বর্ডার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাদেরকে একজন বিতর্কিত সাবেক এমপি বর্ডার পার হতে সহযোগিতা করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার মাদ্রাসার ইয়াতিম খানায় তাদেরকে কয়েকদিন রাখা হয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানা ধর্মীয় স্পর্শকাতর স্থান হওয়ায় অনেকেই সমালোচনা করলেও ঐস্থানে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আওয়ামী সমর্থপুষ্ট বিতর্কিত ঐ আলেম এমপি তাদেরকে বর্ডার পার করে দেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাওন মাহমুদ বলেন, আসামী গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এসএমপির কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নুনু মিয়া শনিবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এখন পর্যন্ত তুরাব হত্যা মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এসএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি) তাহিয়াত আহমদ চৌধুরী বলেন, আমি ছুটিতে আছি তাই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারছিনা। তবে অপরাধীদের গ্রেফতারে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এসএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) বিএম আশরাফুল্যা তাহের দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখনো কোন আসামী গ্রেফতার হয় নাই। সংশ্লিষ্ট থানাকে এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে।

উল্লেখ্য-গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তুরাব। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান। তাঁর শরীরে ৯৮টি স্প্রিন্টার পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন ওসমানী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শামসুল ইসলাম।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..