নগরীর লালদীঘিপাড়ের মাঠে বরাদ্দের ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার হদিস নেই

প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৪

নগরীর লালদীঘিপাড়ের মাঠে বরাদ্দের ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার হদিস নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীর যানজট নিরসন ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এ অভিযান পরিচালিত হবে। সিসিকের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সদ্য পদচ্যুত মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী লালদীঘিপাড়ের মাঠে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে মাটি ভরাট থেকে শুরু করে সবই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করার কথা থাকলেও কিছুই হয়নি। নামে মাত্র একটি টয়লেট হয়েছে। কোন হদিস পাওয়া যায়নি ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার। এছাড়া মাটি ভরাট করার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। পরে মেয়রের আর্শীবাদপুষ্ট হকার্সলীগ নেতা রকিব আলী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন মাঠের টুকটাক উন্নয়ন করান। সেই কাজ করানো থেকেই লালদীঘিপাড়ের মাঠে গড়ে উঠেছে রকিব আলী ও তার বাহিনীর ত্রাসের রাজত্ব। শুরু হয় রকিব আলীর চাঁদাবাজি ও দোকান কোটা বিক্রির হিড়িক। রকিব আলীর কাছ থেকে মাঠে বরাদ্দের দোকান ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, লালদীঘিপাড়ের মাঠে রকিব আলী ও রুমনসহ একটি চক্র দোকান কোটা বিক্রি করে নিরীহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেন ও মেয়রের কাছ লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন সিলেট মহানগর হকার্স ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা। কিন্তু মেয়র নিজেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খোকন ইসলামসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ওই সময় মেয়র বলেন এসকল অভিযোগ না দিয়ে সবাই মিলেমিশে খাও। এখানে অভিযোগের কি প্রয়োজন। এরপর সিলেট মহানগর হকার্স ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা ক্ষীপ্ত হয়ে পরের দিন মাঠে আন্দোলন শুরু করেন। পরে মেয়রের নির্দেশে জেলা ও মহানগরের যুবলীগের লোকজন রকিব আলীর পক্ষ নিয়ে নিরীহ হকার্সদের উপর হামলা চালায়। পরে আহত হকাররা থানায় মামলা দিতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে তাদেরকে থানা থেকে বের করে দেন।

পরবর্তীতে থেমে যায় রকিব আলীর বিরুদ্ধে আন্দোলন। বেপরোয়া হয়ে উঠেন রকিব আলী। শুরু করেন মাঠে গরুর মাংস বিক্রি করা। মাঠের মধ্যে তৈরী করেন গরুর খামার। সর্বশেষ মানুষকে মৃত গরুর মাংস খাইয়েছেন। বিষয়টি মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পরও মেয়র রকিব আলীর বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বিধায় কেউ সাহস করে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেনি।

সিলেট মহানগর হকার্স ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে পরিচিত হয় রকিব। এরপর হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন মেয়র। সেই সুবাদে হকার ব্যবসায়ীরা একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সভাপতি দেওয়া হয় রকিব আলীকে। তারই নেতৃত্বে শুরু হয় হকার পুনর্বাসনের কার্যক্রম। সেই কার্যক্রমকে পুঁজি করে রকিব তার আশীর্বাদপুষ্টদের নিয়ে মাঠে দোকান কোঠা দখল করা শুরু করে। একেক জনের নামে ৫-৬টি দোকান বরাদ্দ করেন। শুরু করেন মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বিক্রি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদও করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ কাজে আসেনি। রকিব আলী মাটি ভরাটের নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এমনকি ৩শ’ ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান কোটা বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৮৩ লাখ টাকা। বর্তমানে এই দোকানীরা তাদের টাকা ফেরত পেতে রকিব আলীকে অন্য হয়ে খোঁজছেন। ইতিমধ্যে রকিব আলী ও তার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছেন ভোক্তভোগী হকার্স ব্যবসায়ীরা।

১৭ আগষ্ট সিলেট মহানগর হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের জরুরি সভায় সংগঠনের সভাপতি পদ থেকে রকিব আলীকে বহিস্কার করা হয়েছে। পরিষদের দপ্তর সম্পাদক জামাল তারেক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিলেট মহানগর হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকন ইসলাম বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি রকিব আলী নিরীহ হকারদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সে তার চক্রের সদস্য রুমন, সুমন, ছাদেকুল, অর্জুন মজুমদার, লিটন, মানিকুল ইসলাম, কিবরিয়া সহ একটি চাঁদাবাজ চক্রকে নিয়ে মাঠের পূর্ণবাসনর্কৃত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার অপরাধে তাদের সকলকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ভূক্তভোগী হকারদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমরা সংগঠনের স্বার্থে তাকে বহিস্কার করছি। তার চাঁদাবাজির দায় সংগঠন নিবে না। রকিব আলী ও তার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছেন ভোক্তভোগী হকার্স ব্যবসায়ীরা।

সিলেট মহানগর হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের সদ্যসাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জান মিথ্যা আশ^াস দিয়ে মাঠে আমাদের পূর্ণবাসন করেন। তিনি বলেছিলেন ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে মাটি ভরাট থেকে শুরু করে সবই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করা হবে। কিন্তু তা না করে উল্টো উনার কাছের লোক রবিক আলীর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে মাঠের টুকটাক কাজ করানো হয়। রবিক আলীকে দেওয়া ফুল পাওয়ার। সেই পাওয়ারেই সে মাঠে ব্যবাসায়ীদের নির্যাতন করে চাঁদা আদায় করতো। এমনকি আমাদের নিরীহ হকারদের মাঠ থেকে বের করে দিয়ে বর্হিরাগত ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বিক্রি করে রকিব আলী ও তার দুই চাঁদপুরী ভাগিনা রুমন-সুমন।

সিটি কর্পোরেশন জনসংযোগ শাখা সূত্রে জানা যায়- সড়ক ও ফুটপাতসমূহ দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এতে নগরজুড়ে চরম দুর্ভোগ ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত কয়েক দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। জনসাধারণের চলাচল ও যানজট নিরসনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আবু আহমদ ছিদ্দীকী, এনডিসির নেতৃত্বে, কাউন্সিলরবৃন্দ, ছাত্র-জনতা ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগামীকাল রবিবার সকাল ১১টায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। উল্লেখ্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অভিযানে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..